সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন

পর্যটনের শিক্ষার্থীদের পর্যটনের সকল চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া সময়ের দাবি

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৭১ Time View

মোঃ সোহান হোসেন

পর্যটন (Tourism) বলতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষের ভ্রমণকে বোঝায়, যা সাধারণত বিনোদন, অবকাশ যাপন, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা অর্জন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (UNWTO) অনুযায়ী “পর্যটন” বলতে বোঝায় এমন সব কর্মকাণ্ড, যেখানে একজন ব্যক্তি স্বাভাবিক পরিবেশের বাইরে ভ্রমণ করেন এবং সেখানে একটানা ১ বছরের কম সময় অবস্থান করেন। এই ভ্রমণের উদ্দেশ্য হতে পারে অবকাশ, ব্যবসা, বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য। তবে, এটি সেই ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য নয় যারা সেই স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস বা আয়ের জন্য কাজ করতে যান। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন গড়ে উঠেছে হাজার হাজার পর্যটন কেন্দ্র। এইসব পর্যটন কেন্দ্র থেকে উপার্জন হচ্ছে লক্ষ্য থেকে কোটি টাকা। বর্তমান বাংলাদেশ সবথেকে উন্নয়নশীল ও সম্ভবনাময় খাত হচ্ছে পর্যটন খাত। যেখানে দেশের অর্থনীতিতে অবদান প্রায় ৩-৪%। বাংলাদেশের কক্সবাজার, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি, সিলেটের চা-বাগানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, যা পর্যটন খাতের বিকাশে সহায়ক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে ও আগামীতে করবে বলে আমরা আশাবাদী। বর্তমানে বিভিন্ন উৎসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৩০০-৩৫০টির মতো পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, যা সরকারিভাবে স্বীকৃত এবং জনপ্রিয়। যেখান থেকে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান ও রাখতে অর্থনীতিতে অবদান।

আমরা যদি এক নজরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর কথা আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো ফ্রান্স বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পর্যটকপ্রিয় দেশগুলোর মধ্যে একটি। তাদের অর্থনীতির প্রায় ৯% থেকে ১০% আসে পর্যটন শিল্প থেকে। আবার স্পেনের জিডিপির প্রায় ১২% আসে ট্যুরিজম থেকে। এটি ইউরোপের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এক‌ইভাবে ইতালির অর্থনীতির প্রায় ১৩% আসে পর্যটন খাত থেকে। আবার থাইল্যান্ডের অর্থনীতির প্রায় ২০% থেকে ২২% ট্যুরিজম থেকে আসে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বড় পর্যটন কেন্দ্র। সবশেষ মালদ্বীপের মোট অর্থনীতির প্রায় ৬০% আসে পর্যটন খাত থেকে। এটি পর্যটনের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল দেশ। পৃথিবীর বিখ্যাত দেশগুলো পর্যটনকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে শুধুমাত্র সঠিক পরিকল্পনা ও পর্যটন খাতের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে।

বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) অনুমোদিত মোট ১৫০ টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তারমধ্যে ৩০টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যটন বিষয়ক চার বছরের অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। প্রতিবছর সেখান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাস করে দেশের বিভিন্ন জব সেক্টরে জবের জন্য বারবার আবেদন করেও কাঙ্খিত জব পাচ্ছেন না। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত আলোচনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশে পর্যটন বিষয়ক অনেক জব সেক্টর রয়েছে। কিন্তু সেখানে সকলেই চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই যে ৩০ টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয় চার বছরের জন্য শিক্ষার্থীরা যে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করল তাদেরকে আলাদা করে মূল্যায়নের কোন সুযোগ কেন নাই ? তারা যে সর্বমোট পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে পর্যটন বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করল এটা কোথায় কাজে লাগাবে ? আর যদি তাদের পর্যটন বিষয়ক চাকরি না হয় তাহলে এই পাঁচ বছর জ্ঞান আহরণের প্রয়োজন কি ছিল ?

আমরা জানি, বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মধ্যে সবথেকে ভালো চাকরি ধরা হয় বিসিএস ক্যাডারকে। এখানে সকল বিভাগের ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষা দিয়ে মেধার মাধ্যমে নিজের চাকরি অর্জন করে নিতে পারে। কিন্তু আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো এই বিসিএস ক্যাডার পদে পর্যটন বিষয়ক নানান পদ রয়েছে । কিন্তু যারা পর্যটক বিষয়ে অভিজ্ঞ না তারাও বিসিএস পরিক্ষার মাধ্যমে সেই পদে চাকরি করছেন। আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার, বিসিএস বাণিজ্য ক্যাডার ও বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে পর্যটন বিষয়ক পদ থাকলেও সেটা সকলেই বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে অর্জন করছেন। আবার আমরা যদি আরেকটু লক্ষ করি দেখতে পাবো বাংলাদেশের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যটন বিষয়ক একটি করে পদ থাকে সেখানেও বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটন কেন্দ্রিক সকল চাকরিতে সকলে আবেদন করতে পারেন। তাহলে পর্যটনে ৫ থেকে ৬ বছর লেখাপড়ার আসলে মূল্যায়ন কোথায় ?

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ আর এই উন্নয়নের ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে চাই পর্যটন খাতে সঠিক ব্যবস্থাপনা। আর এই সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজন সঠিক মানুষ বা কর্মী। যদি বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রিক যে পদগুলো রয়েছে যেমন বিসিএস প্রশাসন, বিসিএস পররাষ্ট্র ও বিসিএস বাণিজ্য এই পদে যে পদগুলো সরাসরি পর্যটন কেন্দ্রিক সেগুলোকে আলাদা করা এবং নন ক্যাডারে যে পথগুলো পর্যটন কেন্দ্রিক এগুলো আলাদা করা তাছাড়াও বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রিক যে সমস্ত চাকরির সুযোগ রয়েছে ওই চাকরিগুলোতে পর্যটন বিষয়ক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন দেওয়া। একজন পর্যটন বিষয়ক শিক্ষার্থীর ৫ বছর থেকে ৬ বছরে পর্যটন বিষয়ে যে পরিমাণ অভিজ্ঞতা অর্জন করছে ওই একই পরিমাণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে অতিরিক্ত তিন বছর লাগবে। তাহলে চাকরিতে অবস্থান করে তারা কি তিন বছর ধরে পর্যটন বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে ? কিন্তু সেখানে যদি একজন পর্যটন বিষয়ের শিক্ষার্থী চাকরিটা পেতো তাহলে তাকে কোন সমস্যাতে তেমন পড়তে হতো না।
আমরা যদি বাংলাদেশের অন্যান্য চাকরির খাতগুলো আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো যারা মেডিকেল থেকে পড়াশোনা করবে তারাই শুধুমাত্র ডাক্তার হতে পারবে, আবার যারা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করবে তারা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে, আবার যারা বাংলা, ইংরেজি, ইসলাম শিক্ষা, ইসলামী ইতিহাস, অর্থনীতি থেকে পড়াশোনা করবে তারা ওই বিষয়ক শিক্ষক হতে পারবেন। কিন্তু পর্যটনের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য কেন? পর্যটনে নাই কলেজ পর্যায়ে কোনো শিক্ষক নিবন্ধন। নাই শিক্ষা ক্যাডারের মতো একটি ভালো ক্যাডারে পর্যটন বিষয়ক শিক্ষার্থীদের কোন জায়গা। তাহলে পর্যটনের শিক্ষার্থীদের জায়গা কোথায় রইল ?

তাই এখন সময়ের দাবি পর্যটনের যে কাজগুলোতে পর্যটন বিষয়ক নিয়োগ প্রয়োজন ওইগুলোতে পর্যটন বিষয়ক শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া তাহলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশ একদিন এগিয়ে যাবে। এমনও হতে পারে বাংলাদেশ একদিন পর্যটননির্ভর দেশ হবে। আর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও সঠিক জনবল। তাই বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বিসিএস অনুমোদিত প্রশাসনের কাছে এখন সময়ের দাবি পর্যটন খাতের সকল চাকরিতে পর্যটনের ছাত্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া। তাহলে পর্যটনে যে পরিমাণ বাজেট ঘোষণা হয় তা সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

মোঃ সোহান হোসেন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102