মোঃ সামিউল হক, পাইকগাছা (খুলনা) থেকে:
খুলনার পাইকগাছায় ৫ আগস্ট বিদ্যুৎপৃষ্টে রকিবুল হাসান নামে এক কলেজ ছাত্র নিহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩শ’১৫ ব্যক্তির নামে হত্যা মামলার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ মামলার ঘটনায় গত ৪’দিনে বিভিন্ন অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় জেলার সর্বত্রই তোড়পাড় সৃষ্টি হয়েছে।
মামলায় আসামী শ্রেনী ভুক্ত করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র চাচাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ হেলাল,শেখ সালাউদ্দীন জুয়েল, এসএম কামাল হোসেন, আব্দুস সালাম মুর্শেদী,আকাতারুজ্জামান বাবু ও খুলনার সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, প্যানেল মেয়র মনিরুজ্জামান মনি,খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টু, এসএম নজরুল ইসলাম,সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মুন্সি মাহাবুব আলম সোহাগসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ১৫ সিনিয়র সাংবাদিক, জেলার কয়েক উপজেলার বিশিষ্ট ব্যক্তি,চিকিৎসক,ব্যবসায়ী, আ’লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এদিকে আলোচিত এ মামলার ঘটনায় গতকাল সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে মামলার বাদী স্বয়ং নিহত রকিবুল হাসানের পিতা চা বিক্রেতা রফিকুল গাজী অভিযোগ করেন,একটি চক্র ব্লাক মেইল করে আমার স্বাক্ষর জাল করে বহু মানুষের নামে ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। যা আমার পরিবার কিছুই জানিনা।
নিহতের মা-বাবা আরোও বলেন, ৫ আগস্ট বিকেলে সরকার পতনের পর চাঁদখালী বাজারে আনন্দ মিছিলে যোগ দিয়ে রকিবুর কাঁচা বাঁশের স্টান্ড এ জাতীয় পতাকা টানাতে গিয়ে বিদ্যুৎ পৃষ্টে সে নিহত হয়। এর ১সপ্তাহ পর পাইকগাছার গদাইপুর ও খুলনা থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করে ৪ ব্যক্তি আমাদের বাড়িতে আসে। তারা মুগ্ধর ছোট ভাইয়ের পরিচয়ে স্বান্তনা দিয়ে বলেন, রকিবুল খুলনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিল। তার মত্যুতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করা হবে। এসব কথা বলে তারা আমার ও স্ত্রীর ভোটার আইডি কার্ডের অপর পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর নিয়ে তারা চলে যায়।
এখন বুঝতেছি তারা হয়তো প্রতারনা করে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলাটি করতে পারেন।
এখনো নিহত রকিবুলের মা রেবেকা বেগম একমাত্র পুত্র সন্তান হারিয়ে চোখের জ্বলে শুধু প্রলাপ বকছেন। চাঁদখালী বাজারে চায়ের দোকানে এ দম্পতি স্ফষ্ট করে বলেন,ভিক্ষা করে খাবো, কিন্তু শহীদ সন্তান নিয়ে কাউকে বানিজ্য করতে দিবো না। তাদের আক্ষেপ যাকে নিয়ে আশা-ভরসা ছিল সেই শান্ত স্বভাবের এক মাত্র সন্তান হারিয়ে আমরা নিস্বঃ হয়েছি। সংসারে ৯ম শ্রেনীতে পড়ুয়া একটি মেয়ে সন্তান আছে তার ভবির্ষ্যত কি হবে বলতে পারেন না।
এ অবস্থায় কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী ও নিস্বঃ করতে চাইনা।
নিহতের দরিদ্র মা-বাবা বর্তমান সরকারের কাছে পুনঃবাসনের দাবি করে জানান,ছেলে শহীদের পর এখনো সরকারী ভাবে সাহায্য আসেনি।
তবে জামায়েত ইসলামীর নেতৃবৃন্দ বাড়ি এসে ২ লাখ টাকার সহযোগিতা করোছেন।
২১ নভেম্বর ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলা সুত্রে জানাগেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা’ সরকারের পতনের পর বিকেলে পাইকগাছার চাঁদখালী বাজারে আনন্দ মিছিল বের হয়। এ মিছিলে খুলনার সরকারী ব্রজলাল ( বি,এল) কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী রকিবুল হাসান বাজারের বিএনপি অফিসের সামনে কাঁচা বাঁশের মাথায় জাতীয় পতাকা টাঙিয়ে মিছিল করছিল। এক পর্যায়ে রকিবুল বিদ্যুৎ এর তারে জড়িয়ে পৃষ্ট হয়ে গুরুতর ভাবে আহত হয়। দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মৃত্যু ঘোষনা করেন। কিন্তু মামলায় নিহতের পিতা রফিকুল ইসলাম গাজীকে বাদী দেখিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে আওয়ামীলীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেপরোয়া নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিত ভাবে রকিবুলকে বিদ্যুৎ এর তারে জড়িয়ে হত্যা করেন।
এ হত্যার পিছনে শেখ হাসিনা’র চাচাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ হেলালের নির্দেশে অন্যন্য আসামীরা জড়িত রয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ জানাগেছে নিহত ছাত্রের পিতা রফিকুল ইসলাম গাজী ৪৯২ নং অফিস অবদি নোটারী পাবলিকের হলফ নামায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা সম্পর্কে পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।