শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

ডিপ্রেশন কী ও মুক্তির উপায়

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৪৩ Time View

মোঃ রেজাউল ইসলাম

■ বিষণ্ণতা কী :
ডিপ্রেশনের বিষণ্নতা বা ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি দীর্ঘকাল ধরে বিষণ্ন, দুঃখী এবং হতাশাগ্রস্ত অনুভব করে। এতে সাধারণত আত্মবিশ্বাসের অভাব, আগ্রহ হারানো, দুঃস্বপ্ন বা ঘুমের সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এটি দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত করতে পারে। ডিপ্রেশন চিকিৎসা সহায়তা এবং থেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

■ ডিপ্রেশন কী :

ডিপ্রেশন হলো একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মানুষের মনের অবস্থা ও আচরণকে প্রভাবিত করে। এটি সাধারণত দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে এবং সাধারণভাবে মনে হয় যে জীবন নিয়ে আগ্রহ কমে গেছে বা কোনও কিছুই আনন্দ দেয় না। ডিপ্রেশন বিভিন্ন লক্ষণ দ্বারা চিহ্নিত করা যায়, যেমন: দুঃখজনক বা বিষণ্ণ অনুভূতি, অনিদ্রা বা অতিরিক্ত নিদ্রা, খাবারের অভাব বা অতিরিক্ত খাওয়া, এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব।

মানসিকভাবে, ডিপ্রেশন মানুষের চিন্তা এবং অনুভূতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি একাধিক কারণে হতে পারে, যেমন জীবনের অস্থিতিশীলতা, পারিবারিক সমস্যা, অথবা জেনেটিক ফ্যাক্টর। ডিপ্রেশন বিশেষ করে মানসিক চাপ এবং চিন্তার চাপের ফলে বেড়ে যায় এবং এটি দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তোলে।

ডিপ্রেশন সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং চিকিৎসা করা প্রয়োজন। চিকিৎসার মধ্যে থাকতে পারে থেরাপি, মেডিকেশন, এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন। অবিলম্বে সাহায্য নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হতে পারে এবং পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয়।

তখন মনে পড়ে যায় ডিপ্রেশন নিয়ে কবিতা টা →

একা হদয়ে নিরন্তর ডিপ্রেশন
সৃষ্টির মধ্যে পাওয়া নিমল বাসা
আমি ডিপ্রেশনে একা,মনে ভরা স্বপ্নের ভাষা,
স্বাধীন মনোযোগে ডিপ্রেশনে ভরা।

■ ডিপ্রেশন কেন হয় :

ডিপ্রেশন একটি জটিল মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা যা নানা কারণে হতে পারে। কিছু প্রধান কারণ হলো :

১. জিনগত বা পারিবারিক ইতিহাস :
যদি পরিবারের কেউ ডিপ্রেশনে ভোগেন, তাহলে আপনারও এর ঝুঁকি বেশি হতে পারে।

২. জৈবিক কারণ :
মস্তিষ্কের কেমিক্যালের ভারসাম্যের অভাব, যেমন সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের অস্বাভাবিকতা।

৩. মানসিক চাপ ও অভিজ্ঞতা :
জীবন যাত্রার বড় পরিবর্তন,পড়াশোনা বা পারিবারিক সমস্যা, বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না হওয়া, বা যেমন চাকরি হারানো, প্রেমের সম্পর্ক ভাঙা, বা প্রিয়জনের মৃত্যু।

৪. মনস্তাত্ত্বিক বিষয় :
আত্মমূল্যবোধের অভাব, হতাশা, বা নিম্ন আত্মবিশ্বাস।

৫. শারীরিক স্বাস্থ্য :
দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যাও ডিপ্রেশন সৃষ্টি করতে পারে।

৬. জীবনযাত্রার অভ্যাস :
অনিয়মিত ঘুম, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, বা নেশার দ্রব্যের ব্যবহার ও অবদান রাখতে পারে।

৭. বৈষয়িক কারণ :
জীবনের বড় আঘাত, যেমন কোন প্রিয়জনের মৃত্যু বা চাকরি হারানো।

৮. শারীরিক স্বাস্থ্য :
কিছু শারীরিক রোগ বা মাদকাসক্তিও ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে।

ডিপ্রেশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে, এবং প্রতিটি ব্যক্তির অভিজ্ঞতা আলাদা হতে পারে। সঠিক নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

■ অপামান বোধ :

ডিপ্রেশন বা হতাশা এমন একটি মানসিক অবস্থা যা একজন ব্যক্তির অনুভূতি, চিন্তাধারা এবং আচরণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম সাধারণ উপসর্গ হলো অপমান বোধ। এই অবস্থায় ব্যক্তি নিজের প্রতি তীব্র নেতিবাচক অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে, যেমন আত্ম-অপমান বা আত্ম-অবিশ্বাস।

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের ভুলত্রুটি বা ব্যর্থতাগুলোর প্রতি অতিরিক্ত সমালোচনা করতে পারে এবং নিজের অযোগ্যতা বা ক্ষুদ্রতা অনুভব করতে পারে। এই ধরনের অনুভূতি ব্যক্তি মনোবলকে দুর্বল করে এবং তাদের আত্মমর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, এবং দৈনন্দিন জীবনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে অসুবিধা হতে পারে।

অপমান বোধের কারণে ব্যক্তির মনোভাব ক্রমাগত নেতিবাচক হতে পারে, যা তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনকে কঠিন করে তোলে। এ ধরনের অনুভূতির মোকাবেলা করতে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের সাহায্য নেয়া উচিত, যারা সঠিক চিকিৎসা ও সহায়তার মাধ্যমে এই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করতে পারেন।

ডিপ্রেশন বা হতাশা বিশেষভাবে নিরাপত্তাহীনতা ও একাকিত্বের অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। এই অনুভূতিগুলি মানসিক এবং সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

■ নিরাপত্তাহীনতা :

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং নিজের প্রতি অনিশ্চয়তা অনুভব করেন। তাঁরা মনে করেন যে তাদের চারপাশের মানুষরা তাদের সহায়তা করবে না, কিংবা তারা নিজেই মূল্যহীন। এই নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তাদের প্রতিদিনের জীবনকে কঠিন করে তোলে এবং সাধারণ কাজকর্মেও সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

■ একাকিত্ব :

ডিপ্রেশন একাকিত্বের অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারে, যা মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টকর। যদিও একজন ব্যক্তি সামাজিকভাবে সংযুক্ত থাকতে পারে, তথাপি তাদের মনে হতে পারে যে তারা একা, অথবা তাদের সম্পর্কগুলির গভীরতা বা মান কমে গেছে। একাকিত্বের কারণে ব্যক্তি নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে করতে পারেন এবং এই অবস্থার কারণে আরও হতাশার অনুভূতি বাড়তে পারে।

এই অনুভূতিগুলি মোকাবেলা করতে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের সাহায্য গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক থেরাপি, কাউন্সেলিং এবং প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহার করে নিরাপত্তাহীনতা এবং একাকিত্বের মোকাবেলা করা সম্ভব।

■ মৃত্যুশোক :
হল সেই মানসিক অবস্থা যা কোনও প্রিয়জনের মৃত্যুর পর অনুভূত হয়। এটি সাধারণত দুঃখ, হতাশা, এবং অবসাদের সাথে সম্পর্কিত। মৃত্যুশোকের প্রতিক্রিয়া বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন অশ্রুপাত, মানসিক শূন্যতা, এবং নিজের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে বিভ্রান্তি।

উভয় ক্ষেত্রেই, পেশাদার মনোচিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। থেরাপি, সাপোর্ট গ্রুপ, এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে মানুষের সুস্থতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

