পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনার ঈশ্বরদীতে আমেনা আক্তার আলফি (১১) নামের ওই কিশোরীর মৃতদেহটি ঝুলন্ত অবস্থায় পেয়েছে পরিবারের সদস্যরা এমন দাবি করলেও প্রতিবেশীদের দাবি মারা হয়েছে আলফিকে। কিশোরীর এ মৃত্যু নিয়ে এলাকায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) রাত ১০টায় উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকা থেকে কিশোরীর মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শহিদুল ইসলাম।
নিহত আমেনা আক্তার আলফি উপজেলার গোপালপুর এলাকার মো: আলমগীর হোসেন এবং নিলুফা ইয়াসমিন দম্পতির প্রথম সন্তান এবং আসনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
নিহতের পরিবার এবং থানা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নিহত আলফিকে তার শয়ন কক্ষের বাঁশের আঁড়ার সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন তার মা নিলুফা ইয়াসমিন।
মেয়েকে ঝুলতে দেখে নিলুফা ইয়াসমিন চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ঝুলন্ত আলফিকে নামায়। সে সময় আলফি জীবিত আছে ভেবে তাকে দ্রুত পার্শ্ববর্তী নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্বজনরা।
সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক আলফিকে মৃত ঘোষণা করলে স্বজনরা চুপিসারে মৃতদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন এবং বাড়িতে ফিরে প্রসাশনকে অবহিত না করেই দ্রুত লাশ দাফনের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
আত্মহত্যা করা মৃতদেহ প্রসাশনকে না জানিয়ে দাফন করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী, ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদুল ইসলাম এবং এস আই সেলিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহের দাফন প্রক্রিয়া বন্ধকরে দেন। এসময় মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ হেফাজতে নেন।
নিহতের চাচা ইপিজেড কর্মী আলী রাজ বলেন, কাজ থেকে বাড়ীতে ফিরে গোসলের সময় হঠাৎ ভাবীর চিৎকার শুনতে পাই। দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখি ঝুলন্ত আলফিকে নামানোর আপ্রান চেষ্টা করছে ভাবি। আলফির ঝুলন্ত দেহটি নামিয়ে তাকে দ্রুত লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
নিহত আলফির মা নিলুফা ইয়াসমিন এবং চাচা আলী রাজ উভয়ই আলফির মৃত্যুর কারন হিসেবে তার মানুষিক সমস্যার কারন জানালেও মানুষিক চিকিৎসার কোন প্রকার তথ্য প্রমান দেখাতে পারেননি তারা। তারা কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসার কথা বললেও কবিরাজের নাম ও ঠিকানা বলতে পারেননি।
আসনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্বর্ণা খাতুন এবং আলফির শ্রেনী শিক্ষক সালেহা খাতুন বলেন, আলফি অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের শিক্ষার্থী ছিলেন। নম্র এবং ভদ্রতায়ও ছিলেন অতুলনীয়। তবে আমরা তার মানুষিক কোন সমস্যা কোনদিন পাইনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলফির এক প্রতিবেশী বলেন, আলফি মরার পর তার পরিবারের লোক হঠাৎ করে পাগল বলছে কেন সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। সে খুবই শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলো। সে আত্মহত্যা করতে পারে সেটা আমাদের বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।
তবে আলফি যখন গলায় দড়িদেয় তখন তাদের বাড়ি পুরোটাই ফাঁকা ছিলো। আসলে তার মৃত্যু নিয়ে এলাকায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শহীদুল ইসলাম বলেন, মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য সকালে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।