লেখক:- ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আর নেই ইন্না-লিল্লাহ, যিনি ছিলেন একা ধারে ডাক্তার, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উপস্থাপক অভিনেতা রেডিও টিভি ব্যক্তিত্ব!
আমি দারুন অজপাড়াগাঁয়ের একজন “সিরাজুল ইসলাম” কিন্তু দারুন ভাগ্যবান একজন মানুষ! আমার বাড়ীর অনতিদূরে দক্ষিণ এশিয়ার বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদ “মাওলানা শামসুল হকের” বাড়ী যাকে খুব কাছের থেকে পদধূলি নেয়ার সৌভাগ্য হয়েছে, তার কাছাকাছি জাতির জনক “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের” বাড়ী যার সাথে কম পক্ষে দশ বার দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছে টুঙ্গিপাড়া ও ৩২ নাম্বার ধানমন্ডির বাড়ীতে! আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা প্রায় শতবার তওয়াফ করার সৌভাগ্য আল্লাহ দিয়েছেন! আমি ধন্যাঢ্য নই তবুও গর্বিত!
প্রিয় পাঠক, আমার বিষয় “দি গ্রেট বদরুদ্দোজা চৌধুরী” যার পিতা কফিল উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রাদেশিক মন্ত্রী ও আওয়ামী নেতা! তিনি শেরেবাংলা সোহরাওয়ার্দী ভাসানী তর্কবাগীশ মুজিবের সাথে রাজনীতি করেছেন! বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্র “মাহি বি চৌধুরী ও এ-যুগের রাজনৈতিক অঙ্গনে পঁচে যাওয়া রাজনৈতিক লোকদের ভিড়ে একজন সৎ চরিত্রবান আদর্শ ব্যক্তিত্ব!
এক কালে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর চেয়ে ভালো কার্ডিয়াক ডাক্তার বাংলাদেশে ছিলো না! তার চেম্বার ছিলো পৈতৃক নিবাস “মগবাজারে”!
আমি তখন একজন স্মার্ট যুবক অনেক ভালো একটা সরকারি অর্গানাইজেশনে চাকুরী করি, কোন কারন বশতঃ ডাঃ বদরুদ্দোজার সেখানে আনাগোনা ছিলো! আমার বুকে ব্যথা ডান পাশ বাম পাশ পিঠে ঘাড়ে এমনি সেন্ট্রাল এসি তে বসে বসে চাকুরী করায় উল্লেখ্যিত রোগ দেখা দিলো! তখন আমি কুমার, সংসার জীবন শুরু হয় নাই! হার্ট পচে গেলো কিনা সেই ভয়ে ডাঃ বদরুদ্দোজার মগবাজার চেম্বারে গেলাম, শত লোকের ভীড়, বিক্রমপুরের মানুষ স্বভাবতই কৃপণ (রহস্য করলাম) গোটা চল্লিশ সিট রোগী বসার বাকী লাইন রোডে! দুই মাস আগে সিরিয়াল দেয়া পাবলিক সখানে! পরিচিত হলাম “সিনেমার খান আতা সাহেবে”র সাথে, মেয়েকে দেখাতে আসছেন! বললেন, দুই ঘন্টা বসে আছি! বললাম, সংবাদ পাঠাতেন ভিতরে, উত্তর দিলেন তিনি সিরিয়াল ভেঙে কাউকে দেখেন না! আমি নিরাশ হলাম!
ডাক্তারের চেম্বার দারোয়ান কে বললাম, আমার ভিজিটিং কার্ডটা একটু পৌঁছে দিতে, দারোয়ান কার্ড নিতে নিতে বললেন, লাভ হবে না স্যার!
কার্ড পৌঁছে গেলো এবং আমাকে ভিতরে ডাকলেন! রোগী দেখতে দেখতে, কুশল বিনিময় করলেন এবং বললেন, এই রোগী টা বের হওয়ার সথে সাথে ইঞ্জিনিয়ার কে পাঠিয়ে দিও!
ঢোকার পর বেডে শোয়ায়ে বুক-পিঠে ‘স্টেথোস্কোপ’ দিয়ে চেক করতে করতে শুনলেন আমার অভিযোগ কি? টেবিল সামনে বসায়ে প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে বললেন, ” “movable pain is not disease” শিখলাম! তিনি কয়েকটা টেস্ট দিলেন আর হাসতে হাসতে বললেন, টেস্ট কয়টা করে আসেন, এত মেয়ে মানুষের ভিতর চাকুরী, চরিত্র ঠিক আছে তো? আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চুপ থাকলাম! উনি বললন, এখানে আর আসার দরকার নাই, আপনার অফিস পাড়ায় যখন দেখা হয় আমাকে দেখাবেন তবে শিওর you have no disease! ভিজিট নিলেন না!