■ ডিপ্রেশন বংশগত প্রভাব কেন :
ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা একটি জটিল মানসিক অবস্থার জন্য যে বেশ কিছু কারণ দায়ী থাকে, তার মধ্যে একটি হলো বংশগত প্রভাব। বংশগত প্রভাব বলতে বোঝায় যে এই অবস্থাটি পরিবারের মধ্যে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এটি অনেক সময় জেনেটিক অথবা পারিবারিক চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ, যদি পরিবারের অন্য সদস্যরা ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে থাকেন, তবে একে অপরের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়তে পারে। জিনের মাধ্যমে এই প্রবণতা বংশপরম্পরায় চলে আসতে পারে, তবে এটি শুধুমাত্র জেনেটিক প্রভাব নয়, পারিবারিক পরিবেশ এবং জীবনধারার প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরিবারের মধ্যে মানসিক চাপ, আবেগিক সহায়তা না পাওয়া, অথবা নেতিবাচক পরিবেশের কারণেও এই প্রভাব দেখা দিতে পারে। এসব কারণ একত্রে কাজ করলে, একজন ব্যক্তি ডিপ্রেশনের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

সার্বিকভাবে, ডিপ্রেশন একটি জটিল অবস্থার ফলাফল এবং এটি নানা কারণে হতে পারে, যার মধ্যে বংশগত প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

■ জীবন পরিবর্তনের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন সাধন করতে হলে :

স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
বিষদ পরিকল্পনা তৈরি করুন।
নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং পুরনো অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।
নিজেকে প্রেরণা দিন এবং অগ্রগতি মূল্যায়ন করুন।
পরিবর্তন গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকুন।

■ ডিপ্রেশন কী কোন বড় রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :

ডিপ্রেশন অনেক সময় বড় ধরনের রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ক্রনিক রোগ যেমন ক্যান্সার বা হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে। এছাড়া, স্টেরয়েড বা কিছু ওষুধের ব্যবহারও ডিপ্রেশন সৃষ্টি করতে পারে। এভাবে, মূল রোগের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা এই মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

■ বিষন্নতায় ভুগছেন কিনা তা বুঝতে কয়েকটি লক্ষণ লক্ষ্য করুন :

১. দীর্ঘকালীন মন খারাপ : বেশিরভাগ সময় দুঃখিত বা হতাশ বোধ করা।

২. আগ্রহের অভাব : আগের ভালবাসার কাজগুলোতে আগ্রহ হারানো।

৩. শারীরিক পরিবর্তন : অস্বাভাবিক ক্ষুধা, ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি, ঘুমের সমস্যা।

৪. আত্মসম্মানহীনতা: নিজের মূল্য নিয়ে সন্দেহ, আত্মহত্যার চিন্তা।

এই লক্ষণগুলো দীর্ঘমেয়াদী হলে বা আপনার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

■ ডিপ্রেশন নের সময় কাজের প্রতি অনীহা :

ডিপ্রেশনের সময় কাজের প্রতি অনীহা হওয়া সাধারণ বিষয়। এটি মানসিক ও শারীরিক শক্তির অভাবের কারণে ঘটে। ডিপ্রেশন ব্যক্তি সাধারণত মানসিকভাবে ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন এবং হতাশ থাকে, যা কাজের প্রতি আগ্রহ বা উদ্যম কমিয়ে দেয়। এই অবস্থায়, কাজের প্রতি অনীহা, মনোযোগের অভাব, এবং নিজের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ বেড়ে যায়।

■ ডিপ্রেশনের সময় খাদ্যের পরিবর্তন :

ডিপ্রেশনের সময় খাদ্যের পরিবর্তন ঘটে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে। এতে কিছু মানুষ অতিরিক্ত খায় বা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যা শরীরের পুষ্টি ও শক্তির ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে।

■ ডিপ্রেশনের সময় সব কিছু মনযোগের অভাব :

