লেখক: অথই নূরুল আমিন:
আমরা শনিবারে চারটার সময় নেত্রকোনা রাজুর বাজার আসি, বারহাট্টার মনাষ বাজারে বই বিতরণের পর। আমার সাথে সঙ্গী হিসাবে সাথে ছিল, তেজগাঁও কলেজের ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান।
তারপর রিকশায় চড়ে আমরা এমপির মোড় যাই। আমাদের প্রথম ভাবনা ছিল, মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন মাষ্টারের বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেয়া। রিকশা থেকে নেমে বাসার কাছে গিয়ে আবার মত পাল্টে গেল। না, আমরা একটু ঘুরাঘুরি করব। মগরা নদীর আশে পাশে। সেই রুই যাবার চির চেনা পথটায় যাব।
এমন সময় বিলকিছ আপার বড় ছেলে মুরাদের কথা মনে পরে গেল। তাই কাজী রোডের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু বাসাটা চিনতে পারছিলাম না। কারণ কয়েক বছর ধরে নেত্রকোনা শহর আমার যাওয়া হয় না। নেত্রকোনা শহরে আমার অসংখ্য আত্মীয়স্বজন বসবাস করেন।
এখানে ভাগনা মুরাদ আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ। মনে মনে ভাবছি আর হাটছি। যদি বিলকিছ আপার বাসাটা এখন পেয়ে যাই। তাহলে এক নজর চোখের দেখাটা দেখে যাব। আজকে চলে গেলে আর কখনও নেত্রকোনা আসা হয় কি না। বাকিটা আল্লাহ্ ভালো জানেন।
তারপর সামনে দুটি মেয়ে আসছে। ভাবলাম ওরা হয়তো জাহানারা স্কুলে লেখাপড়া করে। তাই তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম। তারপর তারাই দেখিয়ে দিল। তারপর আমি ও নিশ্চিত হলাম। হ্যা এটাই মুরাদের বাসা। তারপর বাসার ভিতরে গিয়ে আমি আমার নামটা বলতেই। ভিতর থেকে আমার বোন বলতেছেন। নূরুল আমিন আইছ। ঘরের ভিতরে এসো।
আজকে দীর্ঘদিন ধরে বিলকিছ আপা অন্ধ। আমার মায়ে আমার কাছে একদিন বলেছিলেন।
তখন আমি ঘরে গেলাম। আজকে বিলকিছ আপা অনেকটাই কষ্টে আছেন। বিভিন্ন ভাবে, অথচ জন্মের পর থেকে চল্লিশ বছরের ভিতরে অভাব তার কাছে পৌছাতে পারেনি। আজকে তার স্বামী মারা গেছে তাও একযুগ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে চোখে সমস্যা। বড় ছেলে মুরাদ। সেও প্রায় বিশ বছর ধরে এলোমেলো জীবন যাপন করছে।
তারপর ভাগনা রিয়াদ ছিল ঘরে। এখানে রিয়াদ আজকে সংসারের হাল ধরে আছে। কিছুক্ষণ পর মুরাদ আসল। দেখলাম মুরাদ এখনো যথেষ্ট ভারসাম্যহীণতায় ভুগছে। যার জন্য বেশি সময় আমাকে দেয়নি। যে মুরাদ একদিন আমাকে না দেখলে তার নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে যেত। আমরা দুজন বয়সে যথেষ্ট ছোট বড় হলেও বন্ধুর মত প্রায় বেশ কয়েক বছর একসঙ্গে থেকেছি। তখন মুরাদ লেখাপড়া করত। লেখাপড়ায় আচার আচরণে একজন যথেষ্ট ভালো এবং জ্ঞানী ছেলে ছিল। তার বাবা শহরের নাম করা একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। আজকে পুরো পরিবারের উপর যেন কষ্টের কালো ছায়া বাসা বেধেছে। আমার পক্ষ থেকে দোয়া রইল। আমার বোন খালাতো বোন বিলকিছ আপার পরিবারের সবারজন্য।
ভাগনি রিয়া ভাগনা রিয়াদ মুরাদ ও তাদের সন্তানদের জন্য রইল শুভকামনা।
অথই নূরুল আমিন,
কবি কলামিস্ট ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী।