কলমেঃ সাহেলা সার্মিন
আচ্ছা, তোমার কী মনে পড়ে
সেই প্রথম যখন তোমার বাড়িতে এলাম,
তোমার আপাদ মস্তক সে কী পুলকিত,
তোমার দৃষ্টিতে স্মিত হাস্য অনবরত!
তোমার স্বতঃস্ফূর্ততা আর হাস্যজ্জল মুখে
ঝরে পড়তো শত শিউলি ফুল,
যেখানেই যে কাজে যাও; সুযোগ পেলেই
ফুড়ুৎ করে ঘরে এসে আমার পাশে বসতে
তাকিয়ে থাকতে অনন্ত কালের মতো
আমার এই শ্যামল মুখ পানে!
তখন মনে মনে ভাবতাম—-
আমি তো জাদু টাদু করিনি কোনো
তাহলে এমন কিভাবে হলো!
এর নাম মনে হয় ভালোবাসা!
আচ্ছা, সেই অনুভূতিগুলো কী এখনো
তোমার চোখের কোনে চিকচিক করে?
ইচ্ছে করে কী আমার হাতটি ধরে দুদ্বণ্ড বসে থাকতে?
করে, কিন্তু কালের আবর্তে আর
সময়ের অভাবে হয়েছে কিছু রদবদল ;
ভালোবাসা বেড়েছে বইতো কমেনি কোনো,
এসেছে নির্ভরতা,
চোখের তীক্ষ্ণতা আজ মনের অলিন্দে বেঁধেছে বাসা
কতোটুকু ভালোবাসা হৃদয় জুড়ে তা যায়না দেখা!
কতোদিন বাড়িতে যাওয়া হয়না! আচ্ছা —
তোমার মনে পড়ে,
জ্যোৎস্না রাতে আমতলায় পাটি বিছিয়ে
সবাই মিলে গল্প করার সেই ক্ষণ,
আলো আঁধারী জ্যোৎস্নায় তোমার হাতে
দুষ্টুমি খেলে যেতো বারবার!
ঈশারা করতে ঘরে চলো! পাঁজী কোথাকার!
কেমন একগুঁয়ে স্বভাব ছিলো তোমার,
কথা না শুনলে কথা বলা বন্ধ করে দিতে,
এমন কী খাবার খেতে না
মুশকিলে পড়ে যেতাম আমি,
উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে থাকতে সারা রাত!
আত্মসমর্পণ তোমার ধাঁচে নেই
আজ হয়তো কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।
আচ্ছা, কেনো অমন করতে?
দেখতে দেখতে বাইশটি বছর কেটে গেলো
কতো স্মৃতি কতো মান অভিমান!
কতো ভালোবাসা বাসি!
প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতি —-
এক অসাধারণ বিস্ময় ছিলো তোমার ভিতরে!
তোমার একটি আনকমন বাক্য
আমি আজও মেলাতে পারিনা,
যা আধুনিক যুগে একেবারেই বেমানান;
“‘আমি বাবা হবো লোকে বলবে কী?
ভীষণ লজ্জা লাগছে!”
আমরা বৈধ দম্পতি,
আমাদের সন্তান হওয়াটাই স্বাভাবিক!
তারপর ধীরে ধীরে তোমার সে লজ্জা কেটেছে।
আজ বহু বছর পর সেই স্মৃতি রোমন্থনে
রোজনামচার কতো ঘটনা মনে পড়ে!
তোমার মনে আছে?
আমাদের ছেলে ছোটো সোনা বাবু
মাঝে শোয়াবো তাকে মানবে না তবু,
আমাকে ধরে না শুলে ঘুম আসেনা তব চোখে।
কেঁদে কেটে যদি সে মাঝে শোয়
আঁখি মুদিলেই অন্যত্র জায়গা হয়,
এভাবেই সময়গুলো হয়ে এসেছে পার
এখন হয়তো যে কোনো সময়
সময় হবে ওপারে যাবার!