ডিপ্রেশনের সময় মনযোগের অভাবের কারণ হলো, মস্তিষ্কের স্নায়বিক কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয় এবং এর ফলে কগনিটিভ ফাংশন যেমন মনোযোগ ও স্মৃতি প্রভাবিত হয়। এছাড়া, হতাশা ও উদ্বেগের কারণে মস্তিষ্কের রিসোর্সগুলো অন্য দিকে চলে যায়, যা মনোযোগের অভাব সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত মেজাজের অবনতি এবং জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার ফলস্বরূপ ঘটে।

■ ডিপ্রেশনের সময় সব বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দরকার :
ডিপ্রেশনের সময় নেতিবাচক মনোভাব একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, কিন্তু এটি পরিস্থিতির উন্নতি না করেও সমস্যা বাড়াতে পারে। নেতিবাচক চিন্তা জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অস্বস্তি ও হতাশার জন্ম দেয়। তাই, পেশাদার সাহায্য নেওয়া, ইতিবাচক চিন্তার দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং সঠিক কৌশল গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

■ ডিপ্রেশনের সময় মাথাব্যাথা ও গ্যাস্টিকের সমস্যা কেন হয় :
ডিপ্রেশনের সময় মাথাব্যাথা ও গ্যাস্টিকের সমস্যা হতে পারে কারণ এই অবস্থায় শরীরের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা স্নায়ু ও পেটের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস এবং উদ্বিগ্নতা মাথাব্যাথা এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, ডিপ্রেশন কখনো কখনো অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের সাথে যুক্ত থাকে, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকে বাড়াতে পারে।

■ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ কী
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত ঔষধ ব্যবহৃত হয় :

১. অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস : যেমন সেলেকটিভ সেরোটোনিন রিইপটেক ইনহিবিটরস (SSRI), সেরোটোনিন-নরএপিনেফ্রিন রিইপটেক ইনহিবিটরস (SNRI), ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (TCA) ইত্যাদি।

২. অ্যান্টি-অ্যানজাইটি ঔষধ : যেমন বেনজোডিয়াজেপাইনস।

উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচনের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

■ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য বেশ কিছু কার্যকরী উপায় :

১. মানসিক স্বাস্থ্যপেশাদারের সাহায্য নেয়া : একজন মনোবিদ বা মনোচিকিৎসকের সহায়তা গ্রহণ করা।

২. মেডিকেশন : প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ঔষধ ব্যবহার করা।

৩. ব্যায়াম : নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা, যা মনোসংযোগ বাড়াতে সহায়ক।

৪. নিয়মিত ঘুম : পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করা।
৫. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসন: পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল কমানো।

৬. সামাজিক সম্পর্ক : পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং সমর্থন পাওয়া।

৭. মনোযোগী কৌশল : মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম, বা অন্যান্য স্ট্রেস রিলিফ কৌশল ব্যবহার করা।

ডিপ্রেশনের সময় জীবনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা কঠিন হতে পারে, কিন্তু এটি সহায়ক হতে পারে। লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সেগুলির দিকে অগ্রসর হওয়া মানসিক চাপ কমাতে এবং সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। ছোট, বাস্তবসম্মত লক্ষ্য তৈরি করুন এবং ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। নিজের প্রতি সহানুভূতি রাখুন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য গ্রহণ করুন। লক্ষ্য অর্জন প্রক্রিয়ায় আপনার আত্মবিশ্বাস এবং মনোবল বৃদ্ধি পেতে পারে।

■ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির দোয়া ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার দোয়া-

اللهم إني أعوذ بك من الهم وَالْحَزْنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُودُ بك من البخل والجبن، وأعوذ بك من ضلع الدين وغلبة الرجال

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল
হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।

অতিরিক্ত পরিমাণে চিন্তা এবং হতাশা থেকে কিন্তু ডিপ্রেশনে চলে যায় মানুষ যার ফলে কিন্তু ডিপ্রেশনে যাওয়া মানুষ একপর্যায়ে পাগলও হয়ে যেতে পারে এবং তার নানা রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয়।

