নিজস্ব প্রতিনিধি:
অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, খুলনা আর্ট একাডেমির চারুকলা ভর্তি কোচিং এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী তুলি সাধু খুলনা আর্ট একাডেমিতে ২০১৫ সালে ভর্তি হয়েছিল। খুলনা আর্ট একাডেমি থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগে পরিক্ষা দিয়ে চান্স পেয়ে পড়ার সুযোগ পায়।তার পিতা শ্যামল চন্দ্র সাধু দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন।তার পাশাপাশি ডায়াবেটিস,প্রেসার,কিডনির রোগ,ফুসফুসের সমস্যা।জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ১৩ই জানুয়ারি দুপুরে সিটি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন।চিকিৎসা চলছিল ১৪ ই জানুয়ারি ২০২৫, রাত ২:৩০ এ ঘুমের মধ্যে হার্ট এটার্ক করে মারা যান। জন্ম তারিখ ০২ এপ্রিল ১৯৫৮, অনুযায়ী তিনি আমাদের মাঝে ৬৬ বছর ৯ মাস ১৩ দিন বেঁচে ছিলেন।
শিল্পীর বাবা অত্যন্ত সাদাসিধে ভাবে জীবন যাপন করতেন, ন্যায় ও আদর্শের মাধ্যমে ব্যবসা করতেন।তার কিছু প্রমাণ তুলে ধরছি।মা বাবাকে খুব সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। তাই মায়ের নামে ১৯৭৫ সালে একটি মিষ্টির দোকান,”মাতৃ মিষ্টান্ন ভান্ডার” ।এটি খুলনা দৌলতপুরে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি অনেক সুনাম অর্জন করেছে।
২০২৫ পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০ বছরের কর্ম জীবনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। তার মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ভাইদের সঙ্গে যৌথভাবে দোকানটি পরিচালনা করতেন, এতেই প্রমাণ হয় তিনি কতটা ভালো মানুষ ছিলেন। তার পুত্র সন্তান ছিল না কিন্তু চারটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। বড় মেয়ে সুবর্না বনিক মাস্টার্স পাস,সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে।মেঝ মেয়ে অপর্ণা সাধু বি.বি. এ,এম. বি. এ পাস, নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে।সেঝ মেয়ে টুম্পা সাধু, বয়রা মহিলা কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ তিনজনার সংসার হয়েছে। কিন্তু ছোট মেয়ে তুলি সাধু,বি. এফ. এ অনার্স ,এম. এফ. এ মাস্টর্স,খুলনা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে।তার কথা না লিখলেই নয়,খুলনা আর্ট একাডেমির চারুকলা ভর্তি কোচিং এর মেধাবী শিক্ষার্থী ২০১৫ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগে মেধা তালিকায় ১৬তম হয়েছিলো। এরপরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদে ড্রইং এন্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিন থেকে প্রত্যেকটা ইয়ারে ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট হয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে বি.এফ.এ পাস করেছে। ফাস্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়ে বি.এফ.এ মাস্টার্স পাশ করেছে।বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক বার মেধাবৃত্তিসহ,ইউজিসি মেধাবৃত্তি ও থিসিস গ্রান্ট অর্জন করেছে।তাকে নিয়ে আমরা সবসময় গর্ববোধ করি ।পড়াশোনা শেষ করার পরে যশোর ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুলে চাকরি হয়েছে কিন্তু পিতা ছোট মেয়েকে ছাড়া থাকবে কি করে,এমন কথা মেয়ের কাছে প্রকাশ করলে মেয়ে চাকরিতে যোগদান করেনি ।বুঝতেই পারছেন আদর্শ পিতার আদর্শ কন্যা। তাই ছোট মেয়ে বাবার কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা শেষ করে মেয়ে হয়ে ছেলের দায়িত্ব পালন করছিলো।বাবার সাথে ব্যবসা দেখছিলো,”মাতৃ মিষ্টান্ন ভান্ডার” দোকানে বসতেন। নিজ উদ্যোগে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে যার নাম, “অনুপ মেমোরিয়াল আর্ট একাডেমি”। এর পাশাপাশি টিউশন আর চাকরির পড়াশোনা করে।এই হল শ্যামল চন্দ্র সাধুর সংসার, সমস্ত কিছু স্ত্রী সাধনা সাধুর উপর দায়িত্ব দিয়ে চির নিদ্রায় চলে গেলেন। আমরা মৃত ব্যক্তির জন্য গভীরভাবে শোকাহত, তিনি যেন স্বর্গবাসী হতে পারেন।খুলনা আর্ট একাডেমির সদস্যরা যে যেখানে আছেন সবাই তুলির জন্য আশীর্বাদ করবেন সে যেন এই শোক কাটিয়ে তার মায়ের আদর্শ এবং বাবার স্বপ্ন নিয়ে বড় হতে পারে। এমন প্রত্যাশায় –
চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
খুলনা আর্ট একাডেমি।
তারিখঃ২৪-০১-২০২৪