আজ খুব খুশির দিন মিতার কাছে। সারা ঘরবাড়ি আলোতে সেজেছে।লোকজনের সমাগম চারিদিকে। হই হুল্লোড়, খাওয়া – দাওয়া,গল্প,আড্ডা, চলছে সারাবাড়ি জুড়ে।
এই দিনের অপেক্ষায় ছিল মিতা।আজ তার মেয়ের বয়স ছয় মাস।অন্নপ্রাশন হচ্ছে।তাই বাড়ি সবাই খুশিতে মেতে উঠেছে।
মিতা আর দীপক এর বিয়ে হয়েছে পনের বছর হলো।কিন্তু এতদিন পর তার মেয়ে হয়েছে। কত মানুষের কত কথা শুনতে হয়েছে তাকে।শশুর বাড়ির লোকেও কথা শোনাতে ছাড়েনি মিতাকে।কিন্তু দীপক মিতার পাশে ঢাল হয়ে দাড়িয়ে ছিলো।মিতাকে সাহস জুগিয়ে ছিল। ভেঙে পড়তে দেয়নি।
কত রাত ঘুমায়নি মিতা। সে কি কোনো দিন মা হতে পারবে না।সবাই তাকে দেখে ফিসফিস করবে। উপহাস করবে।
বাড়ির লোকের সাথে কোনও সম্পর্ক ছিলনা মিতার।মিতাকে কথা শোনাত বলে আলাদা থাকতো দীপক। যাতে মিতার কষ্টটা কম হয়।কিন্তু এদিকে দীপক বাবা মা ভাই এর দায়িত্ব পালন করত।গিয়ে মাঝে মাঝে দেখে আসতো,সংসার খরচের টাকাও দিয়ে আসতো।
অনেক ডাক্তার দেখিয়ে কিছুতে কিছু হচ্ছিলো না। আশা ছেড়ে দিয়েছিল। মনে হয় তার আর মা হয়ে ওঠা হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্ধকার কাটিয়ে আলো আনলো তার মেয়ে।
এই সময়টা একা কেটেছে মিতার।তার পাশে কেউ ছিলো না। দীপক তার অফিসের কাজে বেরিয়ে যেতো সারাদিন। আর মিতার একা একা কাটত। ভালো লাগতো না কবে সবাই একসাথে হবে এই চিন্তা করত।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হতো মিতার। তার জন্যে দীপক বাড়ির সবাইকে ছেড়ে এসেছে।
ঈশ্বরের কাছে রোজ প্রার্থনা করতো সব যেন ঠিক হয়ে যায়।
এই অবস্থায় কোনোদিন তার শ্বশুর বাড়ির লোক দেখতে আসেনি। মনে মনে খুব কষ্ট পেত মিতা।ইচ্ছে করতো সব শাশুড়ী এই সময় সাধ দেয়।ওকে ও যেনো দেয় কিন্তু সে আশা ও তার পূরণ হয়নি।কিন্তু কোনো ত্রুটি রাখেনি দীপক। তার মায়ের যেটা করনীয় সেটা যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছে। সাধ দিয়ে ইচ্ছে পূরণ করেছে।
দীপক এর জন্য মনে জোর পেয়েছে মিতা।নইলে হয়তো অনেক ভেঙে পড়তো সে। খুব ইচ্ছে ছিলো সন্তান হলে খুব বড় করে অনুষ্ঠান করবে।যে তার জন্য এত কিছু ত্যাগ করেছে। তাকে যেন তার বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
মেয়ের ছয় মাস পূর্ণ হলে মিতা দীপক কে জানায় বড়ো করে অনুষ্ঠান করতে চায় সে।দীপক তাতে বাধা দেয় না।বলে তুমি যেটা চাও সেটা হবে। অন্নপ্রাশন দিন ঠিক হয়।দীপক অফিসে চলে গেলে তাকে না জানিয়ে মিতা তার শ্বশুর বাড়ি যায় মেয়েকে কোলে নিয়ে।
দরজার সামনে গিয়ে একটু ইতস্তত বোধ করে। তার পর মনে সাহস রেখে কলিং বেল বাজায়।দরজা খোলে মিতার শাশুড়ী। ওকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কিন্তু মিতা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে।তাড়াতাড়ি করে তার মেয়েকে শাশুড়ীর কোলে দিয়ে দেয়। শাশুড়ী আর কিছু বলতে পারেনা। নাতনিকে কোলে নিয়ে কেঁদে ফেলে আর আদর করতে থাকে।তারপর শাশুড়ীকে মেয়ের অন্নপ্রাশন এর কথা বলে।যাওয়ার জন্য। কিছুক্ষন পর শশুর আসে। ওনাকে প্রণাম করে মিতা।তার আসর কারণ ও জানায়।
অনেক কথাবার্তা হওয়ার পর মিতা বাড়ী আসতে চাইলে ওনারা আসতে দিতে চায়না।কিন্তু মিতা বলে ও না জানিয়ে এসেছে দীপককে।বাড়ি ফিরতে হবে।বলে মিতা বাড়ি চলে আসে।
বাড়ী এসে মিতা মনে মনে খুব খুশী হয়।কোনো কিছু দীপককে বলে না। তারপরের দিন সকালবেলা রান্না করছে মিতা তাড়াতাড়ি করে দীপক অফিসে যাবে বলে। হটাৎ করে তার শশুর শাশুড়ী আসে ওদের ওখানে। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। দীপক বাবা মা কে দেখে অবাক হয়ে যায়। আর সব মান অভিমান ভুলে গিয়ে ওরা ও বাড়ী চলে যায়। অফিসে আর যায় না।
এই দিনটার জন্য মিতা অপেক্ষা করছিল এতো দিন পর দীপক কে তার বাড়ী ফেরাতে পেরে মনে অনেক শান্তি পেয়েছে মিতা।সব কিছু অগোচরে থেকে গেলো দীপক এর।