দিদারুল ইসলাম নুহিন
প্রিয় আবির,
আসা করি ভালো আছো। আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। হঠাৎ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য দুক্ষিত। আসলে পরিস্থিতিটাই এমন ছিলো। চলে যাওয়া ছাড়া উপায় ও ছিলো না। মনে করো না যে ভুলে গেছি তোমায় মনে করো না যে প্রতিটা প্রতিশ্রুতি ছিলো মিথ্যা। কিন্তু হয়তো পরিস্থিতির ছিলো কোনো অন্য পরিকল্পনা। ছিলো শুধু আমাদের আবেগময় মায়া। ছিলো এই আবেগের মধ্যে কিছু সল্প ভালোবাসা। এই সল্প ভালোবাসার মধ্যেও ছিলো কিছু অজানা পরিকল্পনা। মনে করো না যেনো সকল আসাই কি ছিলো তাহলে মিথ্যা? না আসলে তা না। ছিলো সকল পরিকল্পনাই সত্য। শুধু ছিলো না তার কোনো বাস্তবতা। এতদিন পর হঠাৎ কেনোই বা মনে করলাম ভাবছো তাই? তোমার সাথে দেখা করার ইচ্ছা দেশ ছাড়ার আগে তাই। বেশি কিছু বললাম না চিঠিতে৷ দেখা করো হাজারো কথা বলা হবে। আমাকে চিঠি উত্তর দিও না একবারে তোমার সাথে দেখা করার সময়ই সব কথা বলবো৷ ২৫/৫/২০২৩ইং, এই দিনটাতে এয়ারপোর্টের ১ম টার্মিনালে রাত ১১টাই তোমার অপেক্ষার থাকবো৷
ইতি
তোমার প্রিয় আয়াত
চিঠিটি পাওয়ার সাথে সাথেই যেনো ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছিলো তার কাছে। কিন্তু হাত পা ছিলো পরিস্থিতির জন্য বাঁধা।
চিঠিটা পাই আমি ২৬/০১/২০২৩ তারিখে। যে যেতে বলে ২৫/৫/২০২৩ তারিখে। তাকে সেই শেষ দেখি ২৫/১১/২০২২তারিখে। তাহলে তাকে আবার দেখবো ৬মাস পর। চিঠি পাওয়া পর থেকে আমার জন্য যেনো সময় থেমে গেলো। সে যাওয়ার পর যেনো লেখকের কলম থেকে কালি বের হচ্ছে না তো সে কি লেখবে। নিরক্ষর হয়ে উঠে জীবন। মাথায় যেনো হাজারো গল্প, সেই গল্প যেনো নিজেদের মধ্যেই কথা বলছে। লিখছে তারা আরো হাজারো গল্প। গল্পের শেষ পরিনতিটা যেনো কেউ না যেনেও নিজের মতো করে সাজাচ্ছিল। লেখকতো নিজেও চায় গল্পের শেষটা হক ভালো কিন্তু তাকদিরে ছিলো লেখা কিছু অন্য।
২৫/০৫/২৩ইং
আজকে তার সাথে শেষ বার হয়তো দেখা। রাত ১১টার মধ্যে এয়ারপোর্টে যেতে হবে। এয়ারপোর্টে প্রস্তুতি নিয়ে বিকেল ৫টার মধ্যে বের হয়ে গেলাম।
তার যাওয়ার পর থেকে কেমন যেনো হয়ে গেলাম। ভালো করে কারো সাথে কথাই বলা হলো না। নিজের মতো নিজের দুনিয়াতে হারিয়ে থাকতাম। হারিয়ে ছিলাম রাজাহীন রাজ্যে নিয়মহীন শহরে। সেখানে ছিলো না আলো, না ছিলো হাসি, না ছিলো কষ্ট না ছিলো সুখ। কিছু শুরু অন্ধকার আর হতাশা।
বাসা থেকে এয়ারপোর্টে ট্রেন দিয়ে যেতে প্রায় ৬ঘন্টার মতো লাগে। এর জন্য ৫টার কিছু আগেই বের হয়ে গেলাম।
মাঝে মাঝে আমি যা অনুভব করেছি ঠিক তা লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কোনোভাবে কাগজটি খালি ছিল। এবং আমি এর চেয়ে ভালো বর্ণনা করতে পারতাম না। তাই সেই খালি কাগজটিতে আমার অনুভূতির পূর্ণ বর্ণনা করেছিলাম। বর্ণনাটা ছিলো এমন যে,
