কলমে: জাকির আলম
চেনা শহরেই তুমি থাকো। তোমার বাসার বিপরীত ব্লকেই আমার অবস্থান। তবুও তোমার দেখা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুনেছি স্বামী সন্তান নিয়ে তুমি অনেক ভালো আছো। এর মধ্যে আমাকে ভুলে যেতে তোমার সময় লাগেনি। অথচ বারংবার তোমাকে ভোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি আমি। তোমাকে ভুলে যাওয়ার মতো ভালোবাসিনি আমি। এখনো তোমার ফোন বা মেসেজের অপেক্ষায় থাকি। তুমি কোনোদিন ফিরবে না জেনেও মিথ্যা আশ্বাসে আমি ঘর বাঁধি। তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসার অপরাধে এখন আমি মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছি। ভুলে গেছি নিজেকে আমি। তা সত্ত্বেও তোমাকে বোঝাতে পারিনি আমার ভালোবাসার গভীরতা। তুমি আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে হেঁয়ালি করেছো। একটিবার তুমি আমার ভালোবাসাকে অনুভব করে দেখোনি। বরং আমার অনুভূতিকে পায়ের তলায় পিষে তুমি হেঁটে গেছো অবলীলায় সম্মুখের পথে। পিছু ফিরে কভুও আমার কষ্টকে পর্যবেক্ষণ করোনি তুমি। তুমি এতোটা নিষ্ঠুর প্রকৃতির হবে সেটা আমার আদৌ জানা ছিলো না। পৃথিবীতে এতো এতো মানুষ থাকতে আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসে ছিলাম। কিন্তু সেই ভালোবাসা আজ আমার বুকের ভিতর লোহার হাতুড়ি পিটায়। পাঁজর ভেঙে যায় আঘাতের কষ্টে। এখনো তোমার আগের ফোন নাম্বার এবং মেসেজ রেখে দিয়েছি। তোমার দেওয়া সেই ছবিগুলো দেখে থাকতে পারিনা কষ্টের যন্ত্রণায়। তোমাকে হারিয়ে যতোটা কষ্ট পেয়েছি হাজার জনমেও তা ভুলতে পারবো না। যেই তোমাকে একটা সময় হাত বাড়ালেও ছুঁতে পারতাম সেই তুমি আজ অন্যের ঘরণী। তোমাকে ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। অনেক দিন তোমার সাথে কথা হয় না। কথা না হতে হতে বুকের ভিতর সহস্র কথার স্তূপ জমা হয়ে আছে। কোনোদিন বলতে পারবো কিনা তাও জানিনা। তোমাকে হারিয়ে জীবন্মৃত বেঁচে আছি। এর থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো। কিন্তু আমার মৃত্যুটা যদি তোমার বুকে মাথা রেখে হতো তবে মৃত্যুর কোনো কষ্ট আমার মনে হতো না। যে রাতগুলো তোমার সাথে সহবাসে কাটিয়েছি, তা মনে হলে বিষাদের মেঘ এসে ঢেকে রাখে আমাকে। মনের ছেঁড়া পাতায় কতো না স্মৃতি তোমাকে ঘিরে। একটা সময় তুমি আমি কতোটা কাছাকাছি ছিলাম। অথচ আজ তুমি নেই আমার জীবনে। সময়ের ব্যবধানে তুমি যখন অন্যের সন্তানের মা হয়েছো, আমি তখন নিঃসঙ্গতার মাঝে বেঁচে থাকার পায়তারা করি। আমার কোনো ইচ্ছেই আর অবশিষ্ট নেই। জীবনের প্রথম ভালোবাসার হাতছানি তোমার কাছেই পেয়েছিলাম। তোমার বুকে মাথা রেখে অনুভব করেছিলাম স্বর্গীয় সুখ। সেই সুখ আজ যন্ত্রণা হয়ে পুড়িয়ে মারে আমাকে৷ তোমাকে বুকে জড়িয়ে যখন নাকে মুখে গভীর ভালোবাসা মেখে দিতাম, তখন তুমি আরো বেশি শক্ত করে চেপে ধরতে আমাকে। জানিনা কতোটা সুখ পেতে তুমি তখন। এসব কিছু বিসর্জন দিয়ে তুমি এখন অন্য আকাশের ধ্রুবতারা। মন চাইলেই তোমাকে দেখতে পারিনা। ছুঁতে পারিনা শরীরের কোনো ভাঁজে। তুমি মানিয়ে নিয়েছো নতুন জীবন। বিপরীতে আমি একা থাকতে থাকতে ক্রমশ অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি। প্রচণ্ড নিকোটিনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছি আমি। তুমি চাইলেই দিতে পারো নষ্ট ছেলের তকমা। তাতেও কোনো দুঃখ নেই আমার। ভালোবাসার কষ্ট কতোটা ভয়ানক হতে পারে তা তুমি কোনোদিন বুঝবে না। যদি বুঝতেই তাহলে ছেড়ে যেতে না আমাকে। এখনো আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। কিন্তু সেই ভালোবাসার মাঝে কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তুমি হয়তো এতোদিনে আমার সব স্মৃতি মুছে ফেলেছো। অথচ আমার দ্বারা তা সম্ভব হয়নি। কেন যে তোমাকে এতো ভালোবাসতে গেলাম সেটা আমার জানা নেই। সতত মনে হয় তুমি ছাড়া আমার সবকিছু বৃথা। তোমাকে পাইনি তবুও মনের গহীন থেকে সর্বদা তোমাকে অনুভব করি। স্মৃতির আকাশে চোখ মেললেই তোমাকে দেখতে পাই। শুনতে পাই তোমার লাস্যময় মুখের হাসি। মাঝেমধ্যে মনে হয় ঘুরে আসি তোমার শহর থেকে। চুপিসারে দেখে আসি তোমার সাজানো সংসার। তোমার হেঁটে চলা পথের ধূলি গায়ে মেখে সুবাসিত হই ফুলের মতো। মন চায় তোমার সন্তান কোলে নিয়ে অনুভব করি বাবা হওয়ার অপ্রতিম সুখ। নারীর পূর্ণতা যখন সন্তান গর্ভধারণে তখন তুমি সর্বোচ্চ সুখের ঠিকানা পেয়েছো৷ বিপরীতে আমি একা থাকার যন্ত্রণায় নিষিদ্ধ পৃথিবীতে ছিটকে পড়েছি। সেখান থেকে আমাকে বাঁচানোর মতো কেউ নেই। আমার পুরো অস্তিত্ব জুড়ে এখন শুধু অন্ধকার। ভুলে গেছি আলোতে থাকার স্বাধীনতা। আপন পরিজন ছেড়ে একাই হেঁটে এসেছি অনেকটা পথ। যে পথের কোনো পরিসীমা নেই। কেউ চাইলেই আমার পরিসর খুঁজে পাবে না। ঠিকানাহীন এক অচেনা পৃথিবীতে অবস্থান নিয়েছি আমি। সেখান থেকেও দেখি তোমার আকাশের ঝকঝকে রোদ। কখনো দেখি দলছুট মেঘের আনাগোনা। বৃষ্টি এলেই তুমি যখন বাহিরে হাত বাড়িয়ে দাও তখন ফোঁটা ফোঁটা শিশির কণার মতো ভালোবাসা চুয়ে পড়ে তোমার আঙুলের ফাঁকফোকরে। তখন আমিও নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকি মহাশূন্যের ওপার তোমাকে দেখে। ভাব এবং কল্পনার সংমিশ্রণে তোমাকে খুঁজে পাই স্মৃতির রংরুটে। যখন প্রচণ্ড ধূমপানের নেশা ধরে যায় তখন দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আলো জ্বালিয়ে পুড়তে থাকি শুকনো পাতার জমে থাকা স্তূপ। সেখান থেকে কিছু আলো জমিয়ে রেখে স্বপ্নের মাঝে দেখতে যাই তোমার ঘুমকাতর মুখখানি। কখনো শুকনো চুমু তোমার কপালে বসিয়ে ফিরে আসি আমার গন্তব্যহীন পৃথিবীতে। জানিনা ঘুম ভাঙলে আয়নাতে মুখ রাখতেই বুঝতে পারো কিনা তোমার ঘরে আমার উপস্থিতি। বুঝতে না পারলেও দোষের কিছু নেই। তবুও একান্তই যদি বুঝতে না পারো তাহলে মন খারাপের আকাশে চোখ মেলে অপলক তাকিয়ে থেকো নিঃসীম ভাবনার মাঝে। সহসাই তোমাকে ছুঁয়ে মনের বিষাদ দূর করে মন ভালো করে দিবো নিবিড় আলিঙ্গনে। এতেও আমি সুখ পাবো তোমাকে ছুঁয়ে। তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো কথার ঝংকার তোলে কখনো সখনো। গল্পরাও বাদ থাকে না একেবারে। তবুও তুমি কোনোদিন বুঝবে কিনা আমার ভালোবাসা, এটাও জানিনা। তীব্র কষ্ট বুকে ধারণ করতে করতে বুকটা আমার ফেটে যাওয়ার উপক্রম। চোখের পাতায় ঘুম নেই। জৈবিক ক্ষুধার কোনো প্রবৃত্তি নেই। তোমাকে হারিয়ে বাহ্যিক টানাপোড়েন লেগেই