আমি বললাম, সিনেমার খান আতা বসে আছেন দুই ঘন্টা ধরে, উনি দারোয়ান কে ডেকে বললেন, খান আতা সাহেব কে ইনি চিনিয়ে দিবেন, দু-একজন পর তাকে নিয়ে এসো! আমি শ্রদ্ধা ভরে ছালাম দিয়ে বেরিয়ে এলাম! খান আতাকে বলে এলাম, এখন ই ডাক পাবেন স্যার! উনি আমাকে ধন্যবাদ দিলেন!
প্রিয় পাঠক, আমার টেস্ট করতে যেতে হলো মিটফোর্ড ডাঃ হুমায়ুন স্যারের কাছে, তখন এত ভূঁইফোড় প্যাথলজি সেন্টার ছিলো না। আমার কোন অসুস্থতা ছিলো না, আমার অফিস পাড়ায় ডাঃ বদরুদ্দোজা কে দেখালম টেস্ট রিপোর্ট, হাটুর উপর রেখে লিখে দিয়েছিলেন একটা ঔষধ নাম “Ora cine K “, দুইমাস পর আমার অফিস পাড়ায় বসে আবার বলাপ করলে লিখে দিয়েছিলেন, ” Repeat ” ! আমি আজ ও জানি না এই ঔষধ টার কাজ কি? আমাকে যে টেস্ট দিয়েছিলেন তা ছিলো যৌন রোগের, সিফিলিটিক জার্ম আছে কি না? কথাটা ডাঃ হুমায়ুন স্যার, মিটফোর্ড আমাকে বলেছিলেন!
ডাঃ বদরুদ্দোজার মগবাজার বাসায় বসে “মেজর জিয়া” বিএনপি গঠন করেন এবং তাকে দলের জেনারেল সেক্রেটারি করা হয়! আকাশ চুম্বি সন্মানিত ব্যক্তি নষ্ট হলেন! রাজনীতি বড় খারাপ যেখানে সন্মান ধরে রাখা বড় কঠিন!
জিয়াউর রহমান হত্যার দিন তিনি পাশের রুমে ছিলেন এবং সৌভাগ্য বশতঃ বেঁচে যান! সংসদে এরশাদ সাহেব এমন ইঙ্গিত করেছিলেন যেন জিয়া হত্যা বদরুদ্দোজা চৌধুরী জানেন! এই ভালো মানুষ টাকে বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ১৪ ই নবেম্বর রাস্ট্র পতি করেন এবং তার নিরপেক্ষ ভুমিকার জন্য
২০০২ সালে ২১ শে জুন রাস্ট্র পতি পদ হারান!
তাকে ততকালীন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ মিলে অনাস্থা এনে সেই চিঠি ডাক্তার বদরুদ্দোজার ছেলে সাংসদ “মাহি বি চৌধুরীর” হাতে তাকে পৌছানো হয় যা মাহী কোন এক সংসদ ভাষনে বলেছিলেন! ‘ছেলের হাতে বাবার ফাঁসির আদেশ’
ফুসফুস সংক্রামনে উত্তরা মেডিকেল হাসপাতালে ২ রা অক্টোবর ভর্তি করা হয় এবং শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে তিনটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন! মৃত্যু কালে বয়স ছিলো ৯৪ বছর!
আমি ব্যক্তিগত ভাবে দারুন মর্মাহত তার মৃত্যু তে, বর্তমান সরকার অনেকটা অগোছালো, অন্য যেকোন সময় হলে তাকে যেকোন সরকার সিঙ্গাপুর নেয়ার দায়িত্ব নিতেন আমার বিশ্বাস!
আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারের শোক বহনের ক্ষমতা আল্লাহ দান করুন সেই প্রার্থনা করছি!
পিছে ফেলে গেলেন একজন যোগ্য উত্তরসূরী ও রাজনৈতিক দল ” বিকল্প ধারা”!
সবার কাছে এই কৃতি সন্তানের জন্য দোয়া চাচ্ছি!