সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯:১২ অপরাহ্ন

অশ্রু সিক্ত টঙ্গি হেদায়েতের মহাসাগর

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৯৫ Time View

জহিরুল ইসলাম ইসহাকী

বিশ্ব ইজতেমা—এটি কোনো সাধারণ সমাবেশ নয়, বরং এটি ঈমানের এক বিশাল দরবার, যেখানে মানুষ আল্লাহর ভালোবাসা ও ক্ষমা লাভের জন্য ছুটে আসে। লাখো মানুষ একত্রিত হয়, কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। তারা দুনিয়ার সব ব্যস্ততা ও মোহ ছেড়ে এসে নিজেদের আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য নিবেদিত হয়। প্রতিবারের মতো এবারও ইজতেমার প্রথম পর্ব সমাপ্ত হলো এক আবেগঘন মুহূর্তে। হাজারো মানুষ ফিরে এসেছে হেদায়েতের পথে, বহু মানুষ দাওয়াতি কাজে নিজেকে নিবেদিত করতে চিল্লার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর মহান রবের দরবারে অশ্রু গড়িয়ে টঙ্গির বুকে সৃষ্টি হয়েছে এক আত্মশুদ্ধির প্লাবন।

ইজতেমার শেষ দিনের দৃশ্য: অশ্রু আর আর্তনাদের এক মহাসমুদ্র

ইজতেমার শেষ দিনটি ছিল এক অনন্য ধৈর্য, তাওবা ও আল্লাহর সামনে নিজেকে সমর্পণের মুহূর্ত। যেদিকে তাকানো যায়, সেদিকেই শুধু কান্না—এ যেন একটি অশ্রুসিক্ত উপত্যকা! মুসল্লিদের হাত উঁচু, হৃদয় কাঁপছে, চোখে নীরব কান্না, আর কণ্ঠে শুধুই আল্লাহর নাম।

যখন আখেরি মুনাজাত শুরু হয়, তখন তুরাগ নদীর তীরজুড়ে নেমে আসে এক পবিত্র নীরবতা। লাখো মানুষের চোখ অশ্রুসজল, কণ্ঠ জড়ানো, মন কাঁপছে। তারা কাঁদছে

কেউ পেছনের জীবনের ভুলের জন্য,

কেউ দুনিয়ার পাপ থেকে মুক্তির জন্য,

কেউ জান্নাতের পথে চলার জন্য,

কেউ নিজের পরিবার, দেশ, মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও মুক্তির জন্য।

এমন দৃশ্য কেবল বিশ্ব ইজতেমায় দেখা যায়! মানুষের চোখের পানিতে যেন টঙ্গির মাঠ প্লাবিত হয়েছে। এ যেন এক হেদায়েতের মহাসাগর, যেখানে প্রত্যেক মুসল্লি ডুব দিতে চায়, পাপমুক্ত হতে চায়, আল্লাহর ভালোবাসায় বিলীন হতে চায়।

হেদায়েতের আলো: অনেকেই ফিরে এসেছে সত্যের পথে

ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনা। এবারও হাজারো মানুষ এই দাওয়াত গ্রহণ করেছে।

অনেক তরুণ, যারা আগে দুনিয়ার মোহে হারিয়ে গিয়েছিল, তারা নতুনভাবে ইসলামের পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বহু মানুষ তাদের নামাজ, রোজা, পর্দা, হালাল-হারাম মেনে চলার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে।

অনেক বৃদ্ধ, যারা জীবনের দীর্ঘ সময় ইসলাম থেকে দূরে ছিল, তারাও কান্নায় ভেঙে পড়ে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে।

অসংখ্য মানুষ ৪০ দিনের চিল্লার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে তারা ইসলামের দাওয়াতকে আরও দূরদূরান্তে ছড়িয়ে দিতে পারে।

ইজতেমার প্রভাব: সারা বিশ্বে ইসলামের জাগরণ

বিশ্ব ইজতেমা শুধুমাত্র একটি দেশীয় আয়োজন নয়; এটি একটি বৈশ্বিক আন্দোলন। এখানে আগত মুসল্লিরা ফিরে যাওয়ার পর দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে নিজেদের সমাজে পরিবর্তন আনে। তারা নামাজের গুরুত্ব শেখায়, ইসলামি জীবনযাপনের বার্তা দেয়, মানুষকে হারামের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে।

বিশ্ব ইজতেমার শিক্ষা:

1. ইসলামের মূল আদর্শে ফিরে আসা—কুরআন ও সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে জীবন গঠন করা।

2. দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব—নিজের জন্য হেদায়েত চাওয়ার পাশাপাশি অন্যদের দাওয়াত দেওয়া।

3. তাওবা ও আত্মশুদ্ধি—নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নতুন এক জীবনের যাত্রা শুরু করা।

4. ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য—সারা বিশ্বের মুসলমান এক উম্মাহ, আমাদের বিভক্ত হওয়া উচিত নয়।

হেদায়েতের পথযাত্রী আমরা সবাই
প্রথম পর্বের ইজতেমার সমাপ্তি মানে কেবল একটি আয়োজনের ইতি নয়, বরং এটি লাখো মানুষের জন্য নতুন জীবনের শুরু। টঙ্গির বুকে গড়িয়ে পড়া অশ্রুর ফোঁটাগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে—এই দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়, আসল জীবন হলো আখিরাতের জীবন।

যারা এই ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন, তারা নতুন এক প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফিরেছেন—জীবনকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করবেন, দাওয়াতি কাজে নিজেকে উৎসর্গ করবেন, দ্বীনের জন্য পরিশ্রম করবেন।

বিশ্ব ইজতেমা এক মহাসাগর, যেখানে হেদায়েতের স্রোত বয়ে যায়, আর সেই স্রোতে ভেসে যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ—আলোর পথে, সত্যের পথে, জান্নাতের পথে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই স্রোতে ভাসার তৌফিক দিন। আমিন!

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102