জেলের ঘর আলো করে জন্ম নিলো চারুলতা।মুখে সবাই চারু বলেই ডাকে।সারা পাড়া মাতিয়ে বেড়ানো মেয়েটির বিয়ের বয়স পার হয় ভালো পাত্র জুটে না।বাবা শারীরিক প্রতিবন্দি,দুটো পা অকেজো,কোন মতো চেয়ারে বসে সারাদিন জাল বুনে।যে টাকা আসে তাই দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে।মাথায় আকাশ সমান চিন্তা নিয়ে চারুর বাবা মায়ের দিন কাটে।চারুর চেহারা অনেক সুন্দর কিন্তু কানেও শুনেনা কথাও বলতে পারে না।কিন্তু চারুকে দেখে হঠাৎ কেও বুঝতে পারবেনা চারুর সমস্যা আছে ।পাড়ার সবাই চারুর ইশারা বোঝে সেও সবার ব্যবহারে বোঝে কি বলতে চাইছে।
একদিন হটাৎ করেই চারুর বিয়ের কথা উঠলো,একি পাড়াতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে কাজ করে ভিনদেশী যুবক।বছর তিনেক হলো সে একপাড়াতেই থাকে।ব্যবহারে কেমন যেনো সবার বিশ্বাসের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে।যুবক চেয়ারম্যানের কথাতেই জেনে বুঝে বিয়ে করে চারুকে।প্রথমে চারুর বাবা মা রাজি না হলেও তাদের অবর্তমানে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজি হয়।বিয়ের মাস খানিক পরে হঠাৎ চারুর স্বামী নিখোঁজ। কোথায় গেছে কেনো গেছে কেও জানে না।চারু স্বামীকে ভিষণ ভালবাসে, স্বামীও তাকে ভালবাসে কিন্তু হঠাৎ তার কি এমন হলো একেবারে নিরুদ্দেশ।চারু তখন ও চেয়ারম্যানের বাড়িতে আছে স্বামীর পথ চেয়ে, কিছু দিন পর বুঝতে পারে সে মা হতে চলছে।দুই মাস ছয় মাস কেটে যায় স্বামী আর ফিরে আসে না,চারু চেয়ারম্যানের বাড়ি কাজ করে আর পেটের সন্তান বড় হতে থাকে।একবছর পরে হঠাৎ করেই চারুর স্বামী ফিরে আসে। কোথায় ছিলো কেনো ছিলো কিচ্ছু বলে না।এতো দিনে চারু ছেলে সন্তানের মা।স্বামীকে দেখে চারু খুশি হলেও ছেলে দেখে খুশি হয় না বাপ।বাপের থেকে বেশি ভালবাসে আর আদর করে চেয়ারম্যান।চারু বোবা কালা হলেও বুঝতে পারে সন্তানকে বাপে আদর করে না,কিন্তু কেনো করে না তা বুঝতে পারে না।চারুর স্বামী বার বার চারুকে বলে এই ছেলে চেয়ারম্যানকে দিয়ে দাও আমরা আরেকটা বাচ্চা নিবো।চারু শুধু কাঁদে আর ভাবে কেনো দিবো।আমার প্রথম সন্তান,কাওকে দিবো না।চারুর বাবা মা সহ আস্তে আস্তে সমাজের সবার কানে কানে পৌঁছে যায় চারুর স্বামী ফিরে আসার খবর আর সন্তান চেয়ারম্যানকে দিয়ে দেবার খবর।সমাজে ভালো মন্দ মানুষ আছে তারা চারুর স্বামীকে চাপ সৃষ্টি করে সে এতোদিন কোথায় ছিলো আর ফিরে এসে কেনো সন্তান মেনে নিতে চাই না। জোরাজোরির একপর্যায়ে স্বীকার করে এই ছেলে আমার না চেয়ারম্যানের।তারপর পুরো ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরে “চেয়ারম্যানের কুনজর অনেক আগে থেকেই চারুর উপর ছিলো,তাছাড়া চেয়ারম্যানের চার মেয়ে কোন ছেলে নেই। চেয়ারম্যানের কথাতেই চারুকে বিয়ে করি।আমি আজ পর্যন্ত চারুকে স্পর্শ করিনি,প্রতিদিন রাতে খাবারের সাথে চারুকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে চেয়ারম্যান চারুর ঘরে যেতো,স্বামী হয়ে দিনের পর দিন সহ্য করতে হয়ছে,চেয়ারম্যানের কথাতেই সে নিরুদ্দেশ হয়ে ছিলো।এখন ভুল বুঝতে পারছে নিজের বৌ নিতে আইছে।গ্রামের সবাই অবাক বাকরুদ্ধ,মানুষ এমন মন-মানসিকতার কেমন করে হয়।একটা অসহায় মানুষের জীবনে এতো বড় অন্যায় চেয়ারম্যানের মতো সচেতন মানুষ কিভাবে করে।চেয়ারম্যান কে পুলিশে ধরে নিয়ে যায় আর চারুর স্বামী ছেলেকে নিয়ে সুখে দিন কাটাতে থাকে।