স্টাফ রিপোর্টার:
ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর ইন্তেকাল করেছেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ জুমাবার দুপুর ২.৪৩ মিনিটে আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন, আমিন।
তাঁর ইন্তেকালে ভাষা সংগ্রামী মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ প্রতিষ্ঠিত গণ আজাদী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, কার্যকরী সভাপতি সৈয়দ রাশেদুল আলম তর্কবাগীশ ও মহাসচিব আলহাজ্ব মোঃ আকবর হোসেন গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন
মহান ভাষা আন্দোলন তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
আবদুল গফুর (জন্ম ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯) একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও ভাষা সৈনিক।ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৫ সালে একুশে পদক প্রদান করে।
জীবন্ত কিংবদন্তি ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর ১৯২৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ি জেলার পাংশায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হাজী হাবিল উদ্দিন মুন্সী ও মাতা শুকুরুন্নেসা খাতুন। ১৯৪৫ সালে মইজুদ্দিন হাই মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৪৭ সালে ঢাকার ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করায় তাঁর লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে। তবে ১৯৬২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রাবস্থাতেই তিনি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৭ সালে পাক্ষিক জিন্দেগীতে সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিশের বাংলা মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকায় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মিল্লাত ও ১৯৫৮ সালে দৈনিক নাজাত পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ছিলেন। যুদ্ধের পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইংরেজি দৈনিক পিপল, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দৈনিক দেশ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি শুরু থেকেই পত্রিকাটির ফিচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
সাংবাদিকতা ছাড়াও অধ্যাপক আবদুল গফুর আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পেশায় কাটিয়েছেন তাঁর জীবনের অনেকগুলো বছর। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দারুল উলুম (ইসলামিক একাডেমি)-এর সুপারিন্টেন্ডেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে এক বছর চট্টগ্রামে জেলা যুব কল্যাণ অফিসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ঢাকার আবুজর গিফারী কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা পরিচালক ছিলেন।
অধ্যাপক আবদুল গফুর একজন সুসাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও লেখক। বহু গ্রন্থের প্রণেতা তিনি। বিবিধ বিষয়ের উপর তিনি লিখে গিয়েছেন নিরলস। তাঁর গদ্যশৈলী ও ভাষার প্রাঞ্জলতা তাঁকে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বিপ্লবী উমর, সমাজকল্যাণ পরিক্রমা, কোরআনী সমাজের রূপরেখা, খোদার রাজ্য, ইসলাম কী এ যুগে অচল, ইসলামের জীবনদৃষ্টি, ইসলামের রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য, শাশ্বত নবী, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশ আমার স্বাধীনতা, স্বাধীনতার গল্প শোনো, আমার কালের কথা প্রভৃতি।