“”””””””””””””””””””””””””
সাহেলা সার্মিন
“এরা শিক্ষক, মানুষ গড়ার কারিগর
ভালো ভাবে বাঁচার জন্য ছেড়েছে বাড়িঘর।”
হ্যা বন্ধুরা, গত বছরের চিত্র এটা। গত স্বৈরাচার সরকারের দীর্ঘ পনেরো বছর ব্যাপী বেসরকারী (প্রায় ৯৭℅) শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য দাবী আদায়ে প্রতি বছরই এরকম আন্দোলন করেছে। অথচ ঐ সরকার এদের কোনো কথাতেই কোনো কর্ণপাত করেনি।
১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়।
ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।বিশ্বের ১০০ টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১ টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে “ই আই “প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জন সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
অথচ আমাদের বাংলাদেশে শিক্ষকতা পেশার অবদানকে অতি নৈপুণ্যের সাথে তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়, বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের।শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।শিক্ষকরা সমস্যায় থাকলে শিক্ষার গুণগত মান এবং কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়।সব সময়ই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সাথে সরকারি চাকুরী জীবীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হয়, তাদের সন্তানের জন্য ভাতা আছে। অথচ,বেসরকারি শিক্ষকরা পদে পদে লাঞ্চিত হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে। তারা যে বেতন পায়,বর্তমান দ্রব্য মূল্যের বাজারে তা দিয়ে তাদের ৩০ দিনের ১৫ দিন চলা কষ্ট ; অথচ তাদের “বার্ষিক আয়কর” ঠিকই দিতে হয়।
এ যেনো মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে শিক্ষকরা তাদের চাহিদা নিয়ে আন্দোলনে গেলে, তাদের সাত পাঁচ বুঝিয়ে ভাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা শান্তি প্রিয়। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছে। সরকারের অবাধ্যতা করেনি। গত বছরে শিক্ষকরা তাদের পেটের তাগিদে দু’দুবার আন্দোলনে শামিল হয়েছে, তিন জন শিক্ষক প্রাণও দিয়েছে। ফলাফল শূন্য। একটি আশ্বাস দিয়েছিলেন, ৫ ই অক্টোবরে শিক্ষক দিবসে আমাদের জন্য একটি শুভ ঘোষণা আছে। আমরা সেই আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। অথচ পজিটিভ কোনো খবরই আমরা পাইনি। শিক্ষকদের আন্দোলনের কোনো বিষয়ই স্বৈর সরকার পূরণ করেন নি।
আমাদের দেশে শিক্ষকতা পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং সুযোগ সুবিধা কম থাকার ফলে অনেক মেধাবীরা আসতে চায়না। এভাবে চলতে থাকলে মেধাবী শিক্ষক পাওয়া দুষ্কর হবে। শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলা হলেও কার্যত এ পেশা অনকটা অবহেলিত। তাই এ পেশার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এখন সময়ের দাবি।
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষার মান উন্নয়ন,শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। অথচ তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখছে না। শুধু মুখেই বলা হয়, শিক্ষকতা একটি মহান পেশা,অথচ এর মূল্যায়নের কার্যকারীতা নেই কোথাও।
এই বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমরা আশা করবো, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের দেশের শিক্ষকদের বেতন স্কেল সহ অন্যান্য সুবিধাদির দিকে যেনো বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি হয়। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে একটু একটু করে বঞ্চিত হতে হতে প্রায় মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়েছিলাম। স্বৈরাচার শাসনের পতনে এবং নতুন সমন্বয়কদের আগমনে আজ অনেক আশায় বুক বাঁধলাম।
শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রকম অপারেশন হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ছাত্রদের দিয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিত ভীষণ দৃষ্টিকটু এবং লজ্জা জনক হয়েছে। আমি সেদিকে যাবোনা, শুধু বলবো শিক্ষাঙ্গন থেকে দুর্নীতি এখনো দূর হয়নি। সেরা শিক্ষকের তালিকা এখনো প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বজন প্রীতিতে হচ্ছে। আরো অনেক বিষয়েই আমরা পিছিয়ে আছি। সার্বিক ভাবে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।