সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন

ছোট গল্প- ব্যর্থতায় পর্যবসিত এক মহানায়ক (প্রথম পর্ব)

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৪৯ Time View

এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ

মানুষ স্বভাবের দাস! স্বভাবের কারণে মানুষ জীবনে বিভিন্ন পথ পরিক্রমা অতিক্রম করে সার্থকতার সাথে, আবার কখনো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে। মানুষের জীবনে শিশুকাল, বাল্যকাল, কিশোরকাল, যৌবন কাল উঁকি দেয়!
বাল্যকালে অবচেতন মন খেলাধুলার ছলে, লেখাপড়ার সময়ে একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে মেলামেশা করে যা ঘটমান।

কৈশোরে অবতীর্ণ হলে একজন বালকের অবচেতন মন যৌবনের আসন্ন হাত ছানিতে স্বপ্ন দেখতে থাকে। মনের অজান্তেই গড়ে ওঠে মায়া মোহ লেখাপড়া করতে গিয়ে সহপাঠীদের মাঝে কোন বিপরীত লিঙ্গের কোন কাউকে ভালো লাগার মাধ্যমে। শুরু হয় ভাবনার আয়নায় নিজেকে বার বার দেখা আবার কখনো নির্ঘুম রাত কাটানো বা নিশ্চুপ ভাবনায় নিজেকে ডুবিয়ে ফেলা।
কোন কোন সময় ক্ষেত্র বিশেষে একে-অপরের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ার প্রবণতাও খাটো করে দেখা যায়না।

আজকে সে রকমই একটি গল্প বলবো সকল পাঠকের উদ্দ্যেশে। আশিক প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে পদার্পণ করা এক কিশোর। শ্রেনী পাঠে খুবই মনোযোগী ও মেধাবী। কোন দিন শ্রেনী কক্ষে শিক্ষকদের রোষের মুখে পড়েনি। শিক্ষকগন তাকে খুব ভালোবাসেন ও স্নেহ করেন।
তার সহপাঠীদের মাঝ থেকে অনেকেই তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাব ভঙ্গিমায় ইঙ্গিতে ভালোলাগা বা ভালোবাসার কথা বুঝাতে চেয়েছে। কিন্তু আশিক মাধ্যমিকের গন্ডিতে থাকা কালীল কোন দিন কোন সহপাঠী কিশোরীকে পাত্তা দেয়নি। তার ভাবনায় একটি শব্দ ছিলো পাশ করতে হবে।

অনেক জনকে পাশ কাটিয়ে প্রত্যাখ্যান করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। সেই সময়ই বাধে বিপত্তি শতজনকে নিরাশ করা ছেলেটি কি আটকে যায় ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়া এক পুঁচকে মেয়ের চোখের ভাষায়। স্বর্ণালী নামের মেয়েটি যেমন ছিলো সুন্দরী তেমন বুদ্ধিমতি। স্বর্ণালীর প্রতি আশিকের কিশোর মন দিশাহীন আচরণে আবেগী হয়ে উঠে। কলেজ ফাঁকি দিয়ে আশিক স্বর্ণালীকে এক নজর দেখার জন্য অস্থির হয়ে ছুটে যায় স্বর্ণালীর হাইস্কুলের রাস্তায়। বসে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা! কিন্তু মুখোমুখি দাড়িয়ে কিচ্ছুটি বলতে পারেনা। এক বছর কাল কেটে যায় একদিন আশিক তার বন্ধু মোস্তাকের সহযোগিতায় স্বর্ণালীকে ভালো লাগার কথা বলতে সমর্থ হয়।
স্বর্ণালী সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী হলেও খুবই বুদ্ধিমত্তার সাথে আশিকের প্রস্তাব কে পাশ কাটিয়ে যায়। স্বর্ণালী আশিকের উদ্দেশ্যে বলে আপনি কলেজে পড়েন, আমি পড়ি হাইস্কুলে। আমি এখন ছোট আপনি আমাকে এভাবে প্রপোজ করতে পারেন না? তখন আশিক বলে যে, শোনো স্বর্ণালী আমি তোমার সামনে আসলে কথা বলতে পারিনা, তাই বন্ধুকে নিয়ে এসেছি আজকে তোমার সাথে কথা বলবোই বলবো বলে! আশিক আরো বলে শোনো স্বর্ণালী তুমি সারা জীবন এখন কার মত ছোট থাকবেনা! অবশ্যই তুমি বড় হবে।
তখন স্বর্ণালী বলে ঠিক আছে আমি যখন বড় হই, তখন আপনি আমাকে প্রস্তাব দিবেন! কেমন?

আশিক ও মোস্তাক ফিরে আসে বাড়ীতে, আশিক নিশ্চুপ নিশব্দে বসে ভাবতে থাকে হয়তো আর এ জীবনে কাউকে কোনদিন বলবেনা ভালোবাসার কথা। কয়েক মাস পর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়, আশিক পাশ করে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হয়।
শহরে মেসে থেকে পড়ালেখা করতে থাকে আশিক, এদিকে স্বর্ণালী এসএসসি পাশ করে। স্বর্ণালীর বাবা সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে তার পিতা শহরে ভর্তি করে দেয়। আশিক ও স্বর্ণালীর আর কয়েক বছর দেখা সাক্ষাৎ হয়না। স্বর্ণালীর বাবা এক্সিডেন্টে মারা গেলে স্বর্ণালীর মামারা স্বর্ণালীকে বিয়ে দিয়ে দেন। আশিক মাঝে মধ্যে শহর থেকে এলাকায় এসে স্বর্ণালীর খোঁজ করেও পায়না। স্বর্ণালীর মা ও ভাই শহরে সেটেল হয়ে যায়। হঠাৎই একদিন আশিক গাড়ীতে চড়তে যাবে, সেই গাড়ীতে স্বর্ণালীকে কয়েক মাস বয়সী বাচ্চা কোলে দেখতে পেয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে! কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞাসা করে স্বর্ণালী তুমি কেমন আছো! কোলে তোমার বাচ্চা? তুমি কি বড় হয়েছো?
স্বর্ণালী কিছুই বলেনা, শুধু স্বর্ণালীর দুই চোখ ভিজে যায়!
দুই চোখ থেকে অঝোরে লবনাক্ত পানি ঝরতে থাকে!

চলবে।

✒️এস এম মনিরুজ্জামান আকাশ
কবি-লেখক ও সাংবাদিক,
সভাপতি-
গ্রিনপিস বাংলা, পাবনা জেলা শাখা,পাবনা।
kdaakash2024pabna@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102