শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৫ অপরাহ্ন

সিলেটের বিশ্বনাথের প্রবীণ শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী আলহাজ্ব আব্দুল হান্নানের জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩৫ Time View

মিজানুর রহমান মিজান, বিশ্বনাথ সিলেট থেকে:

সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা, সমাজসেবী, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের রিলিফ কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান, শিক্ষানুরাগী হাজী মো. আব্দুল হান্নানের দাফন গতকাল শনিবার (১২/১০/২৪খ্রি:) বাদ আছর মরহুমের গ্রামের বাড়ী বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের পুত্র লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্য তরুণ প্রবাসী কমিউনিটি নেতা আব্দুল বাছিত রফি এবং দোয়া পরিচালনা করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফিজ সাহিদুল ইসলাম।
জানাযার পূর্বে স্মৃতিচারণ মূলক বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মো. আব্দুল হান্নান, ছহিফাগঞ্জ এস.ডি মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুর রউফ, বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সাবেক সদস্য কবির আহমদ কুব্বার ও শিক্ষক আবুল বসর মোহাম্মদ ফারুক।
জানাযার নামাজে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা জামায়াতের অফিস সম্পাদক মো. আব্দুল কাইয়ুম, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ময়নুল হক, বিশ্বনাথ উপজেলা জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ
নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশ আলী গণি, সাবেক চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তাক আহমদ রুহেল, ময়নুল ইসলাম, উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন,বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের ট্রাস্টী,মোঃ কদর উদ্দিন, সমাজসেবী ফারুক আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা জামায়াতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাস্টার বাবুল মিয়া, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব সভাপতি রফিকুল ইসলাম জুবায়ের, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুর রবসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলে ২ কন্যাসহ নাতী-নাতনি, আত্বীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
প্রসঙ্গত: গত কয়েকদিন ধরে তিনি অসুস্ততা বোধ করলে তাকে সিলেট নগরের রাগিব-রাবেয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৪ বছর বয়সে শুক্রবার রাতে পৃথিবীর সকল মায়া মমতা ছেড়ে পরপারে পাড়ী জমান বিশ্বনাথের এই মহৎপ্রাণ শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব । মহান আল্লাহ্ তায়ালা যেন তার এই বান্দার সমস্ত ভূলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এবং পরিবারের সকলকে এই শোক সহিবার তওফিক দান করেন । আমিন ।।

