কলমে: সুফিয়া ডেইজি
উপমার গল্পের বই পড়তে খুব ভালো লাগে।সুযোগ পেলেই সুয়ে সুয়ে বই পড়ে। উপমার একটা বড় ভাই আছে নাম উল্লাস।উপমার জন্মের সময় উল্লাস ক্লাস সেভেনে পড়তো। উল্লাসের ভালো লাগা বলতে বই পড়া আর কার্টুন দেখা। সেই সুবাদে উপমার বেড়ে ওঠা কার্টুন আর বইয়ের সাথে।উপমা ছয়মাস বয়স থেকে মনোযোগ দিয়ে কার্টুন দেখতো। এমনকি ৪ বছর বয়সে বাংলার পাশাপাশি অনর্গল হিন্দি বলতো। উপমা অনেক পরে বুঝেছে যে এটা হিন্দি ভাষা ইংরেজি নয়।দুজনেরই একই অভ্যেস বইটা পড়া যতক্ষণ শেষ হবে না তাদের অন্য কাজে ধ্যান নেই। উপমার যখন ৬ বছর বয়স তখন বাসায় যত ছোটদের গল্পের বই আছে পড়া শেষ। তখন ভাইকে জিজ্ঞেস করলো ভাই এবার কোন বই পড়বো।ভাই বললো হাত কাটা রবিন আর আমার বন্ধু রাশেদ পড়ো।তখন বই পড়তে পড়তে হঠাৎ রাশেদের জন্য মায়া লেগে যায় উপমার।এমন সময় কান্না আসা উচিত কিন্তু হঠাৎ বুকের ব্যথা উঠে শ্বাস বন্ধ হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।ডাক্তার জানান উপমার বুকে ছোট একটা সমস্যা আছে তাকে কখনো কষ্ট পাবে এমন কিছু বলা বা পড়তে দেয়া যাবেনা। ১৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত এই বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। ভাই সব সময় বয়স অনুযায়ী বুঝে গল্পের বই পড়তে দেন কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে আরও বেশি সাবধান হয়ে গেলো ।তখন থেকে ভাই টেলিভিশন আর ডেস্কটপে বিভিন্ন রকম হিন্দি,বাংলা আর ইংরেজি কার্টুন দেখতে দেন। বছর দুই পরে শুরু হয় মোবাইলে বই পড়া আর অফিসিয়াল ছোট ছোট কাজ করা।মেইল এড্রেসসহ বিভিন্ন একাউন্ট খোলা উপমার কাছে একটা সাধারণ কাজে পরিনত হলো। এই মোবাইল উপমার প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠলো। খাওয়া নাওয়া সব ভুলে বিছানা আর মোবাইল হয়ে উঠলো তার জীবনের একমাত্র সঙ্গি।যখন ক্লাস সিক্সে তখন থেকে পুরোপুরি আসক্ত। এখন তার ইচ্ছে কোডিং শিখবে কিন্তু কোনভাবেই ভালো কোডিং শেখার পরিবেশ পাচ্ছে না।উপমার মধ্যে বয়স অনুযায়ী জানার পরিধিটা কম নয় কারণ তার মা হচ্ছে মোবাইল এবং প্রিয় মামা গুগল । উপমার মনে প্রশ্ন উদয় হবার সাথে সাথে জেনে যায় সব তার একমাত্র কারণ প্রিয় বন্ধু গুগল মামা তাকে দ্রুত ই সব জানানোর ব্যবস্থা করে দেন।যখন ইচ্ছে তখনই সব প্রশ্নের উত্তর চোখের উপর এনে হাজির করে প্রিয় বন্ধু গুগল মামা।এজন্য উপমা অনেক কিছু ই জেনেছে কিন্তু মুশকিল অন্য জায়গায়। এই সব জানা বন্ধু কখনো নিজ থেকে উপমাকে কোনো কাজে অর্ডার করে না।শুধু উপমা যা চায় এক সেকেন্ডে তা উপমার সামনে নিয়ে আনে।এজন্য উপমার বন্ধুর চেয়ে বেশি প্রয়োজন নিজের শরীর স্বাস্থ ঠিক রাখা সেটা উপমা মানতে চায় না। উপমা ভুলে যায় অন্যদের সাথে ভালো করে কথা বলা,ভালো ব্যবহার, নিজের ভদ্রতা,সখ্যতা এমন কি কোনো বিষয় গুছিয়ে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ।উপমার মা একজন কর্ম ব্যস্ত মহিলা যে ইচ্ছে করলে ও সারাদিন সময় দিতে পারে না
আর যখন বাসায় ফিরে শোনে উপমা সারাদিন কিছু খায় নাই এমন কি তার নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে কোনো রকম বিছানায় নেতিয়ে পড়ে মোবাইলে ধ্যানমগ্ন থাকে অথচ তার হোম ওয়ার্ক গুলো সম্পুর্ণ করা হয় নাই সেদিকটা প্রায়ই ভুলে যায়, কখনো কখনো গভীর রাতে সেগুলো করে । এমন আচরণ দেখে উপমার মা হতাশ।একদিন বাসায় ফিরে দেখলো উপমার অনেক জ্বর গলা কান দাঁত ব্যথা।ডাক্তার দেখানো হলো যথারীতি মেডিসিন চললো কিন্তু খাওয়ার ব্যাপারে তেমন উন্নতি হলো না। একটা সময় খানিকটা সুস্থ হলো তখন মা ঠিক করলো তাকে আর নিজে পড়াবেন না কয়েক টা প্রাইভেট দিয়ে দিলে ব্যস্ত সময় কাটবে তাহলে নাওয়া খাওয়া ঠিক মতো চলবে কিন্তু কোথাকার কি তার! কোনো মতে প্রাইভেট যাওয়া হোমওয়ার্ক করা আর মোবাইলে স্ক্রল করা এর বাইরে নাওয়া খাওয়া টা হাতের বাইরে ই রয়ে গেলো।
স্কুল প্রাইভেট এসব দিয়ে কিছুটা পড়াশোনায় আগ্রহী করা গেলেও অসুস্থতার জন্য মাসের অর্ধেক সময় বাসায় পড়ে থাকে উপমা। মোবাইল আসক্তি দিয়ে ইংরেজি মুভি,রিলস, কার্টুন দেখে ইংরেজি স্পিকিং টা নিজের মতো করে আয়ত্ত্ব করে নিলেও অসুস্থতাটা ও আপন করেছে ভীষণভাবে যা উপমার জন্য শুধু শারীরিক হুমকি নয় মানসিক প্রতিবন্ধকতা ও বটে। সারাক্ষণ নিজের মধ্যে থাকার কারণে উপমার নেই ধৈর্য্য নেই বাস্তব মোকাবিলা করার মতো সাহস।এসব জ্ঞান দিয়ে আবেগ তৈরি করা যায় বিবেককে শক্তিশালী করা যায় না।এতো ভালো জ্ঞান গুণ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে তুলে ধরার মতো শারীরিক ও মানসিক শক্তি হারিয়েছে এই মোবাইলের মাধ্যমে ই।সুস্থতা না থাকলে কি হবে এই জ্ঞান? ঘরে ঘরে হাজারো উপমা বাস্তবের জটিলতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখার মতো সাহস ও ধৈর্য্য ছাড়া ই শুধু জ্ঞান নিয়ে বড় হচ্ছে।