রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৩ অপরাহ্ন

জাতীয় নেতা মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ১২৪ তম জন্মদিন রাস্ট্রীয়ভাবে পালনের আহবান

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৬ Time View

স্টাফ রিপোর্টার:

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন এর বীর, মহান ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগটক, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এর পুরোধা ব্যক্তিত্ব মহান জাতীয় নেতা মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশের ১২৪ তম শুভজন্মদিন ২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার।
মহান জাতীয় নেতার শুভ জন্মদিন জাতীয় ও রাস্ট্রীয় ভাবে পালনের আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান ও মহাসচিব আলহাজ্ব মোঃ আকবর হোসেন। নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করে বলেন বিগত বছরগুলোতে স্বেরাচারী ও ফ্যাসিস্ট সরকার ইতিহাস বিকৃতি করে ইতিহাসকে নিজেদের মতো রচনা করেছিলেন। শিক্ষার্থীদেরকে মিথ্যা ও বানোয়াট ইতিহাস শিখিয়েছেন।
জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অপমানিত ও অবমূল্যায়ন করেছেন। এখন সময় এসেছে সঠিক ইতিহাস রচনা করে জাতীয়নেতা, দেশবরেণ্য বীরদের যথাযথ ও সঠিক মর্যাদা প্রদান করা। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মহান জাতীয় নেতা মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি সলঙ্গা বিদ্রোহে সরাসরি নেতৃত্ব দেন।। বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হওয়ার মাত্র ২১ দিন পর চলনবিল অঞ্চলের উল্লাপাড়ার সলঙ্গার হাট বৃটিশবিরোধী, অহিংস-অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে সেদিন সলঙ্গার হাটে তিলঠাঁই পর্যন্ত ছিল না। লোকে লোকারণ্য। হাজার হাজার মানুষ এই ছোট্ট হাটে জড়ো হয়েছে স্বাধিকার চেতনায়। আন্দোলনে উত্তাল উত্তরবঙ্গের সুবিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা হাটে বৃটিশবাহিনী সেদিন ইতিহাসের বর্বরতম হামলা চালায়। গণহারে হত্যা করে হাজার-হাজার মানুষ। সেদিন অগণিত লাশের গণকবর দেয়া হয় সিরাজগঞ্জের রহমতগঞ্জে।
যদিও কাগজে-কলমে সাড়ে চার হাজার মানুষের আনুমানিক হিসেব পাওয়া যায়, কিন্তু আদতে নাকি সলঙ্গা হাটে সেদিন দশ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল বৃটিশবাহিনী। স্বাধিকার চেতনায় উজ্জ্বীবিত হবার দায়ে একসঙ্গে এত মানুষ হত্যার ঘটনা ইতিহাসে বিরল। বৃটিশদের এই হত্যাযজ্ঞ সেই সময়ের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম বলেই চিহ্নিত আজও।
সেদিন সলঙ্গার হাটে মুক্তিকামী মানুষের নেতৃত্বে ছিলেন ২২ বছরের এক যুবক। এই যুবকটির নাম আব্দুর রশিদ। সেদিনের সেই কিশোর নেতাই পরে জাতীয় নেতা মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ উপাধিতে ভূষিত হন। সেদিন তিনি সলঙ্গা হাটে বিদেশি পণ্য বর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্বের জন্য বৃটিশবাহিনীর চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্দি হন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তসিঁড়ি সলঙ্গা বিদ্রোহের মহানায়ক, ঋণসালিশী বোর্ড প্রবর্তনের পথিকৃৎ, বর্গা আন্দোলনের অবিসংবাদিত কাণ্ডারি, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে অকুতোভয় যোদ্ধা এই মহান নেতা, আজীবন গণমানুষের নেতা মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের একশ চব্বিশতম জন্ম বার্ষিকী ২৭ নভেম্বর । তার অমর স্মৃতির প্রতি আমাদের প্রণতি।
মরহুম মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ১৯০০ সালের ২৭ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলাধীন তারুটিয়া গ্রামে এক পীর বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষ বড়পির হযরত আবদুল কাদির জিলানীর (র.) বংশধর শাহ সৈয়দ দরবেশ মাহমুদ ১৩০৩ সালে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাগদাদ থেকে বাংলাদেশে আসেন।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় মাওলানার পক্ষে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশ নেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি যুক্ত প্রদেশের বেরেলি ইশতুল উলুম মাদ্রাসা, সাহারানপুর মাদ্রাসা, দেওবন্দ মাদ্রাসা ও লাহোরের এশাতুল ইসলাম কলেজে অধ্যয়ন করেন ও তর্কশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করে তর্কবাগীশ উপাধিতে ভূষিত হন। এ সময় মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে রচিত অশ্লীল গ্রন্থ ‘রঙ্গিলা রসুল’ ও আডিয়া (আর্য) সমাজের শুদ্ধি অভিযানের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সংগঠিত করে এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে। ভারতব্যাপী এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার রঙ্গিলা রসুল বাজেয়াপ্ত করে। বাংলার গরিব কৃষকসমাজকে জমিদারি-মহাজনী শোষণ-নিপীড়ন থেকে রক্ষার জন্য তার আন্তরিক কর্মপ্রচেষ্টার ফল ‘নিখিল বঙ্গ রায়ত খাতক সমিতি’। সর্জজনশ্রদ্ধেয় জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন এই সমিতির সভাপতি এবং মাওলানা তর্কবাগীশ ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। দেশব্যাপী এই সমিতির ব্যাপক ও বলিষ্ঠ আন্দোলনের ফলেই গঠিত হয় ঐতিহাসিক ‘ঋণ সালিশি বোর্ড’। বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আন্দোলন মাওলানা তর্কবাগীশের অবদান; যা সফল হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় পরিষদের প্রথম সভাপতি হিসেবে মাওলানা তর্কবাগীশ সর্বপ্রথম বাংলায় যে সংসদীয় কার্যপ্রণালি প্রবর্তন করেন তা আজও চালু আছে।

স্বাধীনতার পরবর্তী সরকার মাদ্রাসা শিক্ষা পুনরায় চালু করে মাওলানা তর্কবাগীশের পরামর্শে। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে তিনি রাখেন নজিরবিহীন ভূমিকা। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবোচিত রূপে গড়ে তোলেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনেরও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন মাওলানা আবদুর রশীদ। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠান যে সেবাদান করেছে ও করছে তারও গোড়াপত্তন করেন মাওলানা তর্কবাগীশ। রেডিওর বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে আরবি অনুষ্ঠান প্রচারও শুরু হয় তারই উদ্যোগে। এ ছাড়া রেডিও ও টেলিভিশনে কোরআন তিলাওয়াতের নিয়মও চালু করান তিনি।
মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ১৯৩৩ সালে রাজশাহীর চাঁটকৈড়ে নিখিলবঙ্গ রায়ত খাতক সম্মেলন আহবান করে ঋণ সালিশী বোর্ড আইন প্রণয়নের প্রস্তাব রাখেন। তিনি ১৯৩৭ সালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে নাটোরে কৃষক সম্মেলন আহবান করেন। তিনি গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ১৯৩৮ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তিনি বাংলা, আসাম ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত বাংলার এম.এল.এ হিসেবে তৎকালীন ব্যবস্থাপক পরিষদে পতিতাবৃত্তি নিরোধ, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সভাপতিত্বে গঠিত ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগে যোগ দেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ে সংগ্রামরত ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশি নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে প্রাদেশিক পরিষদ থেকে বেরিয়ে এসে মহান ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি মুসলিম লীগ ত্যাগ করে প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দল গঠন করেন এবং নুরুল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আওয়ামী মুসলীগ দলীয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তান গণপরিষদে ১৯৫৫ সালের ২২ আগস্ট তিনি প্রথম বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। মাওলানা তর্কবাগীশ ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি নির্মাণে যে সব মনীষী কালজয়ী অবদান রেখেছেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে তার গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে `স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার-২০০০` (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। মহান স্বাধীনতা উত্তর সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠনেও মাওলানা তর্কবাগীশ পালন করেন প্রাগ্রসর ভূমিকা। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সূচনাকালে মাওলানার নেতৃত্বে্ গঠিত হয় ১৫ দলীয় ঐক্যজোট। স্মর্তব্য, নববই দশকের দুর্বার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূলধারাটিই ছিল এই ঐক্যজোট। এখনো প্রবীণ জাতীয় নেতৃবৃন্দ আন্দোলন সংগ্রামে তাঁর অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

তিনি একজন সুসাহিত্যিকও ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে, শেষ প্রেরিত নবী, সত্যার্থে ভ্রমণে, ইসলামের স্বর্ণযুগের ছিন্ন পৃষ্ঠা, সমকালীন জীবনবোধ, স্মৃতির সৈকতে আমি, ইসমাইল হোসেন সিরাজী ইত্যাদি। এছাড়া তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তার নামে কিছু প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ক. নুরুন্নাহার তর্কবাগীশ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, রায়গঞ্জ
খ. চড়িয়া মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ বিজ্ঞান মাদ্রাসা, উল্লাপাড়া
গ. পাটধারী মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ উচ্চ বিদ্যালয়, সলংগা, উল্লাপাড়া
ঘ. মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ পাঠাগার
ঙ.মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ ফাউন্ডেশন

