সুলতানা রাজিয়া, স্টাফ রিপোর্টার:
‘মর্যাদাপূর্ণ বার্ধক্য: বিশ্বব্যাপী প্রবীণ পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’, শ্লোগানে আজ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ফ্যামিলির যৌথ উদ্যোগে আজ ১ অক্টোবর’২৪, মঙ্গলবার সকাল ১০.৩০ ঘটিকায়, ধানমন্ডি ড্যাফোডিল প্লাজায় ৭১ মিলনায়তনে প্রবীণদের কল্যাণ ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা: সমাজ ও সরকারের করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক এবং স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প (চক্ষু, ডায়াবেটিস, ফিজিওথেরাপি, হৃদরোগ, রক্তচাপ ও মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি বিষয় পরীক্ষা ও পরামর্শ/ব্যবস্থাপত্র প্রদান)—এর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন ও সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রবীণদের আন্তর্জাতিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্যার উইলিয়াম বেভারিজ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মেজর জেনারেল অবঃ জীবন কানাই দাস।
শুরুতে গোলটেবিল বৈঠক ও প্রবীণ দিবসের প্রেক্ষিত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির মহাসচিব ইঞ্জি. মোঃ ফজলুল হক ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ফ্যামিলি সিইও ড. মোহাম্মদ নূরুজ্জামান, গোলটেবিল বৈঠকে সম্মানিত প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম. শমসের আলী, সাবেক সেনা বাহিনী প্রধান লে. জেনারেল অবঃ হারুনর রশীদ বীরপ্রতীক, ঢাকা আহছানিয়া মিশন এর সভাপতি প্রফেসর ড. গোলাম রহমান, বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ সাবেক অধ্যক্ষ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী প্রফেসর ডা. মুহাম্মাদ আমিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আবু আলম মোঃ শহীদ খান, মেডিসিন এডভাইজার টু গ্রামীণন টেলিকম ট্রাস্ট এন্ড চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জালাল আহমেদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশাল ইউনিভার্সিটি উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. এস এম মাহবুবুল হক মজুমদার, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য প্রফেসর ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক, বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান এ.কে.এম. রেজাউল হক, বারডেম একাডেমী উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. হুমায়ুন কবির চৌধুরী, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল লিঃ চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সরদার এ. নাঈম, সোসাইটি অব সার্জনস্ অব বাংলাদেশ সভাপতি প্রফেসর ফিরোজ কাদের, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক (আইন) ড. নাহিদ ফেরদৌসী, বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র, গাজীপুর পরিচালক মিসেস মাসুমা খাতুন লিপা বিআইডিএস এর সাবেক সিনিয়র রিচার্চ ফেলো ড. শরীফা বেগম প্রমুখ।
জাতীয় গোল টেবিল বৈঠকে বিজ্ঞ আলোচক বৃন্দ মর্যাদা পূর্ণবার্ধক্য: বিশ্বব্যাপী প্রবীণদের পরিচর্যা ও সহায়ক ব্যবস্থা শক্তিশালী করণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সবধরনের বৈষম্য নিরসনের আহবান জানিয়ে বলেন
প্রবীণরা তাঁদের প্রাজ্ঞতা অভিজ্ঞতা দিয়ে উজ্জ্বল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। প্রবীণ বান্ধব সমাজ কাঠামো বানানোর জন্য প্রয়োজন সরকারি পর্যায়ে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন যা দেশের প্রচলিত প্রবীণ কাঠামো, নীতিমালা পর্যালোচনা করে সকল অধিকার নিশ্চিত ওমর্যাদাপূর্ণ করবে।।
সবমিলিয়ে কল্যান মুখী স্বস্থিময় জীবনের বিধান নিশ্চিত করতে হবে। উল্ল্যেখ্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্তের আলোকে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ১৯৯১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
আলোচকগন আরো বলেন, প্রবীণের অভিজ্ঞতার আলোকে তারুণ্যের উদ্যমকে সঠিক পথে পরিচালনার মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। সভ্যতার অগ্রযাত্রায়ও প্রবীণদের অবদান অনস্বীকার্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের পথক্রমে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও প্রবীণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদে ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি শক্তিশালী যত্ন ও পরিচর্যা কাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবে এখনো পরিপূর্ণ ভাবে কার্যকর নয়।
প্রবীণদের মর্যাদাসম্পন্ন, দারিদ্র্যমুক্ত, কর্মময়, সুস্থ ও নিরাপদ পারিবারিক ও সামাজিক জীবন নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা’ ও ‘বাবা-মা ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হলেও তা শুধুই আইনে আছে। প্রবীণদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে নামে মাত্র এবং আশ্রয় ও স্বজনহীন প্রবীণদের জন্য আটটি প্রবীণ নিবাস স্থাপন করা হয়েছে তা খুবই অপ্রতুল্য।
প্রবীণ জনগোষ্ঠীর যথাযথ কল্যাণ নিশ্চিতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং তারা যাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা ও প্রযুক্তিগত সাম্যতা অর্জন করতে পারেন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেষ্ট হতে হবে। চিরায়ত বাংলার পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সব স্তরে প্রবীণবান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান বক্তারা।
আলোচকগন আরো বলেন বার্ধক্যে নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্বসহ বয়সজনিত বহুবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সমাজের সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় এ জনগোষ্ঠী যেন শেষ বয়সে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি জনহিতৈষী সংগঠন ও বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি প্রবীণবান্ধব সমাজ গঠনে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধেও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আলোচকগন বিশ্বের প্রবীণদের সুস্বাস্থ্য, শান্তিময় ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন কামনা করেন।
আলোচকগন আরো বলেন
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের উন্নয়নে প্রবীণদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামগ্রিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রবীণদের জন্য কল্যাণমুখী কাজে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের প্রবীণ নাগরিকদের মর্যাদাপূর্ণ বার্ধক্য নিশ্চিতকরণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি শক্তিশালী যত্ন ও পরিচর্যা পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। আগামী এক বছরের জন্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহন এর আহবান জানান সভাপতি ডক্টর হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি আরো বলেন আমরা শুধু কথায় নয় কাজ করে দেখাতে চাই। প্রবীণদের জন্য বাস্তব কিছু করতে চাই।