খাজাঞ্চী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত হোসেন পুর একটি গ্রাম।যে গ্রামে ১৯৪০ সালের সাত ডিসেম্বর পিতামৃত আবরু মিয়া ও মাতামৃত পাখি বিবি দম্পতির কোল আলোকিত করে মোল্লাবাড়ি খ্যাত বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান আলহাজ আব্দুল হান্নান।অত্যন্ত আদর যত্নে শিশুকাল অতিবাহিত করেন নিজ বাড়িতে পারিবারিক সুদৃঢ বন্ধনের মধ্য দিয়ে।কিন্তু ১৯৪৭ সালের পূর্বে অত্রাঞ্চলের মানুষ লন্ডন, আমেরিকার মত চাকুরী, অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিমিত্তে চলে যেতেন কলিকাতা।তখন গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ছিল কলিকাতার অপর নাম কালিমাটি।কালিমাটি থেকে কেহ ফিরে আসলে তিনিকে দেখার জন্য মানুষের ভীড় লেগে যেত। চাকুরী সুত্রে জনাব আব্দুল হান্নানের চাচা হাজী আছলম আলী ছিলেন কলিকাতার বাসিন্দা।তাই আদরের ভাতিজা আব্দুল হান্নানকে কলিকাতা নিয়ে যান চাচা আছলম আলী লেখাপড়া করানোর জন্য।সেখানে কলিকাতার জামসেদ পুর জেলার গুলমুরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন।প্রায় দু’বৎসর আব্দুল হান্নান সেখানে থেকে চলে আসেন নিজ বাড়িতে।অত:পর তিনি ভর্তি হন স্থানীয় ফুলচন্ডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।পাঠশালার লেখাপড়া সমাপন করে তিনি কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করেন।এক সময়ে তিনি ব্যবসাকে ভালবেসে মুফতির বাজারে রাইছ মিল স্থাপন করেন।কিছুদিন তা পরিচালনা করে ১৯৭০ সালে সিলেট শহরের হাছন মার্কেটে ব্যবসা শুরু করেন।সে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তিনির ভাই কর্তৃক দীর্ঘদিন হয়েছে পরিচালিত।বর্তমানে ভাই অসুস্থতাজনিত কারনে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।
হান্নান সাহেবের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া কম হলেও তিনি স্বশিক্ষিত।হোসেন পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে এ পরিবার থেকে ভুমি প্রদান করেন।তাছাড়া আধুনিক শিক্ষার সাথে সমন্বয় রেখে সৎ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষে এবং উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৪ সালের ১ লা জানুয়ারি বর্তমান ভূমি দাতা আলহাজ্ব আব্দুল হান্নানের নিজ বাড়িতে খাজাঞ্চি একাডেমীর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।পরবর্তীতে উক্ত প্রতিষ্টান ২০০৫ সালে তার নিজস্ব ভুমিতে এসে শিক্ষাকার্য পরিচালনা করে আজ অবধি সফলতার সাথে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছেন।২০০৯ খ্রীষ্টাব্দে খাজাঞ্চী একাডেমী জুনিয়র স্কুলের মর্যাদা লাভে সক্ষম হয় লেখাপড়ার মানোন্নয়ন ও প্রতি বৎসর কৃতিত্ব পূর্ণ ফলাফলের কারনে।২০১২ সালে প্রথম এসএসসি পরিক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা ও ভুমিদাতা জনাব আব্দুল হান্নানের একক উদ্যোগ ও উদ্যমে অর্থ্যাৎ অর্থায়নে ৫০জন গরিব, অসহায় ছাত্র-ছাত্রী সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়ার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।
২০১২ সালে প্রথম এসএসসি পরিক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জিত হয়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত সবক’টি পরিক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জন করে দেশ বিদেশে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে খাজাঞ্চি একাডেমি এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়।স্কুলটি কলেজে উন্নীত হলে এলাকার শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখতে পারবে বলে বিজ্ঞজনদের ভাবনা।সুতরাং কলেজে উন্নীত করতে জনাব আব্দুল হান্নান ও তিনির বড় ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল শহিদ আপ্রাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।তাছাড়া এ পরিবার থেকে বিভিন্ন সময় গরীব ও অসহায় মানুষ বিভিন্ন প্রকার সাহায্য, সহযোগিতা পেয়ে থাকেন।তিনির প্রবাসী ছেলেরা শিক্ষানুরাগী হয়ে গড়ে উঠেছেন পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে।যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমরা পেয়েছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করার মধ্য দিয়ে।অপরদিকে তিনির প্রতিষ্ঠিত খাজাঞ্চী একাডেমী এন্ড উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন নামকরণের ক্ষেত্রে জনাব আব্দুল হান্নান মহৎ ও উদার হৃদয়ের আরেকটি পরিচয় তিনির নামে বা কারো নামে নামকরণ না করে তিনি খাজাঞ্চী ইউনিয়নের নামে নামকরণ করে তা প্রতিষ্ঠিত করতে। তিনি পারতেন ব্যক্তি বা অন্য কোন নামকরণ করতে। অত্যন্ত সহজ, সরল, মহৎ, সৎ, উদার, নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। আমি তিনির সম্পর্কে একটু অধিক সময় ও সান্নিধ্য পেয়েছি বিভিন্ন রুপে পরিচিত থাকার ফলে।। কারন আমি যখন উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলাম। তখন তিনির বড় ছেলে জনাব আব্দুস শহিদ ছিলেন সে স্কুলের ছাত্র। যে কারনে তিনি স্কুলে যেতেন বিভিন্ন সময়ে।অপরদিকে আমি মদন মোহন কলেজে লেখাপড়া করতে ট্রেন যোগে যেতাম প্রতিদিন খাজাঞ্চী স্টেশন থেকে যাত্রী হয়ে। সিলেট যেতে এক মাত্র রাস্তা ছিল সিলেট-ছাতক রেললাইনের ট্রেন।প্রায়ই তিনিকে পেতাম ট্রেন যাত্রী রুপে।তিনির সান্নিধ্য এবং দুর থেকে দেখার সুমিষ্ট ফলাফল অত্যন্ত হৃদয়জ অনুভুতিপূর্ণ ছিল এবং রয়েছে।আমি বরাবরই তিনির আচার আচরণে পেয়েছি হৃদ্যতা,প্রীতি,স্নেহ, আদর ও ভালবাসার অতুলনীয়তা।
আমি মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনবাক্যে দোয়া করি বিনয়াবনত চিত্তে আল্লাহ যেন তিনিকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন এবং পরিবারের সকল সদস্যকে শোক সহিবার শক্তি দান করেন। সেই সাথে তিনির পরিবার পরিজনকেও আল্লাহ সুখ, শান্তিতে রাখুন এবং শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে খাজাঞ্চীবাসীর আলোকবর্তিকা রুপে চির জাগরুক থাকুক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102