বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন

শিক্ষা খাত ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৪
  • ৯১ Time View

একরামুল হক দীপু।

যে ছাত্রটি তার শিক্ষকের মাথায় আঘাত করতে পেরেছে বলে ফেসবুকে উল্লাস প্রকাশ করছিল কিংবা যে ছাত্রীটি তাদের প্রধান শিক্ষিকাকে টেনে হিচড়ে পদত্যাগে বাধ্য করলো এই দৃশ্য যে কোন সুস্থ ও বিবেকবান মানুষকে আতঙ্কিত ও বিচলিত করে তুলবে। এই ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবক গণকে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আপনার এই সন্তানটির আর লেখাপড়া হবে না। প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন এই সন্তান আপনাকেও একদিন এভাবে নাজেহাল করতে পারে।

শিক্ষকদের সাথে এসব অসভ্যতা কোনোভাবেই কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ মেনে নিতে পারবেন না। এটা ঠিক যে বিগত দশকগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ একটি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকেরাও সাদা দল নীল দল ইত্যাদি ব্যানারে রাজনীতির গড্ডালিকা প্রবাহে গাঁ ভাসিয়েছেন। কোন পেশাজীবী যখন রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করেন তিনি তখন তার মেধা দেশপ্রেম ও স্বকীয়তা বিক্রি করে দেন। রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি তাকে দাসে পরিনত করে । সৎ, যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতি এ সমাজে সব সময়ই ছিলো। মেধাবীরা তো অবশ্যই,মেধাহীন দুর্বল শিক্ষকেরাও আগেকার দিনে দেবতূল্য ছিলেন। সামাজিক আচার অনুষ্ঠান বিচার সালিশে শিক্ষকদের ডাক পড়ত সবার আগে। ছাত্র ছাত্রী এবং অভিভাবকদের কাছে তাঁরা শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসনে আসীন ছিলেন। তাদের কেনা ব্যবহার করার সাহস তখন সমাজে ছিল না।

সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া অনিয়ম দুর্নীতি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন দলীয়করণ শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। লক্ষ্যহীন পাঠ্যক্রম আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের পাঠে অমনোযোগী করে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি অর্থ বিত্তের হাতছানি ছাত্র সমাজের একটি অংশকে অস্থির আর দানব করে তুলছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দমন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এরা শিক্ষকদের অপমান অপদস্থ করতে একবার ও ভাবছে না। এই অবস্থার অবসান জরুরি।

কোনো শিক্ষক যদি অযোগ্য, অপদার্থ কিংবা দূর্নীতিবাজ হন তাহলে স্বাভাবিক নিয়মেই তিনি ছাত্রছাত্রীদের কাছ হতে স্বতঃস্ফূর্ত সম্মান পাবেন না। কিন্তু তাঁকে বা তাঁদের অপসারণ করতে হলে তার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ আছেন। জোরপূর্বক অসম্মান করে পদত্যাগে বাধ্য করা এটা কোনোভাবেই ছাত্রছাত্রীদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এভাবে পুরো শিক্ষক সমাজের জন্য ভীতিকর অবমাননাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এই অবস্থায় সদাশয় সরকার কিছু সুপারিশ ভেবে দেখতে পারেন:

এক। রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করা।

দুই। সকল স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র মেধা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রদান।

তিন। শিক্ষকদের গ্রেড বেতন-ভাতা সরকারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার সমকক্ষ করা।

চার। সরকারি বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মন্ডলীর বেতন বৈষম্য দূর করা। তাঁদের আবাসনের ব্যবস্থা করা।

পাঁচ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি অনিয়ম দ্রুত বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া। সকল প্রকার শিক্ষক হয়রানি বন্ধ করা।

ছয়। কোন শিক্ষক রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ও সক্রিয় হলে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে হবে।

সাত। পাঠ্যক্রমের সকল স্তরে নৈতিকতা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

আট। কারিগরী শিক্ষা জোরদার করা।

চলমান এই অরাজকতা রোধ করতে শিক্ষা খাতে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া এখনি প্রয়োজন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102