আহমেদ হোসাইন ছানু:
খুলনা আর্ট একাডেমি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করে ২০১০ সাল থেকে চারুকলা ভর্তি কোচিং
পরিচালনা করে ২০২৫ সালে এসে ১৫ তম ব্যাচ এর ক্লাস পরিচালনা করছেন চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস।
এই প্রতিষ্ঠানের চারুকলার শিক্ষার্থীকে ভর্তি হতে এসে পাঁচটি ফরম পূরণ করতে হয়। প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন সময় কিছু নিয়ম-কানুন শিক্ষার্থীকে মেনে চলতে হয় সেই অনুযায়ী তার এখানের কোর্সের সময়সীমা অতিবাহিত করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় এ বছর ক্লাস টাইম সকাল ৯ টা থেকে বারোটা পর্যন্ত ।যথা সময় না আসলে পানিশমেন্ট স্বরূপ শিক্ষার্থী যেহেতু এইচএসসি পাশ করে এসেছে তাই তাকে মারধর বকা এগুলো দেওয়াটা একজন শিল্পীর দৃষ্টি থেকে আসে না। তাই শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য শিল্পী ব্যতিক্রম ভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘ বছর ধরে। এতে শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত শিক্ষা পেয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থীরা। যারা পূর্বে এরকম ভুল করেছে তাদেরও বিভিন্ন ধরনের শাসনের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন। এ ব্যাপারে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের চিন্তাভাবনা আমি যদি সবার মত হই তবে আমার পার্থক্যটা থাকলো কই। শিক্ষার্থীরা দেরি করে আসলে তাদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরি এতে শিক্ষার্থীরা সংশোধন হওয়ার চেষ্টা করে পুনরায় আর ভুল না করার জন্য। তেমনি আজ শামীম ওসমান সকাল নয়টার ক্লাস এগারোটার সময় আসার জন্য তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হলো। এখানের কোন নিয়ম ভঙ্গ করলে সেই শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পরিসমাপ্তি ঘটে ।এই প্রতিষ্ঠানে পূর্বে এ ধরনের বিষয় যারা মেনে চলছে তারা আজ সবাই অনেক সম্মানিত জায়গায় পৌঁছে গিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি কর্মসংস্থানে যোগদান করেছেন এবং চারু শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগদান করেছেন আমার শিক্ষার্থীরা। আমি এক শিক্ষার্থীর কথা অল্প একটু তুলে ধরছি, তবে তার নাম উল্লেখ করলাম না। হয়তো তার সম্মানে লাগতে পারে তাই নামটা নাই বলি। শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় তার বিশ টাকা ফাইন নির্ধারণ করা হয়। বিশ টাকা তার কাছে তাৎক্ষণিকভাবে ছিল না। তাই তার ফোনটা রেখে দেওয়া হয়েছিল এক টাকা কম থাকার কারণে সেদিন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে দুই কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় গিয়ে টাকা ধার চেয়ে এনে জমা দিয়েছিলেন ফোনটা ফিরিয়ে নিতে এবং পরবর্তীতে আর কখনো কম নম্বর পায়নি। সে বর্তমানে একটা জেলা স্কুলের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। আমি গর্ববোধ করি তার জন্য এবং যে যেখানে আছে যারা তার স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে আমি তাদের জন্য সব সময় শুভ কামনা করি। বর্তমানে যারা আছে তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি তাদের স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারলে তার পিতা-মাতার স্বপ্ন পূর্ণ হবে এমনটা প্রত্যাশা করি। আমি শিল্পী হতে এসেছিলাম কিন্তু শিল্পী হতে পারিনি এটা আমি ভুলে যাই না। তাই শিল্পী হওয়ার জন্য যারা আসে তাদেরকে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়াই আমার কাজ। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ২২১ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ৩০ জনার উর্ধ্বে সরকারী জেলা পর্যায়ে গভমেন্ট স্কুলে চারুকলার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এটাই আমার জীবনের সার্থকতা। শিল্পী না হতে পারলেও কাউকে পথ দেখার চেষ্টা করেছি। আমি আমার পিতামাতার আদর্শ ধারণ করে নিজেকে পরিচালনা করি। আমার মা বলেছিলেন কেউ তোমাকে এক টাকা দিলে তার বিনিময় তুমি তার যথাযথ কাজ করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কাউকে ঠকিয়ে কখনো বড় হওয়ার চেষ্টা করবে না কেউ কষ্ট পায় এমন কাজ করবে না। তাই সব সময় চেষ্টা করি অন্যকে না কাঁদিয়ে নিজে কাঁদার চেষ্টা করি।
বিঃদ্রঃ আজকের এই লেখাটি যাকে নিয়ে আশা করি তার জীবন পরিবর্তন করার জন্য সে নিজে চেষ্টা করবে। যদি তার জীবন পরিবর্তন হয় আমার উদ্যোগ নেওয়াটা সার্থক হবে এমন প্রত্যাশায় চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস।