এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:
বিশ্ব ঐতিহ্য বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় তিন দিন পরে মোরেলগঞ্জ শরণখোলার জেলেরা আবারো সাগরে নেমে পড়েছেন ইলিশ শিকারে।বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জীবন ও জীবিকা মাছের ওপর নির্ভর করেই চলে। লঘুচাপে সাগর উত্তাল হওয়ার কারণে শুক্রবার থেকে ফিশিংবোটবহর সুন্দরবনের খালসহ উপকূলের বিভিন্নস্থানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিলো। দুবলারচরের অদুরে বঙ্গোপসাগর থেকে বাগেরহাটের বগা এলাকার ফিশিংবোট মাঝি মামুন হোসেন সোমবার দুপুরে মোবাইল ফোনে বলেন, সাগরের আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় সুন্দরবনের ভেদাখালী, মেহেরআলী, আলোরকোল খালে তিনদিন ধরে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা ফিশিংবোটের জেলেরা সোমবার সকাল থেকে ইলিশ শিকারে সাগরে নেমে জাল ফেলতে শুরু করেছেন। তিনি আরো বলেন, তাদের অবস্থা এখন খুবই করুণ। সাগরে বর্তমানে মাছ কম পাওয়া যায় তার উপর দুর্যোগের কারণে কয়েকদিন মাছ ধরতে না পারায় জেলেরা আর্থিক কষ্টে পড়েছেন। মহাজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে আনা টাকা কিভাবে শোধ করবেন সে চিন্তায় জেলেরা এখন দিশেহারা বলে জানালেন মামুন হোসেন। শরণখোলা উপজেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, সাগরে লঘুচাপ কেটে আবহাওয়া সংকেত নেমে যাওয়ায় উপকূলের বিভিন্নস্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা ফিশিংবোট সমূহ মাছ ধরার জন্য সোমবার সকালে আবারো সাগরে রওয়ানা হয়েছে। এবারের ইলিশ শিকার মৌসুমে জেলেরা সাগরে কাংখিত ইলিশ পায়নি তার উপর বারবার আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় সাগরে জাল ফেলাও সম্ভব হয়নি ফলে জেলে মহাজনদের অপূরণীয় লোকসান হয়েছে বলে আবুল হোসেন জানান।শরণখোলা উপজেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরে এখন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে শতাধিক ফিশিংবোট চারদিন ধরে রায়েন্দা, মোরেলগঞ্জের কুমারখালী, মহিপুর, খেপুপাড়া, নিদ্রাসখিনা ও পাথরঘাটাসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম দফায় ২৩ জুলাই মধ্যরাতে তাদের ফিশিংবোট বহর সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্যোগের কবলে পড়ে। ফিরে আসতে বাধ্য হয় শতাধিক জেলে। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় আবার সাগরে গিয়ে জাল ফেলতেই সাগরের অবস্থা আকস্মিক খারাপ হয়ে যায়। প্রবল ঢেউ ও ঝোড়ো বাতাসে টিকতে না পেরে বুধবার থেকে উপকূলে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে ফিশিংবোট বহর। ফলে ক্রমাগত লোকসানে পড়ে এখন দিশেহারা জেলে ও ফিশিংবোট মালিকরা।
শরণখোলা রাজৈর মৎস্যঘাটের আড়তদার কবীর হোসেন বলেন, সাগরে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় ফিশিংবোট বহর সাগরে না গিয়ে তিনদিন ধরে রায়েন্দা মৎস্যঘাটে নোঙর করে আছে।
পাড়েরহাট মৎস্যবন্দরের আড়তদার আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলে মৎস্যজীবীরা এখন ভালো নেই। একদিকে সরকারের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, অপরদিকে সাগরে গিয়ে বারবার দুর্যোগের কবলে পড়ে মাছ ধরা বন্ধ রেখে জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে হচ্ছে।
মোরেলগঞ্জের কুমারখালী এলাকার জেলে সাইফুল ইসলাম শেখ ও আব্দুল জলিল খান বলেন, নিষেধাজ্ঞার পরে সাগরে যাওয়ার প্রস্ততি নিয়ে রওনা হলে দুর্যোগের কারণে বোট নিয়ে ফিরে এসেছি। মহাজনদের চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি। মাছের ওপর নির্ভর করেই চলে আমাদের জীবন ও জীবিকা।
বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ক্রমাগতভাবে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ছেন। মৎস্যজীবীরা ধার-দেনা করে লাখ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে বোট পাঠিয়ে মাছ ধরতে না পেরে লোকসান গুনছেন।একদিকে ডিজেল ও মুদি পণ্যের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে ট্রলার সাগরে গিয়ে মাছ ছাড়াই ফিরে আসছে। মাছ শিকারে যাওয়া প্রত্যেক জেলের পেছনে অনেক খরচ। এবার সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাওয়ার পর থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে। এমন চলতে থাকলে ধীরে ধীরে পেশা বদলে ফেলতে পারেন অনেকে।
বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে দুইবার খালি বোট নিয়ে ফিরে এসেছেন। প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গিয়েই আমাদের দেশীয় জেলেরা বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েন। ভারতের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের দেশের সাগরে নিষেধাজ্ঞা দিলে জেলেরা ভালোভাবে মাছ ধরতে পারতেন। একদিকে ডিজেল ও মুদি পণ্যের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে ট্রলার সাগরে গিয়ে মাছ ছাড়াই ফিরে আসছে। মাছ শিকারে যাওয়া প্রত্যেক জেলের পেছনে অনেক খরচ। এবার সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাওয়ার পর থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে। এমন চলতে থাকলে ধীরে ধীরে পেশা বদলে ফেলতে পারেন অনেকে।এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।