আতিকুল হা-মীম; আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
অর্থ আত্মসাৎ নিয়ে আনোয়ারা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা একে অন্যের বিরুদ্ধে দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ করে আনোয়ারায় এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। দোষারোপ -পাল্টা দোষারোপ করে বিভক্ত হয়ে গেছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় অধ্যক্ষ ছুটির আবেদন করে ছুটিতে গিয়েছেন বলে ঘোষণা দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। অন্যদিকে অনেকে আবার তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে প্রচার করেছেন তাও ফেইসবুকে। অধ্যক্ষের অভিযোগ নিষেধাজ্ঞা থাকাও সত্ত্বেও কলেজের অ্যাকাউন্ট থেকে বেতনের নামে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে কলেজ উন্নয়নের নামে টাকা হাতানোর পাল্টা অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এদিকে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরাও হয়ে পড়েছেন দ্বিধাবিভক্ত। আর তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল। অন্য দিকে অভিভাবকদের প্রশ্ন, শিক্ষকদের এসব নোংরা বিষয় প্রকাশ্যে আসার পর শিক্ষার্থীরা তাদের কাছ থেকে কি শিখছে?
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট আনোয়ারা কলেজ জাতীয়করণের লক্ষ্যে নিয়োগ, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর ও অর্থ ব্যয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর৷ পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১২ আগষ্ট আনোয়ারা কলেজ সরকারি হয়৷ কলেজ সরকারি হওয়ার পর থেকে শিক্ষকরা অ্যাকাউন্ট থেকে এমপিও বেতন নেওয়ার পাশাপাশি কলেজের অ্যাকাউন্ট থেকে বেতন, বাসা ভাড়া, চিকিৎসাসেবা, ঈদ বোনাস ইত্যাদি বাবদ টাকা উত্তোলন করে নেয়।
শিক্ষকদের পক্ষে আনোয়ারা সরকারি কলেজের উপ-অধ্যক্ষ মুহাম্মদ রিদুওয়ানুল হক বলেন, কলেজ সরকারি হওয়ার আগে শিক্ষকরা এমপিও পেতেন এবং কলেজ ফান্ড থেকেও তারা বেতন নিতেন। আর কলেজ সরকারি হওয়ার পর থেকেও শিক্ষকরা সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইনি৷ যার কারণে এমপিও পাশাপাশি আগের মতো কলেজ ফান্ড থেকে বেতন নিতেন। তবে চলতি বছরে ১৮ শিক্ষক কর্মচারী স্থায়ী সরকারিকরণ হওয়ার পর থেকে তারা আর কলেজ ফান্ড থেকে বেতন নেননি।
কলেজ অধ্যক্ষের প্রতি অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ আনোয়ারা কলেজে আসার পর থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন এবং অনুষ্ঠানের নাম করে কলেজ ফান্ডের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের টাকা তিনি কলেজ অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় তিনি শিক্ষকদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি কলেজে আসার পর কলেজে ফান্ড থেকে টাকা আত্মসাতের বিষয়টা জানতে পেরে শিক্ষকদের একাধিককবার নোটিশ প্রদান করি। কিন্তু শিক্ষকরা নোটিশের উত্তর না দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আর অনুষ্ঠান এবং উন্নয়নের নামে আমার টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই কারণ প্রতিটি কাজ উন্নয়ন কমিটির মাধ্যমে সম্পাদিত হতো। উন্নয়ন কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরের পরিপেক্ষিতে টাকা উত্তোলন করা হতো।
এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, কলেজ ফান্ড থেকে শিক্ষকদের বেতন উত্তোলনের সময় আমি প্রতিস্বাক্ষর করতাম। তাছাড়া শিক্ষকদের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তদন্ত কমিটি করতে পারতেন তবে তিনি তা করেননি। এখন বিষয়টি তাদের মন্ত্রণালয়ের বিষয়। শিক্ষকদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শিক্ষকরা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য।