মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন

গল্পঃ শূন্যতা

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৯ Time View

কলমেঃ সাহেলা সার্মিন
=============

কর্মসূত্রে সিলেটে বনবাস হলো আমার। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ঢাকায়। মাসে একবার দু’বার তাদের সাথে দেখা হয়। ডিজিটাল যুগ বিধায় প্রতিদিন ভিডিও অডিও কলে কথা হয়। কিন্তু একাকীত্ব কী আর ফোনে দু’একবার কথা বলে কাটে?

একাকীত্ব মানে হচ্ছে মহাকালের কড়াল গ্রাস, একাকীত্ব মানে অতীতের চুম্বকীয় স্মৃতি, একাকীত্ব মানে কষ্টের দহন,একাকীত্ব মানে অজানা বিরহে আচ্ছন্ন,একাকীত্ব মানে মনের অতি নিভৃতে লুকিয়ে থাকা গোপন অভিলাষ! শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের কিছু স্মৃতিচারণ।

ভরা যৌবনের উন্মাদনায় ভালো লাগার এক অতন্ত্র মনোহরী।আমার জীবনকে রাঙিয়েছিলো একজন। তার নাম শশি। শশির মতোই মিষ্টি আলোয় আমার জীবনকে কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছিল শশি।।তার সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি। অথচ আমার মন হরণকারিনী।

আমরা দু’জন দুই ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম। আমি জগন্নাত ও জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে। একই বিষয়ে অনার্স চলছিলো আমাদের। অন্য বিষয়ের এক ইয়ারমেটের সাথে আলাপে আমি শশির পরিচয় পাই। নোট বিনিময় চলে আমাদের মাঝে, সাথে চিঠি।

চিঠিতে আমরা দু’জনেই দু’জনকে ‘তুমি ‘ বলে সম্বোধন করতাম। দু’জনের কুশলাদি আর নোটের বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কথা থাকতো না। কিন্তু চিঠির শুরুতে প্রিয় ‘S’ বা প্রিয় শশি এবং শেষে ইতি তোমার বন্ধু অথবা ইতি তোমার H উল্লেখ থাকতো। এই প্রিয় আর তোমার কথাটাই হৃদয়ের ভিতর অন্য রকম এক ভালোলাগার শিহরণ জাগাতো। আর চব্বিশ ঘণ্টা ওর চিঠির অপেক্ষায় কাটতো।

অনেককে ভালো লেগেছে, কেউ কেউ ভালোবাসার ইঙ্গিতও করেছে কিন্তু বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করতে যেয়ে প্রেম করা হয়নি কারো সাথে। কিন্তু শশির বিষয়টা আমার কাছে একেবারেই নিজস্ব হয়ে দাঁড়াল। মনে হতো, শশি আমার, শুধুই আমার। ওকে আমি ভালোবাসি,ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। ওর হৃদয়ের সাথে আমার হৃদয়টা বিনে সুতোর মালার মতো এক হয়ে গেছে। কিন্তু কি আশ্চর্যের বিষয়, একদিন শশি আমাকে বললো, আগামী দিন আমাকে দেখতে আসবে, সব ঠিকঠাক থাকলে বিয়ে হয়ে যাবে। আমি বললাম, ওকে বিয়ে করো, এখনই বিয়ে করার সঠিক সময়। এ কথা বলার সাথে সাথে শশি ফোন রেখে দিলো। তারপর অনেকদিন ওর সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। ওর কোনো ছবিও আমি দেখিনি তখন পর্যন্ত।

অন্তত বছর দশেক পর ওকে খুব মনে পড়ছিল। ফোনে সার্স দিয়ে খুঁজতে চেষ্টা করলাম ওকে পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু পেলাম না। হঠাৎ একদিন ওর ফোন এলো। আমার অন্তরাত্মা অজানা ভালোলাগায় পুলকিত হয়ে উঠলো। দু’জন দুজনের জীবনের অবস্থান জানলাম। ও একটি কলেজের প্রভাষক। আমিও তাই। যখন ইচ্ছে করলেই ও আমার হতে পারতো তখন অবহেলায় গ্রাহ্য করিনি মনের চাহিদা, আজ মাথা কুটে মরলেও তা পূরণ হবার নয়।

মনের অস্থিরতা বাড়ছে, কথা বলতে যেয়ে হৃদকম্প হচ্ছে। সংসারের কিছু খুটিনাটি কথা শুনলাম এবং বললাম। চাইলাম ওর আইডি, পেয়েও গেলাম। রিকোয়েস্ট করলাম একটি ছবি দিতে, বললাম এতোদিনের পরিচয় আজও তোমাকে দেখলাম না।

ওর আইডিতে এড হয়ে আবার যোগাযোগ শুরু হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে বিভিন্ন দোহাই দিয়ে দূরে চলে যায়, মেসেজের রিপ্লাই দেয় না। তখন আমার খুব কষ্ট লাগে। এভাবেই বুক ভরা কষ্ট নিয়ে পার করছি সময়। কী যে দহন জ্বালায় দগ্ধ হচ্ছি ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102