পুষ্টিবিদ লিনা আকতার:
ক্যান্সার চিকৎসার সময় শরীরকে সর্বোত্তমভাবে কাজ করার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য গ্রহন করা গুরুত্বপূর্ন।কেননা ক্যান্সার রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে থাকে। ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি সময় রোগীদের অনেকের মুখ শুষ্ক,স্বাদের পরিবর্তন, ক্লান্তি,মুখের আলসার,এবং বমি বমি ভাবসহ অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি একজন রোগীর খাবার গ্রহন করতে অনেক কঠিন করে তুলতে পারে।এ সময় কী খেতে হবে তা জানা জরুরী যেমন মুখের ঘা এর জন্য মসৃন খাবার,শুষ্ক মুখের জন্য ভেজা খাবার বা মসৃন টেক্সচার,খাবার গিলতে এবং চিবাতে অসুবিধার জন্য স্বাদে হালকা,সহজপাচ্য এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করতে হবে।পাশাপাশি খাদ্য বিষয়ক্রিয়ার ঝুঁকি কমাতে খাদ্য নিরাপত্তা অনুশীলন করা উচিত।
আসুন জেনে নেয়া যাক কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত
ডিমঃ ক্লান্তি কেমোথেরাপির একটি সাধারন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।ডিমে প্রোটিন এবং ফ্যাট থাকায় ক্লান্তি দূর করতে পারে সহজেই।একটি ডিমে(৪৪গ্রাম) প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ৪ গ্রাম ফ্যাট থাকে। চর্বি শরীরকে জ্বালানী দিতে সাহায্য করে আর প্রোটিন পেশী ভর তৈরি এবং বজায় রাখতে সাহায্য করে যা কেমোথেরাপির সময় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ন।এছাড়া ডিম নরম টেক্সচার হওয়ায় কেমোথেরাপি রোগীদের যাদের মুখের ঘা এর সমস্য তাদের জন্য ভালো।তবে ডিমকে ভালোভাবে রান্না করতে হবে খাদ্যের বিষয়ক্রিয়া প্রতিরোধ করতে।
ঝোল খাবারঃ কেমোথেরাপির সময় রোগীর স্বাদের পরিবর্তন দেখা যায়।যেমন পানির স্বাদ আলাদা অনুভুতি হতে পারে।এইজন্য শাকসবজি রস করে, অথবা ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরিকৃত খাবার ঝোল করে খেতে পারে।আবার মুরগি বা মাংসের হাড়ের নির্যাস করে সুপ করে খেতে পারে।এতে সোডিয়াম,পটাশিয়াম,ক্লোরাইড এবং ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টি পাবে এবং ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরন করতে পারবে।এছাড়া রোগীর বমি, ঘাম,ডায়রিয়া থাকলে সহজেই ইলেকট্রোলাইট পূরন হবে।
যদি মুখের আলসার এ ভুগে থাকে তাহলে ঝোল খাবার তার ব্যাথা দূর করতে পারে।
অতিরিক্ত পুষ্টির ঘাটতি থাকলে বিশেষ করে মুখ শুষ্ক,বা ক্ষুধা হৃস এ ভুগলে তার জন্য ঝোল ভালো কাজ করবে।এছাড়া ঝোল জাতীয় খাবার হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করবে।
বাদামঃ বাদাম ম্যাঙ্গানিজ এবং তামার একটি ভালো উৎস। এক আউন্স (২৮) বাদাম ২৭ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ এবং ৩২ শতাংশ তামা রয়েছে।এই খনিজগুলি শরীরে শক্তিশালী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে।তবে মুখে ঘা থাকলে খাবেন না।
কুমড়ো বীজঃ কুমড়ো বীজে প্রচুর পরিমানে চর্বি, প্রোটিন,ভিটামিন ই,এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।তবে কারো শরীরে আযরন ওভারলোডের ঝুঁকি থাকলে তা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
ক্রুসিফেরাস সবজিঃ ক্রুসিফেরাস সবজির মধ্যে বিশেষ করে ব্রকলিতে সালফেরন রয়েছে ভালো যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। গবেষণায় দেখা গেছে সালফোরামেন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
স্মুদিঃ যারা খাবার চিবিয়ে খেতে পারে না তাদের জন্য স্মুদি হতে পারে বিকল্প খাবার।
সাদা রুটিঃ যারা ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাবে ভুগছেন তারা সাদা রুটি বা নোনতা পটকা খেতে পারেন।এতে পোডিয়ামের ঘাটতি পূরনে কার্যকরী ভুমিকা রাখবে।
মাছঃকেমোথেরাপি ব্যাক্তিদের মাছ খাওয়া গুরুত্বপুর্ণ।কারন মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।মাছ ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।
সামুদ্রিক চর্বিযুক্ত মাছগুলিতে ভিটামিন ডি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হাড়ের জন্য ভালো।লেবুর রস দিয়ে মাছ ভাজা বা গ্রিল করুন।
পুষ্টিবিদ লিনা আকতার,
রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর।