শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন

ছাত্র জনতার বিপ্লবের শততম দিন ও আমজনতার ভাবনা

Coder Boss
  • Update Time : বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৬ Time View

লেখক: মোঃ আসাদুজ্জামান

ছাত্র জনতার বিপ্লবের শততম দিনের শেষে দেশের মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা, অসস্তিসহ কেমন যেন একটা গুমট পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সবাই বলাবলি করেন ভবিষ্যতে কি হবে। কারা উপদেষ্টা মনোনীত হচ্ছেন, কেন হচ্ছেন, কিভাবে হচৃছেন। নির্বাচন কমিশনে সুকৌশলে কেউ ঢুকে যাচ্ছেন কিনা। সিন্ডিকেটকে কেন থামানো যাচ্ছে না। গণতন্ত্র আদৌ মুক্তি পাবে কিনা। অবাদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কি হবে না হবে না।একদল নির্বাচন পিছানোর পক্ষে আরেক দল নির্বাচন এগুনোর পক্ষে ।
আচ্ছা ধরুন,মোটামুটি গ্রহনযোগ্য একটা নির্বাচন হলো।একদল ক্ষমতায় আসলো।কোনদল আসবে তা মানুষ কিছুটা বুঝতে পারে ।তারা পূর্বেও ক্ষমতায় ছিল।কি করেছে তা দেশের মানুষ জানে।তারা কি দুধের নহর বহায় দেবে নাকি ?
জামায়াত এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো শক্তি এখনো অর্জন করতে পারেনি বলে মানুষ বিশ্বাস করে।আর ছোট ছোট বাম ডান দলগুলো অধিকাংশ নাম সরবশ্য বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক।এককভাবে নির্বাচন করার শক্তি তাদের নেই বললেই চলে।
এর বাইরে অনেক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে।তাদের কেউ কেউ জয়লাভ করবে ব্যাক্তি ইমেজ ও আনুষাঙ্গিক কারনে।
তাহলে প্রশ্ন হলো এই যে বিশাল ছাত্র জনতার আন্দোলন অভ্যুত্থান বিপ্লব তার কি হবে ? এতো রক্তপাত এতো জীবন বিসর্জন শুধু কি স্বৈরাচার হাসিনা ও তার দোসরদের ক্ষমতাচ্যুত করায় সীমাবদ্ধ?
আমি অবশ্য অভ্যুত্থান বলবো বিপ্লব বলতে নারাজ।কারণ বিপ্লবের পূর্বাপর পরিকল্পনা থাকে প্রস্তুতি থাকে।বিপ্লবোত্তর কি করা হবে তার একটা রোড ম্যাপ থাকে।যেমন সোভিয়েত বলশেভিক বিপ্লব,ফরাসি বিপ্লব ,চায়না তথা মাওসেতুং কমুউনিজম বিপ্লব, কিউবার ক্যাস্ট্রো বিপ্লব ,ইরানের ইসলামী বা খোমেনী বিপ্লব ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু বাংলাদেশে আগষ্ট,২৪ অভ্যুত্থান হয়েছে।এটা মোটেও কোনো বিপ্লব নয়।যারা সেকেন্ড রিপাবলিক ঘোষণা নিয়ে মাতামাতি করছেন তারা ঠিক না বেঠিক করছেন তা রেফারেন্ডাম হলে বোঝা যেতো।
দেশ থেকে নিরাপদে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিষদের লোকজনকে নিরাপদে দেশত্যাগ করতে দেয়া হলো।ভিতরে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই চলে গেলেন।কিভাবে সম্ভব হলো ? শপথ গ্রহনে ৩দিন লেট হলো।অভ্যুত্থান পরবর্তি আন্দোলন রত ছাত্র জনতা কিংকর্তব্য বিমুখ।কোন প্ল্যান পরিকল্পনা কিছুই নেই।আর্মি সেনানিবাসে ডাকলো আর ছাত্রজনতা কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা উপস্থিত হলেন।এর মধ্যে শুধু আর্মি চিফ বক্তৃতা দিলেন আর শান্ত থাকার আহবান জানালেন।
এখানে বিপ্লবের তো কিছুই দেখি না।কি থিম, কি ইজম, কি আদর্শ কোন কিছুই তো নেই।
