কলমে: সাহেলা সার্মিন
দীর্ঘ এক মাস পর আজ কলেজ খুলেছে রেনুর। কলেজে যাওয়ার জন্য ঝটপট তৈরী হচ্ছে। কে জানে শান্তা তৈরী হয়েছে কিনা?
শান্তা রেনুর বান্ধবী, খুব অন্তরঙ্গ দু’জনের মধ্যে। একই এলাকায় বাড়ি। রেনুর আগে, শান্তার পরে। রেনু আগে বের হয়ে শান্তাকে সাথে নিয়ে একত্রে কলেজে যায়। দু’জনে একসাথে থাকায় দুই পরিবারের লোকই নিশ্চিন্ত থাকে।
আজ রেনু শান্তার বাড়ি যেয়ে জানতে পারলো ও বাড়িতে নেই, বেড়াতে গেছে। অগত্যা রেনু একাই চলে গেলো কলেজে।
আজ ওর একা একা ভালো লাগছে না। দুই বান্ধবীতে প্রতিদিন গল্প গুজব এবং হাসি তামাসা করতে করতে যায়। কথায় কথায় দূরত্ব ছোট হয়ে আসে। মনে হয় তাড়াতাড়িই কলেজে যেয়ে পৌঁছাতে পারে। ডাবল সিট নিয়ে দুজনে পাশাপাশি বসে গল্প করতে করতে চলে যায়। আজ আর পথ ফুরচ্ছে না রেনুর। মনে মনে ভাবছে শান্তাকে ছাড়া কেনো যে এলাম?
এইচ এস সি ভর্তি হওয়ার পর আজই প্রথম রেনু একা কলেজে যাচ্ছে। গাড়িতে ড্রাইভারের ইঞ্জিনের পাশে একটি সিটে বসেছে ও।নানা ধরণের হেজিটেশন কাজ করছে ওর ভিতর। ড্রাইভারের পেছনের দুই সিট পেছনে একটি ছেলে ওকে খুব পর্যবেক্ষণ করছে। মাঝে মাঝে চার চক্ষু এক হচ্ছে। ছেলেটির চেহারায় এতো মায়া জড়ানো একবার তাকালে আবার তাকাতে ইচ্ছে করে। বিশেষ করে ওর চোখ দু’টো যেনো জাদু জানে।
বাস্তবিকই ছেলেটির চোখ দু’টো ছিলো ভীষণ সুন্দর! একারণেই ইচ্ছে করেই রেনু বারবার দেখছিলো আর মনে মনে বলছিলো, ছেলেদের চোখ এতো সুন্দর হয়! কাজী নজরুলের সুন্দর চোখ নিয়ে পড়েছে রেনু। নজরুলের চোখের দিকে কোনো নারী তাকালেই নাকি প্রেমে পড়ে যেতো। রেনু তখন মনে মনে ভাবতো, এটা কোনো কথা হলো নাকি? চোখের দিকে তাকালেই প্রেমে পড়ে যায়? আজ নিজের জীবনে ঘটায় হাড়ে হাড়ে টের পেলো।
বাড়িতে এসেও ঐ চোখ জোড়া ভীষণ জ্বালাতে লাগলো রেনুকে। যখন তখন ঐ চোখ জোড়া জেগে ওঠে মনের মধ্যে। হাতছানি দেয়, কাছে ডাকে, ভালোবাসে। এখন তার আর শান্তার সান্নিধ্য আগের মতো ভালো লাগে না। এখন তার একা থাকতে ভালো লাগে। একা একা মনের ভিতরে শত স্বপ্ন বুনে চলে। কলেজে যাওয়ার পথে ঐ চোখ জোড়া খুঁজে বেড়ায় প্রতিদিন। শেষে নিজেকে বোঝাাতে না পেরে শান্তার সাথে শেয়ার করলো। তবুও আর কোনোদিন সেই চোখের সন্ধান পেলো না!