শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ অপরাহ্ন

সীমান্তে চোরাচালান সিন্ডিকেট গড়ে গরু প্রতি ১ হাজার টাকা আদায় করছেন ওসি 

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২৬ Time View

আব্দুস সামাদ (লালমনিরহাট) জেলা প্রতিনিধি:  

গরু প্রতি ১ হাজার টাকা দিতে হয় হাতীবান্ধা থানার ওসি’কে। উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট, আর এই জেলার সীমান্ত ঘেষা উপজেলার নাম হাতীবান্ধা। হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব পাশে সীমান্ত ঘেষে অবস্থিত কয়েকটি ইউনিয়ন। ঠ্যাংঝাড়া, বড়খাতা, সিঙ্গীমারী, টংভাঙ্গা, গোতামারী ও ভেলাগুড়ী ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে ভারতীয় সীমান্ত। আর এই সীমান্তগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত রাতের আধারে পারাপার হচ্ছে মাদকসহ ভারতীয় গরু ও অন্যান্য চোরাচালান জাতীয় দ্রব্য। 

প্রতি রাতে মাদক ও ভাতীয় গরু চোরাকারবারির কাজ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুন নবী। শীত যত ঘনিয়ে আসছে সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারত থেকে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে পারাপার হচ্ছে শতশত ভারতীয় গরু, সাথে পার হচ্ছে মাদক। আর এসব গরু আসার কারনে লোকসান হচ্ছে বাংলাদেশী গরু খামারীদের। সেই সাথে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী সীমান্ত এলাকার কৃষক ও গরীব অসহায় মানুষের ধান সহ বিভিন্ন ধরনের ফসলী ক্ষেত। এসব গরু বাংলাদেশে অভ্যন্তরে নিরাপদে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশি ঝামেলা থেকে এরানোর জন্য হাতীবান্ধা থানা অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুন নবীকে দিতে হয় গরু প্রতি ১ হাজার টাকা। আর এ করেই প্রতি রাতে কয়েক লক্ষ টাকা হাতীয়ে নিচ্ছে হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন নবী। 

সদ্য যোগদানকৃত ওসি মাহমুদুন নবী বিএনপি’র রাজনীতির সাথে অতীতে জড়িত ছিলেন বলে জানাযায়। আর সেই ক্ষমতাকে পুঁজি করেই তিনি হয়েছেন হাতীবান্ধা থানার ওসি। থানায় যোগদানের পরেই তিনি হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। তার বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত, মাদক ও গরুর সিন্ডিকেট তৈরী করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

জানা গেছে, ভারত থেকে আসা গরু প্রতি ২৪০০ টাকা নেওয়া হয় বিভিন্ন দপ্তরের জন্য। যাতে করে নিরাপদে বিভিন্ন হাটে গরু বিক্রি করতে পারে। আর এসব টাকা কালেকশন করার জন্য ওসি মাহমুদুন নবী সীমান্ত  এলাকায় লাইনম্যান হিসেবে বিশ্বস্ত লোক নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া এলাকার খতিব, সাবেক ভেলাগুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার, আতিয়ার রহমান, ভেলাগুড়ী এলাকার মনছুরসহ আরো কয়েকজন। আর লাইনম্যানদের দেখভাল করার জন্য ওসির বিশ্বস্ত বডিগার্ড ফিরোজ কে নিয়োগ দেন ওসি। 

নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দইখাওয়া এলাকার কয়েকজন গরু চোরাকারবারী জানান, লাইনম্যানরা গরু মহাজনদের কাছ থেকে গরু প্রতি ২৪০০ টাকা নেয়,আর সেই টাকা থেকে হাতীবান্ধা থানার ওসিকে দেওয়া হয় ১ হাজার,  সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে দিতে হয় ৪ শত, গ্রাম পুলিশ ও মেম্বারকে ১’শ,  সাংবাদিকদের তিন সংগঠনকে দিতে হয় ৫০ করে, বিট অফিসারকে দিতে হয় ১’শ  ডিএসবি ১’শ , টহল পুলিশকে দিতে ১’শ ,দলীয় লোককে দিতে হয় ২’শ, ল্যাইনম্যান ২’শত টাকা এবং অন্যান্য ১’শ টাকা পায়।

বৌনচৌকি এলাকার আবু তালেব জানান, অনেকে ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। মুখ খুললে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চোরাকারবারিরা পুলিশের সহযোগিতায় মাদক ঘরের ভিরতে ঢুকিয়ে দিয়ে মামলা দিয়ে হয়রাণী করেন।  

ভেলাগুড়ি এলাকার কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, রাতের আধারে গরু পারাপারের কারণে কৃষকদের ধানক্ষেতসহ নানা ফসলী ক্ষেত নষ্ট হয়। কিন্তু বলার কিছুর নাই প্রতিবাদ করলেই হয়রানির শিকার হতে হয়। 

সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু পাচারকারী সাজ উদ্দিন এর সাথে কথা হলে তিনি জানায়,থানা থেকে নিয়োগকৃত লাইনম্যানের মাধ্যমেই তো ২৪০০ টাকা করে দেই। এ থেকে গরু প্রতি ১ হাজার টাকা হাতীবান্ধা থানার ওসি নেয়।  

বিষয়টি হাতীবান্ধা উপজেলার প্রণী সম্পদ অফিসার মাহামুদুল হাসান বলেন, চোরাকারবারিদের মাধ্যমে ভারত থেকে গরু আসলে স্থানীয় খামারিরা লোকশানে পড়বে। তাই প্রশাসনের উচিৎ রাতে অন্ধকারে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ করা।  

গরু পারাপারের বিষয়ে গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোনাব্বেরুল হক মোনা বলেন, গরু পারেপারের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। ৪’শত টাকা করে আপনার নামে উঠানো হয় এ বিষয়ে জানতে চাইতে তিনি বলেন, থানার ওসি’র নিয়োগকৃত লাইনম্যানদের সাথে আমার এখনো কথা হয় নাই। 

বিষয়টি নিয়ে হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন নবী জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না এবং আমি কারো কাছে থেকে কোন টাকা নেই না। আমি ভেলাগুড়ি ইউনিয়নে আছি এ বিষয়ে স্বাক্ষাতে কথা হবে। 

পুলিশের টাকার নেওয়ার বিষয়ে পুলিশ সুপার মো: তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, এ রকম কোন তথ্য পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102