মো: বায়েজিদ বোস্তামী, বিশেষ প্রতিনিধি কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার ভাগলপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের এক সময়কালের শীর্ষ ধনাঢ্য ব্যক্তি মরহুম জহুরুল ইসলাম। তাঁর মায়ের নামে ভাগলপুরে তিঁনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মায়ের নামে বেগম রহিমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এখন একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ১১.০৯.২০২৪ইং তারিখ পাঠানো চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি ১৬ সেপ্টেম্বর -২০২৪ইং রোজ সোমবার পবিত্র ঈদ-ই- মিলাদুন্নবী (সা:) যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ২টি কর্মসূচি তথা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম রুমে সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন, কর্ম ও শিক্ষা এবং ইসলামে শান্তি, প্রগতি, সৌহার্দ্য, সহিষ্ণুতা, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব, মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোচনা সভা, কেরাত, দোয়া ও মিলাদ এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কুইজ প্রতিযোগিতা পরিপালনের মাধ্যমে এই মহান দিবস উদযাপন করা হয়।
বাংলাদেশে এই প্রথম একযোগে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকমন্ডলীর সমন্বয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা:) পালিত হয়েছে।
এই মহতী অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন বেগম রহিমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সন্মানিত প্রধান শিক্ষক জবাব মো: আশরাফুল হক, আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাফেজ মাওলানা মুফতি মমতাজ উদ্দিন। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অত্র বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী সহ সকল স্তরের শিক্ষক মণ্ডলী। ধর্মীয় এই অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন অত্র প্রতিষ্ঠানের সন্মানিত সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ অবধি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অত্র বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর পিতা ও আমন্ত্রিত অভিভাবক অতিথি জনাব মো: বায়েজিদ বোস্তামী। আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি হাত তুলে মোনাজাত পরিবেশনের মাধ্যমে দেশ ও সকলের জন্য দোয়া কামনা করেন।
পবিত্র ঈদ-ই- মিলাদুন্নবী হচ্ছে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর শুভ জন্মদিন হিসেবে মুসলিম উম্মাদের মাঝে পালিত মহা আনন্দের দিন, সেরা ঈদ তথা একটি মহা উৎসব। মুসলিমদের মাঝে এ দিনটি বেশ উৎসবের সঙ্গে পালন হতে দেখা যায়। তবে উৎসব নিয়ে ইসলামি পণ্ডিতদের মাঝে যদিও অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল-এর ১২ তারিখে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশি মুসলিমরা এই দিনকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী বলে অভিহিত করেন।
১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদ-ই- মিলাদুন্নবী (সা:) । প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভ আবির্ভাব ঘটে সমগ্র মানবজাতির রহমত স্বরূপ।
৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের আগে গোটা আরব জাতি ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তৎকালীন সময় আরবের মানুষ মহান এক আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃংখলা। এ যুগকে বলা হতো ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’র যুগ।
যে যুগে মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করতো। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে এক আলোকবর্তিকা রূপে মহান আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চাঁদের আলোয় চেয়ে বেশি আলোকিত করে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে মশগুল হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন। আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি উপরের আলোচনার পাশাপাশি সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকল কার্যক্রম শেষ করে।
ইসলামী প্রশ্নোত্তর ও কুইজ প্রতিযোগিতা পর্বের মাধ্যমে সভাপতি মহোদয়, প্রধান অতিথি ও শিক্ষক মণ্ডলী অনুষ্ঠানের শেষ অংশে শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন। সুশীল সমাজের মতামত বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে ধর্মীয় রীতি চালু হয়েছে তার ধারাবাহিকতা অটুট থাকুক এই কামনা করেন।