কামরুল হাসান জুয়েল
নরসিংদী সদর উপজেলা প্রতিনিধি
দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে প্রায় দেড় বছর আগে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন মো: লিটন মিয়া (৪৫)। সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। গতকাল বুধবার মালয়েশিয়া থেকে বাড়ি ফিরেছে প্রাণহীন লিটনের লাশ।
মালয়েশিয়ায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করতেন লিটন মিয়া, সকাল বেলা কাজে যাবার পথে হঠাৎ সাইকেল থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যান লিটন। গতকাল বুধবার তাঁর মরদেহ বাড়িতে আনা হয়।বৃহস্পতিবার সকালে জানাজা শেষে মো: লিটন মিয়ার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
মো: লিটন মিয়ার বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলা আমদিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ভূইয়ম গ্রামে, তিনি ওই গ্রামের মরহুম মো: জামালুদ্দিনের বড় ছেলে।
ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়ে প্রবাসে গিয়ে শামিল হলেন মৃত্যুর মিছিলে। আর এই আকস্মিক মৃত্যু দিনেদিনে বেড়েই চলছে।
প্রবাসীর একবুক স্বপ্ন কখনও কফিনবন্দি
একজন প্রবাসীর উপর ভরসা করে একটা পরিবার স্বপ্নের পসরা সাজায়। আর এভাবেই এপারে ভরসা করে ওপারে বুনতে থাকে স্বপ্নের জাল। অনেক পরিবার তিনবেলা খাবারের জন্যও চেয়ে থাকে এই প্রবাসীর উপর। এ রকম হাজারও দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জন্মভূমি ও জননীকে ছেড়ে অচেনা অজানা দেশে পাড়ি জমায় হাজারও প্রবাসী।
কেউ বলেন স্বপ্ন পূরণের আরেক নাম প্রবাসজীবন। কিন্তু তারা জানেই না কতটা ঝুঁকি নিয়ে এই মানুষগুলো পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছে। কিন্তু সব প্রবাসীরা কী পারে তার পরিবারের সকল স্বপ্ন পূরণ করতে? হয়ত চাইলেও অনেকেই তা করতে পারে না। অনেক সময় আমরা অনেক প্রবাসীর মৃত্যুর সংবাদ পাই। আবার কখনো লাশের খবরও মেলে না। হায়রে প্রবাস জীবন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। এদের অধিকাংশেরই বয়স ২৫-৪৫ বছরের মধ্যে। অভিবাসন ব্যয়ের তুলনায় কম আয়ের কারণে মানসিক চাপ ও দীর্ঘদিন স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে একাকিত্বই প্রবাসী শ্রমিকদের হৃদরোগের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাশাপাশি দৈনিক ১২-১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম, অপর্যাপ্ত খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকার কারণেও রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।
তাই মানসিক চাপ কমাতে অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবাসী শ্রমিকদের মানসিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা তৈরি করার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।
মালয়েশিয়ার মাহাসা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডা. আবুল বাশার বলেন, ‘প্রবাসীরা বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকায় তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্তের হার বেশি। এ ছাড়া দেশের বাইরে যাওয়ার পর তাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে, যা হৃদরোগের জন্য দায়ী। আবার অনেকে জানেন না, কোথায় কীভাবে চিকিৎসা নিতে হয়। কোনো ধরনের চেকআপের মধ্যে না থাকায় অনেকে হৃদরোগে ভুগলেও চিকিৎসা না করায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান’।