তবে এটা ঠিক দীর্ঘদিনের নিষ্পেশন অত্যাচার হত্যা গুম খুন খারাবি বিচারহীনতা জোর জুলুমে মানুষ অতিষ্ঠ ছিলো ।আসু পরিবর্তন চাচ্ছিল।
অভ্যুত্থান উত্তর মানুষ তার অনাদি অনন্ত কালের চাওয়া পাওয়া গুলো সব একত্রিত করে ফেলেছে।অসংখ্য হাঁকডাক মিছিল মিটিং দাবি দাওয়ার ফর্দি দিনদিন বাড়তেই আছে।
যারা এসব করছেন তারা হয় ঙ্গানপাপী না হয় কুমতলবে বা উদ্দেশ্য মূলকভাবে এসব করছেন।
এটা কেন বুঝতে চেষ্টা করছেন না যে এটা কোন রেগুলার সরকার না।আপতকালিন সরকার।বিশেষ পরিস্থিতিতে এ সরকার সৃষ্টি।
এতো কাল এতো বছর কোথায় ছিলেন ? আপনাদের নির্বাচিত প্রিয় সরকাররা যা এতোদিন পারেনি তা অনির্বাচিত আপতকালিন সরকারের কাছে চান কেন ?
বাংলাদেশে পশ্চিমা ধাঁচের মার্কিনি বা যুক্তরাজ্যের মতো গণতন্ত্র সহসা সম্ভব হবে না।
কারণঃ
১। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আয় আছে এবং কাজ আছে।
২। ঔসব দেশের লোকজন শিক্ষিত,সত্যবাদী,এবং স্বাবলম্বী ।কারো মুখাপেক্ষী নয়।
৩। আমাদের জাতীয় চরিত্র পরশ্রীকাতরতা ।কিন্তু তারা কখনই মিথ্যাকথা ও হিংসাবিদ্ব্যেশ পোষণ করে না।
৪। আমাদের মতো কাজহীন বেকার ঘুরাফেরায় সময় নষ্ট করার মত সময় তাদের নেই।
৫। মানুষ অভাবি হওয়ায় অতি অল্প পয়সায় ভোট বিক্রি করে যা ঐসমস্ত দেশে সম্ভব না।নগত যা পাওয়া যায় তাই লাভ এই মানষিকতা আর কি।
যারা ক্ষমতায় যেতে চান তারা অতীতে কি করেছেন এবং ভবিষ্যতে কি করবেন তার লিখিত বিস্তারিত কর্মসূচি দিন।আর কিভাবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেন তারও রোড ম্যাপ হাজির করুন।ফাঁকা বুলি দিয়ে মানুষকে আর ধোঁকা দেয়া যাবে না।কে কত টাকার কিভাবে মালিক হয়েছেন তাও জনগণকে জানানো হোক।
রাজনীতি টাকা কামানোর একটা সহজ পন্থা হিসেবে মানুষ এখন মনে করে।
যার জন্য যদু-মদু-কদু সবাই রাজনীতি করে।জনগণের নাম নিয়ে জনগণকে বিক্রি করে এরা এসব কর্মকাণ্ড করছেন।তাড়াতড়ি শটকাটে বড়লোক বা টাকা বানানো।তাছাড়া কাজ কাম নাই চল রাজনীতি করি।এইসব আরকি।
রাজনীতি টা আসলে কি? কেন করবেন কার জন্য করবেন ? কতটুকু বোঝেন ? ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত কিনা ? জনগণের কাছে আদৌ গ্রহনযোগ্যতা আছে কিনা? এসবের বালাই নেই।
যেটা আসু প্রয়োজন তা হলো হাসিনা বিদায় হয়েছে।দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা। আইন শৃঙ্খলা ঠিক করা।দোষী চোর ডাকাত হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। তারপর কিছু সংস্কার।সেটা সংবিধান, বিচারালয় ,সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
যারা বলছেন জাতীয় সংগীত, পতাকা, ২য় রিপাবলিক, ইত্যাদি ইত্যাদি আমার ধারণা অধিকাংশ মানুষ এসব পরিবর্তনে সায় দেবে না।
সরকার অতীতের মতো স্বৈরাচারী যাতে না হয় আর স্বৈরাচার হওয়া কিভাবে ঠেকানো যায় সেই পথ খুঁজতে হবে।
এই সমস্ত কারণে ড. ইউনুস সরকারকে যথাযথ সময় দিতে হবে।
যাহোক, অনেক আলাপ করলাম। আশাকরি আগামী দিনগুলো জনবান্ধব হবে।
বাংলাদেশ একটি উন্নত উদার গণতান্ত্রিক দেশ হোক। “আমরা সবাই একটি পরিবার”
মাননীয় ড. ইউনুস মহোদয়ের একথা সার্থক হোক এই কামনা করছি।

লেখক:
কলামিস্ট: মোঃ আসাদুজ্জামান
সাবেক কর কমিশনার
ও আহবায়ক, কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102