রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ৭ দফা

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫
  • ১২ Time View

মো: সাইফুল আলম সরকার, ঢাকা:

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা প্রত্যেকটি নাগরিকের কর্তব্য হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্ব পালন করে আসছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই স্বার্থান্বেষী মহল নানা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে ও সীমান্তে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে সুপরিকল্পিত ভাবে। দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। মানুষ আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নাগরিকদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই।

এরই প্রেক্ষিতে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ -এর উদ্যোগে শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫ তারিখ বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ১নং হলে “সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায এর সঞ্চালনা ও সমন্বয়ক মো: সাইফুল আলম সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা আব্দুস সালাম মামুন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মো: হাবিবুর রহমান হাবিব। প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন  বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিজিপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মতিন, ক্যান্সার গবেষক ডা. সরওয়ার, মেজর জেনারেল আমছা আমিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান, লেঃ কর্ণেল ফরিদ আকবর (অব), বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মফিজুর রহমান, ড. আরিফ শাকি, ফয়েজ আহম্মেদ, প্রফেসর শাহজাহান সাজু, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট মহসিন রশিদ, ডক্টর মালেক ফরাজি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ এম এ আমিন, এড. নূর মোহাম্মদ কীরণসহ জাতীয় রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি, ছাত্রপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবিবৃন্দ।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আমরা ইতিপূর্বে দেখেছিলাম, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলো। কিন্তু চলমান পরিস্থিতি উপলব্ধি করলে তা কার্যকর হয়েছে বলা যাবেনা। আছিয়ার করুণ পরিণতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমাদের এ জনপদ শিশুদের জন্যেও অনিরাপদ। এমন ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের সমাজে ও মস্তিষ্কে পচন ধরেছে। অবক্ষয় হয়েছে সামাজিক মূল্যবোধের। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলা একান্ত প্রয়োজন।

এই সময় বক্তাগণ আরও বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রের বীজবপন করছে ভারত, ছড়ানো হচ্ছে প্রতিহিংসা। ভারতীয়রা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে এবং ঐ অঞ্চলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে একটি প্রক্সি যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যা গত কিছুদিন যাবৎ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে দৃশ্যমান হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে আরাকান আর্মির সুসম্পর্ক থাকায় আরাকান আর্মির মাধ্যমেও বাংলাদেশের সাথে প্রক্সি যুদ্ধ করানোর ষড়যন্ত্র করছে ভারত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আহবান জানান। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীদের নির্মূলে একটি সামরিক কমিশন গঠন ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার আহবান জানান।

এসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাত দফা দাবি উপস্থাপন করেন।

দাবি সমূহ:
১. পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্রিটিশ কোম্পানি ১৯০০ শাসনবিধি বাতিল করে, পার্বত্যাঞ্চলে স্বাধীন সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা। পার্বত্য অঞ্চলের সকল জাতির স্ব-স্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন করা।

২. বৈষম্যমুক্ত দেশ গঠনের  লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি জরিপ চালু করে ভূমিহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি/বাঙালিদের পার্বত্যাঞ্চলে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩. বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সকল জাতিসত্তাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি তথা বাংলাদেশী বাঙালি/চাকমা/ত্রিপুরা/মারমা/ অন্যান্য  হিসাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তিকরণ।

৪. “শান্তি চুক্তি” নামক কালো চুক্তি বাতিল করে সংখানুপাতিক ভিত্তিতে সকল জাতিসত্তার সম-অধিকার নিশ্চিতকরণে সম্প্রীতি কমিশন গঠন।

৫. ১৯৮৯ সালে প্রবর্তিত পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন বাতিল করে নির্বাচনের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা।

৬. পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মূলে সামরিক কমিশন গঠন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী হতে অদ্যাবধি গণহত্যা সমূহের বিচার কার্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে সম্পন্ন করা।

৭. ২০১৮ সালের আদিবাসী শব্দ ব্যবহার বন্ধে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পূর্ণ বাস্তবায়ন ও আদিবাসী স্বীকৃতির ষড়যন্ত্র স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102