শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
বিশ্বনাথের ‘অলংকারী ইউনিয়ন ওয়েলফেয়ার ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট ইউকে’র রমজান উপলক্ষ্যে নগদ অর্থ বিতরণ বিশ্বনাথে বিশ্বনাথনিউজের উদ্যোগে ‘বিশ্বনাথ সেরা হাফেজ’ প্রতিযোগিতা শুরু সোনার বাংলা সাহিত‍্য পুরস্কার ২০২৫ পেলেন কবি অথই নূরুল আমিন কবিতা: ফিরে এসো ‘৭১ লোহাগাড়া প্রবাসী মানবিক ফাউন্ডেশন’র ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্পন্ন বিশ্বনাথে ‘৩য় বিএফসি প্রাইজমানি এন্ড প্রাইজমানি ফুটবল টুর্ণামেন্টে’র ফাইনাল সম্পন্ন নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রায়হান আলম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন নিয়ামতপুরে ব্যাডেন পাওয়েলের জন্মবার্ষিকী পালন কবিতাঃ মানুষ হতে চাই – রায়গঞ্জে ফুলজোড় রক্তদান সংগঠনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কমিটি গঠন

একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস ও ঐতিহ্য

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৪ Time View

জহিরুল ইসলাম ইসহাকী।

বাংলা ভাষা, বাঙালির প্রাণের ভাষা, সংস্কৃতি আর পরিচয়ের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এই ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালিকে চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল সেই ত্যাগের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেক শহীদ তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন মাতৃভাষার জন্য।

এই আন্দোলন ছিল নিছক ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, এটি ছিল বাঙালির আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার প্রথম সোপান। এই আন্দোলনের পথ ধরেই পরবর্তী সময়ে আসে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক বিজয় এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ অর্জন।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের বিভক্তির পর পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণ এক সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সংকটের মুখোমুখি হয়। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের ৫৬% মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলতো, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া এক অন্যায় সিদ্ধান্ত ছিল।

বাঙালিরা শুরু থেকেই এর প্রতিবাদ জানায়। ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ করাচিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে তখনই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরপর ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি: রক্তস্নাত ভাষার লড়াই

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে নেমে আসে বাঙালি ছাত্রসমাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইন্টারমিডিয়েট কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ভাষার দাবিতে রাজপথে শ্লোগান তোলে—
“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই!”

শাসকগোষ্ঠী এই আন্দোলন দমনে ১৪৪ ধারা জারি করে, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বাঙালির রক্তে ছিল প্রতিবাদের আগুন। ছাত্ররা অগ্রসর হতে থাকলে পুলিশের গুলি বর্ষিত হয়। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়েন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকে।

তাদের আত্মত্যাগের ফলে শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় শাসকগোষ্ঠী।

ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য ও সাহিত্য প্রতিফলন

ভাষা আন্দোলন বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এক বিশাল প্রভাব ফেলে। শামসুর রাহমানের “একুশের কবিতা”, আলাউদ্দিন আল আজাদের “ফেব্রুয়ারি ১৯৫২”, জসীমউদ্‌দীনের “কবর”, সুকান্ত ভট্টাচার্যের আগুনঝরা কবিতা—সবই একুশের চেতনার প্রতিচ্ছবি।

এই আন্দোলনের স্মরণে লিখিত গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” আজও হৃদয়ে নাড়া দেয়, যা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতীক হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও একুশের বিশ্ব স্বীকৃতি

বাংলা ভাষার জন্য এত বড় আত্মত্যাগ বিশ্ববাসীর কাছে বিরল ইতিহাস হয়ে উঠেছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে। এর ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু বাঙালির নয়, এটি পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাপ্রেমী মানুষের অনুপ্রেরণা।

একুশের চেতনা ও আমাদের দায়িত্ব

একুশ আমাদের শুধু অতীতের ইতিহাস নয়, এটি আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। একুশ আমাদের শিক্ষা দেয়—
মাতৃভাষাকে মর্যাদা দিতে হবে।
বাংলা ভাষার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটাতে হবে।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, যেমন দাঁড়িয়েছিল ১৯৫২ সালের বীর শহীদরা।

আজকের দিনে আমাদের শপথ—
বাংলাকে ভালোবাসবো, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করবো, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবো।

উপসংহার

একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির অহংকার, গৌরবের দিন। এটি শুধু শোকের দিন নয়, এটি সংগ্রামের, বিজয়ের, আত্মপরিচয়ের দিন। একুশ আমাদের বলে—
“মাথা নত করো না, অধিকার আদায় করো!”

একুশের চেতনায় জেগে থাকুক বাঙালি, বাংলা ভাষার গৌরব ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়!

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি?”

শ্রদ্ধাঞ্জলি সকল ভাষা শহীদদের প্রতি!

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102