জহিরুল ইসলাম ইসহাকী
===============
আজকের এই রাত মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। পবিত্র শবে মেরাজ হলো সেই রাত, যেদিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে আল কুদস (জেরুজালেম) হয়ে সপ্ত আসমান পেরিয়ে আরশে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছেছিলেন।
এই রাতটি ইসলামের ইতিহাসে একটি অদ্বিতীয় মুজিজার স্মারক। এটি এমন এক অভূতপূর্ব ঘটনা যা পৃথিবীর কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, তবে মহান প্রভুর অসীম কুদরতে এটি ঘটেছে।
মেরাজের বিশেষত্ব
১. ইসরা এবং মেরাজ:
মেরাজ দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথমত, ইসরা—যেখানে নবীজী (সা.) মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় গমন করেন। দ্বিতীয়ত, মেরাজ—যা আসমানসমূহ ভ্রমণ করে সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছানোর ঘটনা।
২. নামাজ ফরজ হওয়ার রাত:
এই মেরাজের রাতেই ৫০ ওয়াক্ত নামাজ আদেশ করা হয়, যা পরবর্তীতে উম্মতের জন্য সহজ করে ৫ ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হয়।
৩. জান্নাত-জাহান্নামের দৃশ্য:
নবীজীকে (সা.) জান্নাতের নেয়ামত এবং জাহান্নামের শাস্তির দৃশ্যাবলি দেখানো হয়।
কুরআনুল কারিমের বর্ণনা
মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে:
> “পবিত্র এবং মহিমাময় সেই সত্ত্বা, যিনি তার বান্দাকে রাতের একটি অংশে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চতুর্দিকে আমি বরকতময় করেছি, যাতে আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”
(সূরা বনী ইসরাইল: আয়াত ১)
মেরাজের শিক্ষা
১. তাওহিদের প্রতি বিশ্বাস:
মেরাজ আল্লাহর অস্তিত্ব এবং একত্বের প্রতি অবিচল বিশ্বাস স্থাপনের দিকনির্দেশনা দেয়।
২. নামাজের গুরুত্ব:
নামাজ শুধু ইবাদতের মাধ্যম নয়; এটি আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সরাসরি সংযোগ।
৩. আখিরাতের প্রস্তুতি:
মেরাজের রাত জান্নাত ও জাহান্নামের বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে অনুপ্রাণিত করে।
মেরাজের রাতে আমাদের করণীয়
১. ইবাদত-বন্দেগি করা।
২. বেশি বেশি নামাজ আদায় করা।
৩. কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া করা।
৪. গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং
৫. ভবিষ্যতে সৎ পথে চলার সংকল্প করা।
উপসংহার
পবিত্র শবে মেরাজ আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী হওয়ার এক মহান সুযোগ। এই রাতের ফজিলতকে কাজে লাগিয়ে আমাদের উচিত ইবাদতের মাধ্যমে নিজের জীবনকে পরিশুদ্ধ করা।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শবে মেরাজের ফজিলত দান করুন এবং আমাদের সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমিন।