এম.কে.জাকির হোসাইন বিপ্লবী
গভীর রজনী,মনটা ভিশন খারাপ। নিদ্রাহীনা দুটি চোখ,মেঘলা আকাশ। নিরবতায় চেয়ে গেছে বসুন্ধরা। হাওয়ায় ভেসে আসছে,ব্যাথার সুর। কিন্তু কেন? নিজের কাছেই নিজে প্রশ্নবিদ্ধ হলাম। আরও গভীর ভাবে অনুভব করতে চাইলাম,বাতাসে ভেসে আসা করুন আর্ত- চিৎকারটাকে। বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ বন্যার মোকাবেলা করছে। আর সে বন্যার্তদের আর্ত- চিৎকারের ধ্বনি প্রতিধ্বনি বাতাসে ভেসে আসছে। বাংলার চতুর্দিকে ভারী হয়ে আসছে বাতাস। কেনো জানি মনে হচ্ছে বাতাসে মিশে আছে বন্যার্তদের চোখের পানি। যে চোখের পানি ডেকে বলছে, একটি স্বাধীন দেশে আজ আমরা পানিবন্দী জীবনযাপন করছি। যেখানে সারা দেশ স্বাধীনতার আনন্দে মুখরিত হওয়ার কথা, সেখানে সারা দেশের মানুষ বন্যার্তদের আর্ত-চিৎকার শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু কেনো?এখন কি বন্যা হওয়ার মত কোনো বিষয় বাংলাদেশে আছে?এরকম হাজার প্রশ্ন নিত্যদিনেই হৃদয়ে জাগ্রত হয়। আমরা জানি বাংলাদেশে প্রধানত ঋতুর পরিবর্তনে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেটা আবার এরকম বন্যা নয়, যা বর্তমানে হচ্ছে। বাংলাদেশ মূলত কঠিন বন্যার মোকাবেলা তখনই করে, যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে বিভিন্ন বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে পানি ছাড়া হয়। আর তখন ভানবাসী মানুষগুলো সেই বন্যার মোকাবেলা করে থাকে। তবে আমার এই বয়সে আমি পরিকল্পিত তিনবার বন্যার মোকাবেলা করতে দেখেছি।
২০১৬ সালে হঠাৎ করে সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চল চৈত্র মাসে পানিতে তলিয়ে যাওয়া, এটা ছিলো ভারতের অন্যতম পরিকল্পনা। যা কেউ বুঝতেও পারেনি। কারণ পানির পরিমাণ ছিল অল্প, আর সেই পানির ধাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে সরাসরি হাওরে প্রবেশ করে। যার কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ধান পচে যাওয়ার ফলে পানি নষ্ট হয়ে যায়। মাছগুলা মরতে শুরু করে। এদেশের মানুষ সেই বন্যার প্রভাব ততটা অনুভব করতে পারে নাই, কারণ বর্ষাকালে পানির পরিমাণ ততটা উর্বর হয়নি। যার কারণে সবাই মনে করেছিলো,অতি বৃষ্টির কারণে, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চল পানিতে তলিয়ে এগিয়েছে। দ্বিতীয়ত ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যার মোকাবেলা করতে হয়েছে সিলেটবাসীকে। যেখানে ভারতের অবদান ছিলো মানেই ছিলো।অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারা হয়ে, বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে জীবন কাটিয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বন্যার্তদের স্বার্থে। সিলেটবাসীর জন্য তখন জামায়াত ইসলাম থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছিল। এবং সংগীতশিল্পী তাসরিফসহ আরো অনেক মানবিক কর্মীরা নিজ অর্থায়নে সেই বন্যার মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। পরবর্তী ২০২৪ সাল যা বর্তমান চলমান। নোয়াখালী ফেনী কুমিল্লা সহ প্রায় ১৫ টি জেলায় বন্যার প্রভাব বিস্তার হয়েছে। যার কারণে কোটি কোটি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর সেই বন্যাটা হয়েছে শুধু ভারতের সুপরিকল্পিতভাবে জরুরী বার্তা না দিয়ে পানি ছেড়ে দেওয়া। আর সেই কাজটি ভারত করেছে, স্বৈরাচার সরকারের পতনের কারণে। কারণ ভারত চেয়েছিলো বাংলাদেশে তাদের রাজত্ব বিস্তার করতে। স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে তাদের সকল পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের উপর পানিকে অস্ত্র বানিয়ে আঘাত এনেছে। আর যার কারণে বানভাসি মানুষদের আর্ত-চিৎকারে মনে হচ্ছে, আকাশে উত্তপ্ত সূর্যের মাঝেও যেনো অমানিশার ছোয়া পড়ে রয়েছে। ওমানের সেই ডেকেছে বসুন্ধরা, চারিদিকে চাপা কান্নার প্রতিধ্বনি হয়ে বাংলার বাতাসে ভাসছে। হাজারো লাশ বন্যার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে, গবাদিপশু গুলো অশ্রুসিক্ত নয়নে চাপা কান্না বুকে নিয়ে পানিতে তুলে যাচ্ছে। নিশংসভাবে হচ্ছে বোবা প্রাণীদের মৃত্যু। অনেক বাবা সন্তানের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে। অনেক মা সন্তান হারানোর বেঁদনা নিয়ে পাগলের মত বসে আছে। অনেক সন্তান বৃদ্ধ বাবার লাশ দাফন করতে গিয়ে, চিৎকার করে কাঁদছে। কারণ লাশ দাফনের মত কোন জায়গা নেই। অনেক বোন বাঁচার জন্য কাকুতি মিনতি করছি। অনেক বন্ধু, বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে, বন্যার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। এটা কোন কাল্পনিক গল্প ইতিহাস নয়। এই কথাগুলো মিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা বাস্তব ইতিহাস। যেই ইতিহাস হৃদয়ের রক্তক্ষরণ করে, যে কথা লিখতে গিয়ে গা শিউরে উঠে, প্রকম্পিত হয় হৃদয়। থেমে যায় কলম, স্তব্ধ হয়ে যায় মুখের ভাষা। ভাবনা চলে যায় গভীরতায়, যেখানে রয়েছে শুধু দুখীনি মায়ের বুক ফাটা কান্না, আর বাবার সন্তান হারানোর বেদনায় বোবা হয়ে বসে থাকা। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের পৈশাচিকতা,বাংলাদেশের বন্যাকে কেন্দ্র করে মিডিয়াতে উপহাস বার্তা। তীব্র নিন্দা জানাই ভারতের এই নিশংস নরকিয় হিংস্র পরিকল্পনাকে। বর্তমান বন্যার ভয়াবহতা নিয়ে কলমের ভাষায় প্রকাশ করে, শেষ করার মত কোনো দিকনির্দেশনা আমার কাছে নেই। কারণ আমার কাছে মনে হয়, বর্তমান বন্যার নিশংস ভয়াবহতার ইতিহাস, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ব্যাথার ইতিহাস। আর যেই ইতিহাস লিখতে গিয়ে, কলমের কালি শেষ হবে, কিন্তু মনের ভাব কখনো শেষ হবে না। অতএব বাস্তবতার আলোকে আমার সংক্ষিপ্ত আলোচনা, কলমের ভাষায় প্রাবন্ধিক নিয়মে প্রকাশ করে আমি করে, আমি আমার গল্পের সমাপ্ত করছি।