রতন ঘোষ, কটিয়াদী প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ভালো দাম পাওয়ার স্বপ্ন বুনছেন স্থানীয় কৃষকরা। কটিয়াদীর মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। শীত আসার দেরি থাকলেও চাষিরা বসে নেই। ভালো ফলন পাওয়ার আশায় জমিতেই সময় দিচ্ছেন কৃষকরা। এখানে উৎপাদিত সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এতে করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জেলার কৃষকরা শীতকালীন আগাম সবজি চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারা বছরই উপজেলায় বছর জুড়ে কম-বেশি বিভিন্ন রকম সবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে। শীতকালে এ চাষাবাদের পরিধি আরো বেড়ে যায়। চলতি মৌসুমেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
উপজেলার কটিয়াদী সদর, জালালপুর, লোহাজুড়ী, ফেকামারা, ঝাকালিয়া, চরপুক্ষিয়া, মসুয়া,বৈরাগীরচর, বেতালও আলগীরচর সহ অন্যান্য এলাকায় আগাম সবজির চাষ করা হয়েছে। আগাম সবজি চাষে লাভবান এবং প্রতিদিন নগদ টাকা পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এ চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। বছর জুড়ে নানা রকম সবজি চাষাবাদ হয়। ইতিমধ্যেই এসব জমিতে শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টম্যাটো, আলু, শাক, গাজর, শসা, শিম, বেগুন, মুলা, লাউ, ডাটা, পুঁইশাক, পালং শাক, মরিচসহ বিভিন্ন রকম সবজি লাগানো হয়েছে। অনেক এলাকার মাঠে এসব সবজি বড় হয়ে গেছে। অনেক মাঠে এখনো চাষাবাদের কাজ চলছেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন হবে।
কটিয়াদীকে সবজি ভান্ডার বলা হয়ে থাকে। শীতকালিন সবজি প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে এই উপজেলায়। শীত আসার আগে স্থানীয় চাষিরা আগামজাতের সবজি চাষ করে থাকেন । আগামজাতের সবজিতে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে চাষিরা বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন । জেলায় এখনো শীত মৌসুম শুরু না হলেও শীতের সবজি চাষ শুরু হয়েছে । উপজেলার উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবার গুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষকরা জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি ও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সদর উপজেলার চর ঝাকালিয়া গ্রামের কৃষক অহিদ উদ্দিন জানান, তিনি এবার ৫০ শতক জমিতে আগাম জাতের লাউ, মুলা,ডাটা, কপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষাবাদ করেছেন। ফলন এবং বাজারে সবজির দামও ভালো পেয়েছেন। ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি উপজেলার কৃষকরা এখন বারো মাস হরেক রকম সবজি চাষাবাদ করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করছে। যা তাদের সংসারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত সবজি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য উপজেলার মডেল থানার সামনে নদীর বাঁধ এলাকায় গড়ে উঠেছে সবজি আড়ত।গাজীপুর,সিলেট,ময়মনসিংহসহ সারা দেশের পাইকাররা এসে এখান থেকে সবজি কিনে নিয়ে যায়। জেলার বেশির ভাগ কৃষক তাদের জমি থেকেই উৎপাদিত সবজি খুচরা পাইকারের কাছে বিক্রি করেন।
বাণিজ্যিকভাবেও চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা। সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি বিভিন্ন জাতের সবজির গাছ। এসবের মধ্যে শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপির চারা, লাউ, শিম, মুলা, পালং ও ডাটা লালশাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজি। সবজি চাষে যুক্ত উপজেলার কৃষকরা এবার বেশ উৎফুল্ল। কারণ তারা প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশের জন্য এবার উৎপাদিত ফসলের ফলন ও দাম বেশ ভালো পাবেন। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকদের মুনাফাও বেড়েছে কয়েকগুণ । আগাম জাতের সবজির ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি।
উপজেলার ফেকামারা এলাকার কৃষক ফরিদ উদ্দিন বলেন, তিনি এ বছর ২ বিঘা জমিতে আগাম ডাটা,পুঁইশাক সবজি চাষ করেছেন। সবজি চাষে একটু বেশি পরিচর্যা করতে হয়। খুব কম সময়েই সবজি বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় দিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হয়। জমিতে সবজি থাকা পর্যন্ত প্রত্যেক কৃষকের হাতে কম-বেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলের বেলায় সম্ভব নয়। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো। একই এলাকার সবজি চাষি মোঃ মানিক মিয়া জানান, প্রতি বছর বিভিন্ন জাতের আগাম সবজি চাষ করে থাকি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর ৩ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করছি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য জিনিসের দাম অনেক বেশি। যে কারণে সবজি চাষে খরচও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। তবে আশা করছি এবার ভালো ফলন পাবো।
কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম ভূইঞা জানান,উপজেলায় শীতকালীন আগাম সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ১ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫০ হেক্টর জমির সবজি কর্তন করা হয়েছে। কৃষকরা আগাম জাতের সবজি বিক্রি করে বেশ লাভবান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।