এম.কে.জাকির হোসাইন বিপ্লবী:
গাজীপুরের শহিদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কোটি মানুষের প্রিয় ব্যক্তি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সম্মানীত আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০.৩০ মিনিটে গাজীপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ি মাঠে উক্ত সভার আয়োজন করা হয়। অগনিত জনস্রোতের মধ্য দিয়ে সভার কার্যবিধি পরিচালিত হয়। সভার শুরুতে জামায়াতের আমির শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন। শহিদ পরিবারদের উদ্দেশ্যে আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা আপনাদের সহযোগীতা করতে আসিনি, আমরা আপনাদের দোয়া নিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে এসেছি। উক্ত সভায় গাজীপুর জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা আমীর ড. জাহাঙ্গীর আলম, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান, ঢাকা উত্তর অঞ্চল টিমের সদস্য আবুল হাসেম খান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাম্মদ খায়রুল হাসান, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক,
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী সহ আরও অনেকেই।
প্রধান অথিতির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত বলেন, প্রতিটা শহিদ পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা, এবং চিকিৎসাধীনদের জন্য চিকিৎসা সেবায় পাশে থাকবে জামায়াত। শহিদ পরিবারের জন্য করা হবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছরে নির্যাতনের ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামায়াত ইসলাম। আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা যাদের ওপর এতো বছর সবচেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ করেছো,
অত্যাচার নির্যাতন করেছ, তাদের একজনও এই দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেননি। তোমাদের নির্যাতন হাসিমুখে বরন করেছে। ফাঁসির মঞ্চেও নির্ভয়ে জুলুমের মোকাবেলা করেছে, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। দেশ গঠনে জনগনের সহযোগীতা চেয়ে বলেন, গত ১৬ বছর যারা অন্যায় অত্যাচার করেছে, আল্লাহ তাদের খোলা আকাশের নিচে জায়গা দিয়েছেন। প্রিয় জন্মভূমি কে সুন্দর দূর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রে পরিনত করতে আমরা জামায়াত ইসলামী জনগনের সহযোগিতা চাই। দেশের স্বার্থে আমাদের কারো সাথে কোনো বিভাজন নেই বলে জানিয়েছেন আমীরে জামায়াত। যতো বিভাজন ছিলো তা আমরা মাতৃভূমির ছাত্র জনতার অর্জিত স্বাধীনতার স্বার্থে পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি।
ভিন্ন জাতির উদ্দেশ্যে বলেন, যারা বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি করে জাতিকে ভিন্ন দলে বিভক্ত করে তারা জাতির দুশমন। আর কাউকে জাতিকে ভাগ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। ধর্মের ভিত্তিতে জাতির ভাগাভাগি আমরা চাই না। এক্ষেত্রে আমরা আপোষহীন। জাতির সেবক হয়ে জাতির সাথে গাদ্দারি করার পরিনতি বিশ্ব দেখেছে। তাই তা থেকে আমাদের সবার শিক্ষা নেওয়া উচিৎ বলে জানিয়েছেন আমীরে জামায়াত।
জামায়াতের আমীর বলেন, জাতিকে তারাই ভাগ করে যারা দেশের দুশমন। দলের ভিত্তিতে, আর ভাগ করার সুযোগ দেয়া হবে না। যারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগনের টাকায় কেনা ভুলেট জনগনের বুকে চালায়, এরকম স্বৈরাচার আর যেন না আসে, সেজন্য প্রিয় দেশ ও জাতিকে সচেতন হতে হবে। আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র জনগনের বুকে চালায়, এমন কোনো নতুন সন্ত্রাসী সরকার দেখতে চাই না। আর আমরা সচেতন হলে এরকম নতুন স্বৈরাচার আর আসবে না।
বিচার বিভাগের মন্তব্যে আমীরে জামায়াত বলেন,
কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে জাতি দেখতে চায় না। যারা বিচারের আমানত রক্ষা করতে পারবে, তাদেরকেই বিচারক হিসেবে চাই। যারা কখনও মুখ চিনে বিচার করবে না, নীতি, নৈতিকতা ও সত্য সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে রায় দিবেন। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে হবে, সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হতে হবে সঠিক।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমীরে জামায়াতের দাবি,
যারা জাতির মুক্তি ও স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আন্দোলনে পঙ্গুত্ব বরন করেছে তাদের যোগ্যতা এবং পদ বিবেচনা করে চাকরি দিতে হবে। প্রতিটি শহীদ পরিবারে অত্যান্ত একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দিতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বীকৃতি দাবি করে আমীরে জামায়াত বলেন, তারা আমাদের মর্যাদার পাত্র।আমরা দলীয় ভিত্তিতে শহীদদের বিভক্তি চাই না। আগামী দিনের প্রতিটি প্রজন্ম যেনো পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামের মাধ্যমে জানতে পারে মুগ্ধ, সাঈদ ও রিয়ারা ছিলো। যারা অপরাধী তাদেরকে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতাভুক্ত করতে হবে। একজন অপরাধীও যেনো বিচার বহির্ভূত না থাকে। খুনিদের বিচার এদেশের গণ মানুষের দাবি।আরও গুরুত্ব পূর্ন বক্তব্যের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি করেন আমীরে জামায়াত।