আমি ভালোবাসি তোমাকে এমন যে,
মৃত্যু যেমন ভালোবাসে জীবনকে
অন্ধকার যেমন ভালোবাসে আলোকে
চাঁদ যেমন ভালোবাসে সূর্যকে৷
ট্রেন আসার পর উঠে গেলাম ট্রেনে শুধু অপেক্ষা এয়ারপোর্টে যাওয়ার।
আর হয়তো ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে এয়ারপোর্টে চলে যাবো।
সে যাওয়ার পর শুরু একটা কথাই মাথায় চলতো,
মৃত্যু হয়তো সুন্দর হবে
নরম বাদামী মাটিতে শুয়ে থাকা,
মাটির ওপরে নরম ঘাস এবং,
তার মধ্যে সেই নিরবত।
না আছে কোনো গতকাল,
না আছে কোনো আগামীকাল,
শুধু ভুলে যায় সময়,
ভুলে যায় জীবন,
তার মধ্যে টুকরো শান্তি।
হঠাৎ করে ট্রেন থেমে গেলো। জিজ্ঞেস করলাম কি হলো বললো, সামনে ট্রেন দুর্ঘটনা হওয়ার কারণে আর যাওয়া সম্ভব নয়।
যখন তার দেখে কোনো চিঠি পেলাম না অনেক দিন পরও, তখন মনে হচ্ছিলো যে,
আমার জীবন সমাহিত আশার একটি নিখুঁত কবরস্থান।
আমি তারাতাড়ি করে নেমে গেলাম ট্রেন থেকে ২ঘন্টার মধ্যে এয়ারপোর্টে যেতে হবে। কিন্তুু এটা প্রায় অসম্ভব। রিকশা দিয়ে গেলেও তো ৩-৪ঘন্টা লেগে যাবে। কিছু না ভেবে তারাতারি করে এয়ারপোর্টের দিকে যাওয়া শুরু করলাম।
২৫/১১/২০২২তারিখ রাতটা কে যদি আমি কিছু শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চাই তাহলে তা হবে,
আমি আমার নিজের শতাধিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছি, আমি তাদের কোনোটিতেই কাঁদিনি মৃত্যু আমাকে বাঁচিয়েছে! তাহলে আমি কেন কাঁদবো?
একজন লোকের গাড়ি করে এয়ারপোর্টের দিকে যাওয়া শুরু করলাম, কিন্তু যেতে যেতে ১১:২৫ বেঝে যায়। আমি সব ভরসা হারিয়ে ফেলেছিলাম। হয়তো তাকে আর দেখাই হবে না
যখন সে চলে গেছিলো তখন,
নিজেকে মনের মধ্যে বন্দী করে ফেলেছিলাম
কোনো কিছু করার প্রেরনাও ছিলো না
ছিলো না কারো সাথে কোনো কথা বলার ইচ্ছা,
ছিলো না আসা, ছিলো না ভরসা
আসার আলো নিয়ে হঠাৎ আসে তার চিঠি।
সকল আসা ছেড়ে দেওয়ার পরও দেখি হঠাৎ করে আবির বলে একটা ডাক দেয় কেউ। পিছনে তাকিয়ে দেখি সেই পূর্ণতা। আমার অনুভবের পূর্ণতা। তাকে দেখার পর যেনো কত হাজার বছর পার হয়ে গেলো বুঝতেও পারলাম না। আমি আমার দুনিয়া থেকে যেনো হারিয়ে গিয়েছিলাম। তার কান্নায় আমার চোখ না আমার হৃদয় কেঁদে দিয়েছিলো। পারছিলাম না নিজেকেও ঠিক রাখতে পারছিলাম না তাকেও শান্ত করতে। শেষে সে বললো বেশি সময় নাই। যেতে হবে হয়তো ছিলো হাজার কথা বলার কিন্তু বলা হলো না। চলো না আবার দেখা করি কিন্তু ওই দেখাটা যেনো এত সাধারণ না হয়, হয়তো ওই দিনটাতেও চোখে পানি থাকবে কিন্তু কারণ থাকবে ভিন্ন। আজকে আমরা আছি সাধারণ সাজে, ওইদিন সাজ থাকবে বর আর কনের।
৫বছর শুধু ৫বছর। অপেক্ষায় রইলাম আমি
ইতি। নুহিন,,