রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ অপরাহ্ন

শত শহীদ মিনার গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা মানবতার ফেরিওয়ালা লায়ন আব্দুস সালাম চৌধুরীর আজ শুভ জন্মদিন

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৬ Time View

স্টাফ রিপোর্টার:

ঢাকার দোহার উপজেলার বিলাশপুরের কৃতিসন্তান, মানবতার ফেরিওয়ালা দেশবরেণ্য সমাজ সেবক, লায়ন আব্দুস সালাম চৌধুরী। তাঁর স্বপ্ন নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণ করবেন।। ইতোমধ্যে ৬৭টির ও অধিক শহিদ মিনার নির্মাণ করেছেন। আজ মানবিক ও দেশপ্রেমিক মানুষটির শুভ জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অফুরন্ত ভালোবাসা। মহান প্রভু যেন তাকে সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, রহমত ও বরকত দান করেন।
মহামারী করোনা কালীন সময়ে শত শত মানুষের মুখে আহার তুলে দেওয়া, পদ্মার ভাঙ্গনে ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো কিংবা সারাদেশে অসহায় মানুষের আহবানে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া মানুষটির নাম মানবতার ফেরিওয়ালা লায়ন আব্দুস সালাম চৌধুরী। তাকে এযুগের হাজী মোহাম্মদ মহসিন, কিংবা মাদার তেরেসা বললেও অতুক্তি হবে না। তাঁর কাছে দলমত জাত-পাতের ভেদাভেদ নেই। তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি একজন মা-বাবার আদর্শ সন্তান, স্ত্রীর আদর্শ স্বামী, ভাই বোনের একজন আদর্শ বটবৃক্ষ, সন্তানদের একজন আদর্শ পিতা, সমাজের একজন আদর্শ মানুষ এবং একজন সফল ও আদর্শ সৎ শিল্পোদোক্তা। সাহস, সততা, শ্রম ও মেধা দিয়ে তিলে তিলে নিজেকে গঠন করেছেন, আর এখন নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন, সমাজ, দেশ ও মানবতার কল্যানে।
অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন তিনি, বহুসামাজিক ও মানবকল্যাণ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বপ্নদ্রষ্টা। জড়িত রয়েছেন সংগঠনের সদস্য ও উপদেষ্টা হিসাবে। সমাজ সেবায় অনন্য অবদানের জন্য দেশে বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন অসংখ্য গুণী লোকের সান্নিধ্য। নীতির প্রশ্নে তিনি কখনো আপোষ করেননি। মানব প্রেম ও দেশপ্রেম তার ধর্ম। তিনি যেমন সহজ, সরল ও মানবপ্রেমী তেমনি একজন দ্রোহী মানুষ অন্যায় ও অবিচার দেখলে গর্জে উঠেন প্রতিবাদে। করেন বিদ্রোহ তাই তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী সম্মানায় ভুষিত হয়েছেন। সম্পূর্ণ নিজ পরিকল্পনায় ও নিজস্ব অর্থায়নে শত শহীদ মিনার নির্মানের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লায়ন আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, মানুষ টাকা-পয়সা দিয়ে শখের জিনিসপত্র জমিজমা ক্রয় করে থাকেন; কিন্তু আমার স্বপ্ন ভাষাশহিদদের সম্মানে স্কুল, কলেজে শহিদ মিনার বানানো। আমি ১০০টি শহিদ মিনার নির্মাণ করতে চাই। বাংলাদেশের যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি স্থায়ী শহিদ মিনার না থাকে, তাহলে আমাকে অবগত করলে সেই প্রতিষ্ঠানে আমার নিজস্ব অর্থায়নে শহিদ মিনার নির্মাণ করে দেব ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের আঙিনায় ভাষার জন্য লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন শহিদ মিনার না থাকাটা খুবই হতাশাজনক। তাই আমি শহিদ মিনার তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে ভাষাশহিদ ও বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জন্মায়। প্রথম শহীদ মিনার এর প্রেক্ষাপট, ২০০৮ সালের কথা। বিলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন আব্দুস সালাম চৌধুরী। সেখানে গিয়ে দেখলেন কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দেখে মন খারাপ হয় তাঁর।
আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, ‘ছোটবেলায়ও দেখেছি, কলাগাছ দিয়ে পরম যত্নে শহীদ মিনার বানায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারির পর সেটা আবার ভেঙে ফেলা হয়। দেখে আমার খারাপ লাগে। সেদিনও পত্রিকায় দেখলাম, দেশের প্রায় ৪০ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই।
ফলে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনার আগে অনেক শিশুরই চাক্ষুষভাবে শহীদ মিনার দেখার সুযোগ হয় না। বিদ্যালয়ের আঙিনায় ভাষার জন্য লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ মিনার না থাকাটা হতাশাজনক। স্কুলে এত কিছু হয়, অথচ একটা স্থায়ী শহীদ মিনার থাকবে না—এটা কেমন কথা? এ জন্য কারো দিকে চেয়ে না থেকে নিজেই উদ্যোগ নিয়েছি।’ প্রথম শহীদ মিনার নিজ এলাকায় তৈরি করেন তিনি দোহারের পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলোর একটি বিলাশপুর।
পদ্মার তীরবর্তী গ্রামটিতেই বিশালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলে ২০০৮ সালে শহীদ মিনার গড়ার স্বপ্ন দেখলেও নিজের অসুস্থতাসহ নানা কারণে সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেননি। পরে ২০১৮ সালে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজে হাত দেন। কাজ সম্পন্ন হয় ২০১৯ সালে। শহীদ মিনারের স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে স্টেইনলেস স্টিলে আর পাকা বেদিতে ব্যবহার করা হয়েছে কালো রঙের টাইলস।
