কলমে: শেখ আশরাফ
পাহাড়ের বুক চিরে নামা নদীকে কতবার চিৎকার করে বললাম..
একবার তোমার হাতটা বাড়াও..
না-দেখার ভান করে দুলতে দুলতে চলে গেলো ত্রিবেণী মোহনায়।
মেঘালয়ের পাষাণে প্রস্ফুটিত রোদরঞ্জনকে ইশারায় বললাম..
একটু রক্তিম সৌন্দর্য ধার দাও..
আড়চোখে তাকিয়ে আবার পাহাড়ী বাতাস মাখতে লাগলো নয়নাভিরাম মুগ্ধতায়।।
আসমানী আকাশে মুখ তুলে পরিযায়ী পাখিদের অনুরোধ করলাম..
তোমাদের একটু উৎসারিত প্রশান্তি দাও..
আমার কথা ভুলে আপনমনে উড়তে উড়তে ওরা চলে গেলো সুদূর সাইবেরিয়া।
পানসিতে ভাসতে ভাসতে আহিরণ বিলে জলময়ূরীকে বললাম..
তোমার ডানা থেকে খসে যাওয়া একটা নীল পালক দাও..
আমাকে আড়াল করে স্বচ্ছ সলিলে প্রণয়িনীর আনন্দধারায় মিশে গেলো তার নীলকায়া।।
এক চৈতালি বিকেলে মেহগিনীর ডালে বসা বনটিয়ার যুগলবন্দীকে আবদার করলাম..
তোমাদের নিগুম আলিঙ্গন আর খুনসুটি মাখতে চাই..
ওরাও সুখের তরঙ্গে তরঙ্গে হাবুডুবু খেতে খেতে হারিয়ে গেলো সবুজের আড়ালে।
শাল্মলী তরুরাজের বিভাজিকায় বিভাজিকায় হাঁটতে হাঁটতে অরণ্যের কাছে বায়না ধরলাম..
আমি তোমার চিরদিনের চিরসখা হতে চাই..
একটা বেপরোয়া বেওয়ারিশ বাতাস এসে কানেকানে না বলে গেলো বৈষ্ণবী অন্তরালে।।
শ্রাবণের বারিধারায় ভিজতে ভিজতে শিস কেটে গান গাওয়া চাষীকে জোর করলাম..
লাঙ্গলের ফালে দেখতে চাই মাটির হাসি..
ঘর্মাক্ত শরীর কর্ণপাত না করে বলদের পিছনে হেলতে দুলতে চষে দিলো ধূসর মাটির নরম বুক।
বৈশাখী সন্ধ্যায় সুবর্ণরেখার কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা কাকতাড়ুয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম..
আমি তোমার সাথে নদীর উপন্যাস লিখতে চাই..
ঝোড়ো বাতাসে দুলতে দুলতে একটানা অনর্গল শুনিয়ে দিলো জমে থাকা বুকচাপা সুখ-দুঃখ।।
উত্তরবঙ্গের চা-বাগানের একফালি সবুজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাহাড়ী কিশোরীকে বললাম..
তোমার চা-পাতার টুকরীটা আমার পিঠে ঝুলিয়ে দাও..
বাঁকা চোখে একবার দেখে নরম আঙুলের ছোঁয়ায় আবার ছিঁড়তে লাগলো সবুজ কলির সবুজ হৃদয়।
ফাল্গুনী প্রভাতে মতিঝর্ণার কোলে বসে প্রাঞ্জল পাহাড়ী ঝর্ণাকে প্রার্থনা করলাম..
তোমার আনন্দসুধায় ভরিয়ে দাও আমার ক্ষয়িষ্ণু মন..
নির্বাকচিত্তে আপন মহিমায় বলে গেলো সুদীর্ঘ জীবনের আপন কথা মৃন্ময় অক্ষয়।।
পূর্ণিমার চাঁদকে মহাকাশের ঠিকানায় লিখলাম কত গোপন চিঠি পাতার পর পাতা..
আমাকে অল্প দাও তোমার মণিকাঞ্চন জ্যোৎস্না..
আমার বেহায়া মুখ এখনও চেয়ে আছে সৌদামিনীর পানে উৎসুক নয়নে উত্তরের আশায়।
পশ্চিম দিগন্তে অস্তগামী লাল রবিকে করলাম কত বিনম্র আবেদন নিবেদন..
আমাকে একটু রক্তিম আভায় রাঙিয়ে দাও সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণে..
চোখের সামনে মৌনব্রত মাধুকরী পূজারীর মতো হারিয়ে গেলো আকাশের ঝুল বারান্দায়।।
ফাল্গুনের আগুন মাখা পলাশকে জড়িয়ে ধরে কত কান্নাকাটি করলাম রাজপথের চৌরাস্তায়..
আমাকে একটি ঝরে পড়া তোমার দুঃখ দাও..
চৈতালি বাতাসে তুনুসরোবর দুলিয়ে তোমার প্রাঞ্জল কণ্ঠে শুরু হলো হারানো দিনের গান।
গঙ্গার জলতরঙ্গে জলতরঙ্গে ভাসা মাঝিকে নীলপুর থেকে ডাকলাম বেশ কয়েক বার..
মাঝি পার করো আমারে ভবসিন্ধু মাঝারে..
জীবন মাঝি লালনের গান আওড়াতে আওড়াতে ভুলে গেছে আমার আবেগী অভিমান।।