১৯৫৬-২৯৬৭ সাল পর্যন্ত একটানা দশ বছর মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কাবগীশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান তখন, যুগ্ম সম্পাদক, পরে সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন তর্কবাগীশের সাথে। সমসাময়িক জাতীয় নেতাদের মানস গঠনে তর্কবাগীশের প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল। তার রাজনৈতিক দর্শন, বক্তৃতার ষ্টাইল, মানুষের প্রতি ভালবাসা, নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম সবই ছিল তর্কবাগীশের প্রভাবে আচ্ছন্ন।
বিশিষ্ট রাজনীতিক এক নিবন্ধে লেখেন, ‘১৯৫৭ সালের ১৩ জুন শাবিস্তান হলে ও গুলিস্তান হলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়। ওয়ার্কিং কমিটি নতুন করে গঠণ করা হয়। হঠাৎ করে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ফলে একটি বড় রকমের ধাক্কা এলো দলে। সাতান্নতেই হাল ধরতে হলো তাঁকে, মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিলেন। এভাবে ক্রান্তিকালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও আবদুর রশিদ তর্কবাগিশকে ভূমিকা রাখতে দেখা যায়।’

শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে এই মাওলানার সান্নিধ্যে। তিনি তর্কবাগীশের ছায়াসঙ্গি হয়ে থেকেছেন সেই সময়টায়, ইতিহাস এটাই প্রমাণ করে। তিনি মাওলানাকে কাছে থেকে দেখেছিলেন। আর মাওলানা প্রিয় সহকর্মি, প্রিয় শিষ্যকে কাছে থেকে গড়ে ছিলেন। দুজনের জীবনের নানান স্মৃতি কথা কিংবদন্তির মতো ছড়িয়ে আছে, জড়িয়ে আছে ইতিহাসের পরতে পরতে।
স্বাধীনতার পর তারই প্রচেষ্টায় মাদ্রাসা শিক্ষা পুনরায় চালু হয়। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ ও একে বিজ্ঞান সম্মত রূপদান করেন। এছাড়া ইসলামি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি বেতার ও টেলিভিশনে কোরআন তেলাওয়াতের নিয়ম চালু করেন। বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের কথা উঠলে একদল এসে বলবে মাদ্রাসা শিক্ষার ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে আরেক সুবিধাবাদী দল সবসময় এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখে সমস্যা থেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও কম যান না। কিন্তু এই সমস্যার কথা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ বলে গেছেন ৭২ সালেই।
২৬ ফাল্গুন (১৯৭২) শুক্রবার মাওলানা আবদুল রশিদ তর্কবাগীশ বলেন, “বৈশ্বিক শিক্ষা বৈষয়িক শিক্ষা বিবর্জিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষালব্ধ জ্ঞান সমাজ জীবনে খুব একটা কাজে আসে না। তিনি প্রচলিত স্বতন্ত্র মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন। এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পট পরিবর্তন এর পরে ১৯৭৬ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে বরেণ্য গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিজন মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান সভাপতি ও আলহাজ্ব মোঃ আকবর হোসেন মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
বর্তমানে সুযোগ্য নেতৃত্বে গণ আজাদী লীগ অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে অনেক বেশী সুসংগঠিত।
মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ উপমহাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গত শতকের আট-এর দশকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অবধি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অথচ কি আমাদের কি দৈন্যতা যে নবপ্রজন্মের কাছে তিনি প্রায় অপরিচিত।

যিনি তর্কে পারঙ্গম, তর্কে যার ক্লান্তি নাই, খুব সাধারণ অর্থে তাকেও তর্কবাগীশ বলা যায়। কিন্তু মাওলানা আবদুর রশীদের তর্কবাগীশ উপাধিটি মোটেও কোনো সাধারণ অর্থ বহন করে না। যুক্তিশীলতার মধ্য দিয়ে আবদুর রশীদ হয়ে ওঠেন তর্কবাগীশ। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রাম-সাধনার প্রতিটি পর্যায়ে, ইতিহাস সাক্ষী, এই মাওলানা পালন করেন ত্যাগ-সুন্দর ভূমিকা, যা অনন্যতায় সমুজ্জ্বল।
জাতীয় নেতা আজীবন সংগ্রামী মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ১৯৮৬ সালের ২৩ আগস্ট ৮৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
১২৪ তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। আমরা তার বিঘা আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। সেই সাথে বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক ও সুশাসনের বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় ঐক্যমূত্র কামনা করছি। সোনার বাংলা হোক জাতীয় নেতা মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের চেতনার সাম্য ও সম্প্রীতির কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102