■ কিছু ইসলামিক উক্তি ডিপ্রেশন নিয়ে :

আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার সেবকদের উপর কোনো সমস্যা করি না বা কোনো বল প্রয়োগ করি না যা তারা সহ্য করতে পারে না।
(হাদিস)

ইমান আর ডিপ্রেশনের মধ্যে যুদ্ধ করো, ইমানের সাহায্যে ডিপ্রেশন পরাজিত হয়ে যায়।”
মানসিক চাপের সময় মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তাকদিরর উপর ছেড়ে দেয়ায় রয়েছে মানসিক প্রশান্তি।

■ আল্লাহ তাআলা বলেন—

‘আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস: আয়াত ১০৭)

পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি ইহা সংঘটিত করার আগেই ইহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।’ (সুরা হাদিদ: আয়াত: ২২)

এ বিষয়ে কোরআন কারিমের ঘোষণা, ‘আমাদের পালনকর্তা বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব”।'(সুরা ৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)

তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা হতাশ হয়ো না এবং দুঃখ কোরো না, যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরা জয়ী হবেই।’ (সুরা ৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯)

কুরআনের বেশ কয়েকটি আয়াত স্ট্রেস এবং উদ্বেগ মোকাবেলার জন্য সান্ত্বনা এবং নির্দেশনা প্রদান করে। সূরা আর-রাদ (১৩:২৮) বলে,
“নিশ্চয়ই, আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্তি পায়,” আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কষ্টের সময়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রদান করতে পারে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য উপরে ও নিচের পয়েন্টগুলো সহায়ক হতে পারে :-

■ ডিপ্রেশনে সময় লক্ষ নিয়ে কাজ করা চিন্তা :

ডিপ্রেশনে থাকলে সময় ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হতে পারে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হতে পারে। প্রথমত, ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেগুলো অর্জন করতে চেষ্টা করুন। দ্বিতীয়ত, রুটিন তৈরি করুন এবং নিয়মিত কাজের প্রতি মনোযোগ দিন। তৃতীয়ত, বিশ্রাম ও শিথিলতার জন্য সময় বের করুন। এসব কৌশল আপনাকে সামনের দিকে এগোতে সাহায্য করতে পারে এবং ডিপ্রেশনের প্রভাব কমাতে পারে।

■ ডিপ্রেশনের সময় আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে সময় কাটানো :
একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। এটি আপনার মনকে প্রশান্তি দিতে পারে এবং অবসাদ কমাতে সহায়তা করতে পারে। নিজের পছন্দের হবি বা শখ, যেমন বই পড়া, মিউজিক শোনা, অথবা প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটানো আপনাকে মানসিক শান্তি প্রদান করতে পারে। এই ধরনের কার্যকলাপ আপনাকে ভালো লাগার অনুভূতি এনে দেয় এবং ডিপ্রেশনের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

■ ডিপ্রেশনের সময় সাইকোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করা :
ডিপ্রেশনের সময় সাইকোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। সাইকোলজিস্ট আপনার অবস্থার বিস্তারিত মূল্যায়ন করেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করেন। তারা আপনার চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণের উন্নতির জন্য থেরাপি বা কাউন্সেলিং প্রদান করতে পারেন, যা আপনাকে সুস্থতার পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।

■ ডিপ্রেশনের সময় আল্লাহ কে বেশি বেশি স্মরণ করা :

ডিপ্রেশনের সময়ে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা মানসিক শান্তি ও শক্তি প্রদান করতে পারে। প্রার্থনা, জিকির, এবং ধর্মীয় অনুশীলন আপনার মনকে প্রশান্তি এনে দিতে পারে এবং মনে আশার আলো জাগাতে সাহায্য করে। আল্লাহর স্মরণ আপনার অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং নেতিবাচক অনুভূতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করবে ইনশাআল্লাহ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102