কলমেঃ রওশন রোজী
=============
তরী কিছু টা অন্য মনস্ক হয়ে বসেছিল ট্রেনের কামড়ায়।
মনে তার ছিল অজস্র চিন্তা প্রথম শ্বশুর বাড়ি যাওয়া।
ও বাড়ি র লোক গুলো কেমন হবে। তাদের ঠিক বুঝতে পারবে কি না?এই সব নানারকম চিন্তা এসে মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছিল।
তাদের হাতটা ছিল জানালার পাশে।
হঠাৎ করে মনে হলো তার নাম ধরে কেউ ডাকছে।
সে জানালার সামনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো।
তরীর সামনের দিকে তাকানো দেখেই বলে ফেললো কেমন আছো তুমি? তরীর তাকে চিনতে একটু সময় লেগে
গেল।
তারপর মনে হলো এটা তো ডাক্তার তাওসিফ ভাইয়া।
কোন এক বান্ধুবীর মাধ্যমে তার সাথে পরিচয় হয়েছিল।
তখন সে মেডিকেল কলেজের চতুর্থবর্ষের ছাত্র ছিল।
তরী কিছু টা অবাক হয়ে গেল। এতোটা বছর সে তরীকে মনে রেখেছে জেনে।
তরী ডাক্তারের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগেই বলে উঠলো
কোথায় যাচ্ছো তুমি।
তরী কিছু টা লজ্জা পেয়ে মুখটা নীচু করে জবাব দিল।
তরীর পরনে ছিল লাল বেনারশী নতুন সাজে সেজেছিল
তরী।
দেখে তাওসিফের বুঝতে বাকি রইল না।
তাওসিফ বললো তোমার সাথে উনিই তাহলে সেই।
তরী তখন পরিচয় করে দিল।
তাওসিফ তখন মুচকি হাসি দিয়ে বললো ভালো।
তুমি ভালো থেকো নতুন জীবনের শুভকামনা রইল।
তরী কিছু বলার আগেই ট্রেনের ছেড়ে দেওয়ার ঘন্টা পরে গেল।
আস্তে আস্তে ট্রেন চলতে থাকলো।
তরী তাকিয়ে দেখলো ডাক্তার তাওসিফ তাকিয়ে আছে
আর হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে।
তরীর তখন অনেক কথাই মনে হতে লাগলো।
তার সাথে তরীর একবারই দেখা হয়েছিল।
কথা আর হয়নি তার সাথে। একটা চিঠি এসেছি ল
তরীর হোস্টেলের ঠিকানায়। তরী তার জবাজ দিয়েছিল
কি না? তা তরীর মনে পড়ছে না।
তখন একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যমে ছিল চিঠি পত্রের আদান প্রদান
তরী বুঝতে পারে নি তার মনে তরী অনেক টা জায়গা জুড়ে ছিল। তাওসিফ ও সে রকমভাবে প্রকাশ করেনি কখনো।
কেন যেন তরী এই ভালোবাসা ভালোালাগা,অনুভব অনুভূতি এগুলো অন্য জগতে রেখে দিয়েছিল।
তরীর মনে হতেো এ জগতে কারো প্রবেশ অধিকার নেই।
কেন যেন একটা ভয় কাজ করতো। তাই এ সব থেকে নিজেকে অনেকটা দূরে রাখতো।
তরী নিজের মনটাকে পাহাড়ের নীচে চাপা দিয়ে রেখে দিয়েছিল।
এ খান থেকে কেউ তাকে নিতে পারবে না।
যাকে সে কখনো ভালোবাসে নি তাকেই তাকে বরণ করে
নিতে হয়েছিল। আর যে ভালোবাসতে চেয়ে ছিল তাকেও সে গ্রহণ করতে পারেনি।
তাওসিফ এর হয়তো তরীর প্রতি মায়া সৃষ্টি হয়েছিল
যার জন্য তাকে সে ভুল তে পারেনি।
ভালোবাসা যখন মনের গভীরে যেয়ে হৃদয়কে স্পর্শ করে তখই ভালোবাসা থেকে মায়ার সৃষ্টি হয়।
এই মায়া তাকে কাছে টেনে নিয়ে যায়। যেটা থেকে সে কখনো বাহির হতে পারে না। সে যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করে তার জন্য।
তাওসিফকে সে বলতে ভুলে গিয়েছিল। সে কোথায় আছে।
সে শুধু বলেছিল তার বিসিএস চাকরি হয়েছে।
এর পর তাওসিফ এর সাথে আর কোন দিন ও তরীর দেখা হয়নি।
তরীর যেতে যেতে মনে হলো
মানুষের চাওয়া পাওয়া, না পাওয়ার বেদনা,
সুখ দুঃখ,হাসি কান্না,
যত দিন বেঁচে থাকবে ততদিনই এসব কে সংগী করে
পৃথিবীতে বেচে থাকতে হবে।
এ সব ভাবতে ভাবতে গন্তব্য স্টেশনে নেমে পড়তে হলো।
আজ তার সাথে হারিয়ে যাওয়া এক ন ক্ষত্রের সাথে
দেখা হয়েছিল। যা সে কখনো আশা করে নি।
এই ভেবে সে মন কে শান্তনা দিল তবুও তো তাকে
কেউ একজন ভালোবেসেছিল। এই ভেবে মন তার আনন্দে ভরে উঠলো।
নাই বা হলো তার সাথে মিলন।নাই বা হলো দেখা।
নক্ষত্র টা না হয় মনের মধ্যেই থেকে যাক। যে মায়ার
বাধনটা কেউ কখনো ছিড়ে ফেলতে পারবে না।