শহীদ মিনারটি নির্মাণে খরচ হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকার মতো। তখন থেকে স্থায়ী এই শহীদ মিনারে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান আয়োজন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আসমা বেগম বলেন, ‘একটা সময়ে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা গাছ ও বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার বানাত। আমরাও সেখানে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতাম। এখন স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। বিষয়টা দারুণ আনন্দের।’ আব্দুস সালাম বলেন, ‘নিজ গ্রামের বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণের মাধ্যমে আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
মানবতার ফেরিওয়ালা আলোকিতমানুষ, একজন আব্দুস সালাম চৌধুরী, সাত ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। ১৯৬৮ সালে তাঁদের পৈতৃক ভিটাবাড়ি পদ্মার করালগ্রাসে বিলীন হয়ে গেলে তাঁর বাবা ক্বারি আবুল হাসেম চৌধুরী সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। আব্দুস সালামের বয়স তখন মাত্র তিন বছর। এর পর থেকে ঢাকায়ই কেটেছে শৈশব-কৈশোর। এখন বাবার ব্যবসার হাল ধরেছেন। ঢাকায় মেটালিক ও ইলেকট্রিকের ব্যবসা রয়েছে। ১৯৯৮ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল দোহারের বিভিন্ন গ্রামে। তখন বন্যার্তদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর পর থেকে নিয়মিত যেকোনো দুর্যোগে এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। এই করোনাকালেও হাজারখানেক মানুষের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। ২০০১ সাল থেকে বছরে একবার এলাকায় বিনা মূল্যে চক্ষু শিবিরের আয়োজন করেন। এসব কাজে বরাবরই স্ত্রী-সন্তানদের উৎসাহ পেয়ে আসছেন। আব্দুস সালাম বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা পাশে না থাকলে কোনো কাজেই সাফল্য আসে না। তাদের সহযোগিতা আমাকে এ ধরনের কাজে উৎসাহিত করেছে।’
জানা যায়, লায়ন আব্দুস সালাম চৌধুরী তার নিজস্ব অর্থায়নে দোহার উপজেলার, বিলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলাশপুর সরকারি গনী শিকদার প্রাথমিক বিদ্যালয়, পালামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝিরচর সরকারি মাহমুদপুর জুনিয়র হাইস্কুল, শেখ রাসেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মধুরখোলা উচ্চ বিদ্যালয়, মাহমুদপুর বিএম প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেগম আয়েশা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেঘলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ড্যাফোডিল উচ্চ বিদ্যালয়, কার্তিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বর্ণমালা স্কুল এন্ড কলেজ, জামালচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৈতাবাতর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বাহ্রা হাবিল উচ্চ বিদ্যালয়, জয়পাড় সরকারি খালপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকুশাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর হোসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অনিরুদ্ধ কিন্ডারগার্টেন, জয়পাড়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাধা নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লটাখোলা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজীর চর মোগলজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাস্ট গ্লোরী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুতারপাড়া আবদুল হামেদ উচ্চ বিদ্যালয়, ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মারুয়াপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার করে দিয়েছেন। অপরদিকে পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপা কোকিলপ্যারী উচ্চ বিদ্যালয়, কাঠালীঘাটা মাসুম মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝিরকান্দা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গালিমপুর সোনাবান উচ্চ বিদ্যালয় এবং রাজধানী শহর ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ৫২টি শহিদ মিনার নির্মাণ করেছেন। লায়ন আব্দুস সালাম চৌধুরীর ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগকে দোহার নবাবগঞ্জের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অধিকাংশ জনসাধারণ সাধুবাদ জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি তার এই কর্মকাণ্ডের জন্য সবার কাছে প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন। তার দেশপ্রেম সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা সুশীল সমাজের। সম্ভব হলে মানুষের উপকার করব কিন্তু কোন মানুষের ক্ষতি করব না এই যার ব্রত। শুধু মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন তার কোন শত্রু নাই। এই মহান গুণিকে মহান একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করবেন এই প্রত্যাশা সচেতন মানুষের।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102