স্টাফ রিপোর্টার:
নারীর ক্ষমতায়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে আত্মপ্রত্যয়ী সফল নারী শিল্পোদ্যোক্তা হাফিজা মমতাজ হাসি জাতীয় জাগো নারী ফাউন্ডেশন কর্তৃক বর্ষসেরা আলোকিত নারী আজীবন সম্মাননা ২০২৪ এ মনোনীত হয়েছেন।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার, বিকেল ৩.৩০ ঘটিকায়
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের, মহিলা সংস্থা ভবন অডিটোরিয়ামে তাঁকে আজীবন সম্মাননা ২০২৪ প্রদান করা হবে।
বরেণ্য নারী শিল্পোদ্যোক্তা হাফিজা মমতাজ হাসির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। যদিও তার বাবা মাদারীপুরের একটি অত্যন্ত বনেধী পরিবারের সন্তান। প্রথমত তার বাবা লেখাপড়ার প্রয়োজনে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে যান, সেখানে লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসার প্রয়োজনে চট্টগ্রামে এসে স্থায়ী হন।
তিনি একান্ত সাক্ষাৎকারে এসএসসি ডাক্তার থাস্তেগীর হাই স্কুল এবং এইচ এস সি চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় এ। এইচএসসি পরীক্ষার পরেই তার অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় এবং বিয়ের পর তিনি ঢাকায় এসে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নের জন্য ভর্তি হন।
তিনি আরো বলেন তার ব্যবসায়িক জার্নি শুরু হয় *১৯৯৩* সালে, ছোট আকারে শুরু করেন, কিন্তু পরবর্তীতে খুব দ্রুত ব্যবসা বড় হয়। প্রথমে বাসায় শুরু করেন, তারপরে তিনি ধানমন্ডি প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে একটা শো রুম নেন। তারপরে এই শো রুমের সাকসেস এর পরে উত্তরায় মাইডাস মিনিমার্ট নামক বড় শো রুম এ তিনি একজন পার্টনার ও ডিরেক্টর হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে গুলশান মাইডাস মিনিমার্টে তিনি স্টল হোল্ডার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। *২০০৬* এ তিনি গুলশান পিংক সিটি মার্কেটে দুইটি মিলিয়ে মোটামুটি বড় আকারে একটি শো রুম নেন। এরপরে আবার বেইলি রোড মিনিমার্ট এ তিনি স্টল নেন। সব মিলিয়ে তার দোকানের সংখ্যা ছিল পাঁচটি। অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি এই ব্যবসা করেছিলেন, পরে তিনি জমির ব্যবসা শুরু করেন। জমির ব্যবসা বলতে জমি ক্রয় আর বিক্রয় । এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং তাই মেয়েরা খুব কমই এসেছে এই লাইনে। কিন্তু হাফিজা মমতাজ হাসি এই লাইনে আসার কারণ হলো তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। এছাড়াও তার বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলো নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে ব্যবসায় নিয়ে আসা এবং তাদেরকে স্বাবলম্বী করা। চ্যালেঞ্জের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে *১৯৯৭* সালে ডাব্লিউ ই এ তে (উইমেন এন্টারপ্রেনিয়র অ্যাসোসিয়েশন) নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন । *WEA* তে প্রেসিডেন্ট ছিলেন *বেগম রোকেয়া আফজাল রহমান* , যিনি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। উনার নেতৃত্বে হাফিজা মমতাজ হাসি কাজ শুরু করেন। *১৯৯৭* থেকে নারীদের কল্যাণে কাজ করার জার্নিটা শুরু হয়। নারীদের সকল প্রকার কল্যাণ এবং নারীদের ব্যবসায়িক অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার উদ্যোগ তখন থেকেই শুরু হয়েছে। এবং এই পর্যন্ত যে সকল নারীরা ব্যবসায় এসেছে তাদের ব্যবসা পরিসরের জন্য বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করা হত।
পরবর্তীতে তিনি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন একটি সংগঠন করেন যার নাম দেয়া হয় “উইমেন ইন স্মল এন্টারপ্রাইসেস” অর্থাৎ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নারীরা, এটাকে সংক্ষিপ্ত ভাবে বলা হত *WISE* । তিনি আরো বলেন
এর মধ্যে অনেক নারীকে আমরা ব্যবসায়ে নিয়ে এসেছি। সত্যি বলতে বাংলাদেশে এটিই প্রথম নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান *WEA* তারপর *WISE* এই দুটো। এখানে শত শত নারীদের ব্যবসায় নিয়ে এসেছি, তাদের লোন এর ব্যবস্থা করেছি, বিভিন্ন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছি , দেশে তাদের সীমিত রাখি নি, বিদেশে ও পাঠিয়েছি। কখনও আই এল এ কখনও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফান্ড এর মত অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতায় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ট্রেনিং এবং বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য পাঠিয়েছি।
এর ফলশ্রুতিতে *১৯৯৯* সালে *USAID* আমাকে আমন্ত্রণ জানায় শিকাগোতে লেডি হিলারি ক্লিনটনের উদ্যোগে একটি অনেক বড় সামিট এ। সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় *৩০০শত* জন নারী অংশগ্রহণ করে, তার মধ্যে নারী নেতৃত্বের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়। এবং তখন বাংলাদেশের পক্ষে আমি অনেক কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। বিপুল সহযোগিতা লাভ করি। বাংলাদেশের জন্য প্রচুর অর্ডার নিয়ে আসি। এটা আমার ক্যারিয়ার জীবনের একটি বড় সাকসেস। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে আমরা এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছি।
বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণ, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের লোন নেওয়া। ব্যাংকের লোন প্রথম অবস্থায় দুই লাখ টাকা করে জামানতবিহীন দেয়ার ব্যবস্থা করি। পরবর্তীতে আমরা সব সময় এটার জন্য আন্দোলন করে এটাকে জামানতবিহীন ৭ লাখ টাকায় উন্নীত করি ২০০২ সালে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে এসে জামানত বিহীন ঋণ ২৫ লাখ টাকায় উন্নীত করেছি যা এরপরে আর বারেনি। এবং এ নিয়ে আমরা সরকারের সাথে সবসময় আলোচনা করি। আশা করি শীগ্রই এটি উন্নীত হবে। *BFWE* “বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ উইমেন এন্টারপ্রেনিয়র ” এটি নারী উদ্যোক্তাদের অ্যাসোসিয়েশনের একটি অন্যতম ছাতা। এর অভ্যন্তরে অনেকগুলো ছোট ছোট নারীদের অর্গানাইজেশন মেম্বার হয়। এই অর্গানাইজেশন গুলো পরস্পরকে সহায়তা করে চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যশোর থেকে রাজশাহী থেকে বিভিন্ন ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠনগুলি আমাদের *BFWE* এর মেম্বার হয়।
পরবর্তীতে অ্যাসোসিয়েশন অফ উওম্যান এন্টারপ্রেনার *AWE* নামে আরো একটি সংগঠন করি *২০১২* সালে। অনেক মেয়ে *এস এম ই ফাউন্ডেশন* থেকে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং করেছে এবং ট্রেনিং এর মাধ্যমে তারা স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান এর অর্থায়নেই তারা বিদেশে গিয়েছে। আমাদের মেয়েরা বিভিন্ন ওয়ার্কশপে বিদেশে অংশগ্রহণ করছে, ফ্যাশন শো করছে, সামিট করছে, মেলা করছে। নারীরা আর আগের মত নেই। আমি সব সময় মেয়েদেরকে বলি প্রতিটি নারী স্বাবলম্বী হোক এবং নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখুক। আমার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিটি নারীকে স্বাবলম্বী করা।