জাসমিনা খাতুন
রাতের নৌকায় জেগে আছে ছোট্ট একটি লন্ঠন।
মিটিমিটি করে জ্বলছে আলো, খুব বেশি প্রসারিত নয়।
জাল বিছিয়ে রেখেছে জলে, ভোরবেলা মাছ তোলা হবে।
পরিষ্কার শার্টে আতর মেখে মাছ কিনতে আসবে অভিজাত বাঙালিরা।
রাতের শেষ তারাটি ঘুমোতে যাবার আগে চুপি চুপি তুমি একবার এসো এই ঘাটে।
তোমাকে একটা মাছ দেবো, তুমি লুকিয়ে রান্না করে খেও,
তাহলে তোমার মুখে একটু স্বাদ জেগে উঠবে।
খুব বাল্যবয়সে সাদা থান উঠেছে, বৌঠান তোমার গায়ে;
সেসব দেখে আমার খুব কষ্ট হয়,
যখন দাদা বেঁচে ছিল তখন মাছের মাথাটা তোমাকে তুলে দিতেন তোমার পাতে।
আমার ইচ্ছে করে তুমি আর পাঁচটা মেয়ের মত স্বাভাবিক থাকো,
কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারিনা, আমারও বউ-বাচ্চা আছে।
না থাক, একাদশী পালন করতে করতে আমি অভ্যস্ত,
নতুন করে মাছ খেয়ে কাঁটা আটকে যাবে আমার চলার সমস্ত পথে।
আমি এক বেলা খেয়ে দিব্যি আছি আমার মাটির দেবতা নিয়ে।
যদিও সে ঠুঁটো, প্রতিবাদ করতে পারেনা, পাথর কিনা, তাই পাথর হয়ে থাকে।
তা না হলে, আমাকে একা পেয়ে যখন জমিদার ঢুকেছিল রাতদুপুরে, আমার খবর নিতে,
দু কেজি আটা আর কুড়িটা টাকা সাথে।
তখন কি আর চুপ থাকতো আমার দেবতা? আমি তো সমস্ত নিয়ম-নীতি মেনে চলি সেই ছোট্ট বয়স থেকে।