আছে৷ মাঝির নৌকায় পার হতে হতেই বেলা ফুরিয়ে এসেছে। একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। গোধূলির ম্লান আভা মাখিয়ে দিবে আমার কলেবরে। তারপর ঝিঁঝি পোকার করুণ আর্তনাদ চমকে দিবে আমাকে। এর ফাঁকেই দূরের মাঠ থেকে ভেসে আসবে শিয়ালের হাঁক। দখিনা বাতাস শো শো শব্দ করে ক্রমাগত বইতেই থাকবে। পাখিরা নীড়ে ফেরার আনন্দে ডানা ঝাপটিয়ে কিচিরমিচির শব্দ করবে। এর ফাঁকে বৃদ্ধ পালকগুলো খসে পড়বে শরীর থেকে। গাছের বাকল ধরে উঠে আসবে বিষাক্ত সাপ। ওঁতপেতে থাকা ক্ষধার্ত পেঁচা এসে ধরে নিয়ে খাবে সাপগুলো। পরিবেশ জুড়ে তখন বিষণ্ণতা নেমে আসবে। কেউ কাউকে পরোয়া করবে না। যাকে পাবে তাকেই ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। ধর্ষিত নারী পুনর্বার ধর্ষিত হওয়ার ভয়ে লুকিয়ে থাকবে গৃহকোণে আবদ্ধ হয়ে। বৃদ্ধ মা-বাবা মৃত্যুর প্রহর গুণতে গুণতে চোখের কোণে অশ্রু ঝরাবে। কেউ পাশে বসে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাবে না। কেউ নিবে না তাদের শরীরের যত্ন। ঘৃণা আর অবহেলায় বৃদ্ধ মা-বাবা একদিন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমাবে। সন্তানগুলো মায়া কান্না কেঁদে ভাগ বসাবে রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর। মুহূর্তেই ভুলে সব জন্মদাতা মা-বাবাকে। বাস্তবতা যখন তুমুল কঠিন তখন যুদ্ধে নামবে তরুণ জোয়ান। দেশ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠবে দেশ প্রেমিক। কিছু লোক স্বার্থের টানে বিপরীত পথ বেছে নিবে। একটা সময় পর মানুষ ভুলে যাবে মানুষের নীতিবোধ। তখনো আমি তোমার সান্নিধ্য পেতে ছুঁটে আসবে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। তোমাকে ফিরে না পাই তোমার চাতাল ঘেঁষে গড়ে তুলবো আমার নিকেতন। প্রতিনিয়ত তোমাকে দেখার নিমিত্তে তাকিয়ে থাকবো বেড়ির আড়াল থেকে। কখনো চোখে চোখ পড়লে লজ্জায় মিশে যাবো আমি। তারপরেও বারংবার নির্লজ্জ হয়ে তোমাকে দেখতে থাকবো মনের দরজা খুলে। তোমাকে দেখার নেশা লক্ষ জনমেও ফুরাবে না। ঐশ্বরিক মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন তোমার মুখখানি। দেখলেই নেশা ধরে যায়। মন চায় কাছে পেতে। শরীর চায় তোমার শরীরে ডুবিয়ে দেই চেতনার সমুদ্র। সাঁতরাতে থাকি মনপুত ভালোবাসায়। যাপিত ইচ্ছাকে পূরণ করতে কতো শত বায়না ধরি তোমার কাছে। হয়তো পূরণ হবে না জেনেও তোমাকে নিয়েই মিথ্যা স্বপ্ন দেখি। বিষাদের ঘুম ভাঙলেই দেখি তুমি অন্যের। যখন চেতনা ফিরে আসে তখন ভয়ানক অন্ধকার এসে গ্রাস করে আমাকে। তোমাকে আর কাছে পাওয়া হয় না। ধরা হয় না তোমার হাত। বলা হয় না মনে জমানো কথাগুলো। শুধু দেখতে পাই তোমার আকাশে ঝকঝকে রোদ। অন্যথায় সব বৃথা। সব মিথ্যার আস্ফালন। অত্যধিক মায়ায় নিমীলিত হয়ে যাই আমি। এতত্সত্ত্বেও তোমার ঠিকানা খুঁজে পাই না। চেনা শহরের এক বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ হয়ে ভাবতে থাকি তোমার কথা। তুমি কি সেটা বুঝতে পারো ? তুমি কি সেটা জানতে পারো ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই রীতিমতো ক্লান্ত আমি। যা কোনোদিন তুমি বরাবর পৌঁছে যাবে না। আটকে থাকবে বদ্ধ প্রাচীরে।