মোঃ আজহারুল ইসলাম (অপুর্ব)
গাঁয়ের ছোট্ট এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতেন জালাল উদ্দীন। স্কুলের চারদিকে সবুজে ঘেরা, পাখির কলরবে মুখরিত। ছোট্ট ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন উৎসাহ নিয়ে আসত সেখানে। জালাল উদ্দীন ছিলেন তাদের প্রিয় শিক্ষক, যিনি ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও জীবনের নানা দিক শেখাতেন।
একদিন স্কুলে নতুন এক ছেলেকে ভর্তি করা হলো। নাম তার সোহেল। ছেলেটির বাবা-মা কিছুদিন আগে এক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন, ফলে সে ছিল নিঃসঙ্গ ও বিষণ্ণ। জালাল উদ্দীন সোহেলকে দেখে তার দুঃখ বুঝতে পারলেন। সোহেলকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতে শুরু করলেন। প্রতিদিন ক্লাস শেষে তাকে বাড়ির পথে এগিয়ে দিতেন এবং তার সঙ্গে গল্প করতেন।
একদিন জালাল উদ্দীন সোহেলকে বললেন, “জানো সোহেল, গাছের মতো হতে হবে আমাদের। গাছ যেমন নিজের জন্য কিছু রাখে না, সবটা অন্যের জন্য দেয়, তেমনই আমাদেরও অন্যের জন্য কিছু করতে হবে।” সোহেল সেই কথাগুলো মনে গেঁথে রাখল। ধীরে ধীরে তার মনোবল বাড়তে লাগল, এবং সে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে উঠল।
একদিন স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলো। সোহেল প্রথম স্থান অর্জন করল। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সবার সামনে দাঁড়িয়ে সে বলল, “আজ আমার এই সাফল্যের পেছনে যিনি আছেন, তিনি হলেন আমার শিক্ষক, জালাল উদ্দীন স্যার। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে জীবনে বড় হতে হয়।”
জালাল উদ্দীন দাঁড়িয়ে শুনছিলেন। তার চোখে জল, কিন্তু মুখে এক প্রশান্তির হাসি। সেই মুহূর্তে তিনি উপলব্ধি করলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে তার সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো ছাত্রদের সাফল্য ও ভালোবাসা। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে তার আসল মর্যাদা।
সেই দিন থেকে সোহেল শুধু জালাল উদ্দীনের প্রিয় ছাত্র নয়, পুরো গ্রামের কাছে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার একজন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠল।
লেখক: পরিচিতি
মোঃ আজহারুল ইসলাম (অপুর্ব) লালমনিরহাট জেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের পূর্বকালমাটি গ্রামের একজন উদীয়মান লেখক এবং এইচএসসি পর্যায়ের ছাত্র।তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২০০৭ সালের ৩ মে। তার বাবার নাম মোঃ মনছুর আলী এবং মায়ের নাম মোছাঃ আমিনা বেগম।
অপুর্ব মূলত অনুগল্প, কবিতা, ছড়া, গল্প ও উপন্যাস লেখায় আগ্রহী। তার লেখালেখির যাত্রা শুরু হয় প্রিয়তমা সুমাইয়া আক্তার সাফা এর অনুপ্রেরণায়। তার লেখায় সৃজনশীলতার ছোঁয়া ও আবেগের গভীরতা প্রতিফলিত হয়, যা পাঠকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।