ডক্টর মোঃ বদরুল আলম সোহাগ
ঢাকার ব্যস্ত শহরের এক কোণে অবস্থিত ছিল “রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ।” এখানেই পড়াশোনা করত আরাফাত আর রূপা। আরাফাত ছিল একদম সাধারণ এক তরুণ—চশমা পরা, বইয়ের পোকা, আর খানিকটা লাজুক। অন্যদিকে রূপা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত—চঞ্চল, সাহসী, আর স্বপ্নবাজ। প্রথম থেকেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা বেশ জমে উঠেছিল।
তবে এই বন্ধুত্বের মধ্যেও লুকিয়ে ছিল এমন কিছু যা তাদেরও জানা ছিল না—ভালোবাসা।
—
একদিন ক্লাস শেষ হওয়ার পর রূপা হঠাৎ আরাফাতকে বলল,
“চল একটা এডভেঞ্চার করি! শহরকে নতুনভাবে দেখি!”
আরাফাত অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “এডভেঞ্চার? শহরে আবার কিসের এডভেঞ্চার?”
রূপা মুচকি হেসে বলল, “তুমি দেখবে। শুধু আমার উপর ভরসা রাখো।”
রূপার পরিকল্পনা ছিল একরাতের জন্য পুরো ঢাকা শহর ঘুরে দেখা। তারা রিকশায় উঠল। প্রথম গন্তব্য ছিল পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। তারা সেখানে সন্ধ্যার আলোয় নৌকায় চেপে নদীর ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে গল্প করল। আরাফাত বুঝতে পারল, রূপার চোখে একটা আলাদা জগৎ আছে।
—
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা গেল একটি পুরনো রেস্টুরেন্টে, যেখানে কেবল মোমবাতির আলো জ্বলত। রূপা হঠাৎ বলল,
“আরাফাত, জানো? ছোটবেলায় আমি অনেক কিছু করতে চেয়েছি, কিন্তু সব সময় সাহস পাইনি। অথচ এখন তোমার সাথে থেকে মনে হয়, সব সম্ভব।”
আরাফাত হতভম্ব হয়ে গেল। এই প্রথম সে বুঝল, রূপার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত তার নিজের জীবনেরও অন্যতম প্রেরণা।
—
পরের দিন থেকেই শুরু হলো কলেজের বার্ষিক উৎসবের প্রস্তুতি। রূপা আর আরাফাত মিলে একটি থিয়েটার প্রজেক্টে কাজ করছিল। থিয়েটারের কাহিনি ছিল এমন এক প্রেমের গল্প, যেখানে নায়ক আর নায়িকার সমাজের বাধা অতিক্রম করে একত্র হয়। অভিনয়ের সময়, তাদের দুজনের সংলাপ যেন এক অন্য বাস্তবতা তৈরি করল। বন্ধুত্বের আড়ালে থাকা অনুভূতিগুলো পরিষ্কার হয়ে গেল।
রূপা ধীরে ধীরে আরাফাতের কাছাকাছি এল। একদিন থিয়েটারের রিহার্সালের পর রূপা সরাসরি বলে ফেলল,
“আরাফাত, যদি গল্পটা বাস্তব হতো, তুমি কি আমার পাশে থাকতে?”
আরাফাত কিছুক্ষণের জন্য কথা বলতে পারল না। তার হৃদয় বলছিল ‘হ্যাঁ’, কিন্তু ঠোঁট কিছু বলার আগে রূপার চোখে সে উত্তর পেয়ে গেল।
—
উৎসবের দিন থিয়েটারের শো সফল হলো। কিন্তু তাদের আসল গল্প সেদিনের পর শুরু হয়। রূপা আর আরাফাত মিলে সিদ্ধান্ত নিল, তারা জীবনে একসাথে শুধু শহরের এডভেঞ্চার নয়, জীবনের প্রতিটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে।
তারা শহরের নানা অচেনা জায়গা খুঁজে বেড়াল—একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা, রাস্তায় বইমেলা থেকে বই কেনা, অচেনা রেস্টুরেন্টে নতুন খাবার চাখা। প্রতিটি মুহূর্ত তাদের কাছে ছিল এক নতুন এডভেঞ্চার।
—
কলেজ জীবন শেষ হলো, আরাফাত উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল। রূপা চুপচাপ ছিল, কিন্তু তার চোখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা। বিদায়ের দিন রূপা আরাফাতকে বলল,
“শুধু চলে যাওয়ার সময় বলো না, কবে ফিরে আসবে।”
আরাফাত মুচকি হেসে বলল,
“যেখানেই যাই, এই শহর, এই স্মৃতি আর তোমাকে কখনো ভুলব না। খুব শিগগিরই ফিরে আসব, কারণ আমার এডভেঞ্চার এখনো অসম্পূর্ণ।”
রূপা বলল,
“তাহলে অপেক্ষায় থাকব। আর মনে রেখো, ভালোবাসা এক চিরন্তন এডভেঞ্চার।”
—
এইভাবে, শহরের আলো আর তাদের গল্পের উষ্ণতায় এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। ভালোবাসা শুধু তাদের বন্ধন নয়, বরং তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় এডভেঞ্চার হয়ে রইল।
***********