টিন সার্টিফিকেট হচ্ছে আয়কর নিবন্ধন সনদ । TIN Certificate এর পূর্ণ রূপ হলো Taxpayer Identification Number। প্রত্যেকটি নিবন্ধিত করদাতাদের কে 12 ডিজিটের এই নাম্বারটি প্রদান করা হয়ে থাকে এবং এই নাম্বারটি মাধ্যমেই বাংলাদেশের করত তাদেরকে সনাক্ত করা হয়ে থাকে। সহজভাবে বলতে গেলে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের মতোই আইডেন্টিফিকেশন এর জন্য এই টিন সার্টিফিকেট বাতিল নাম্বারটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই নাম্বারের প্রথম ৩ অক্ষর থাকে করদাতার অঞ্চলের কোড, মাঝের তিন সংখ্যা করদাতার পদমর্যাদা এবং শেষের চার সংখ্যা করদাতার পরিচিতি চিহ্নিত করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই টিন সার্টিফিকেট আপনি কি কি কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
১) আপনার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ণ করতে এই টিন সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। ২) ছোট বা বড় যেকোন কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পরে তা রেজিস্ট্রেশন করার জন্য এই সার্টিফিকেট দরকার হয়। আর রেজিস্ট্রশন ছাড়া সকল কোম্পানি কে অবৈধ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এছাড়াও কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য এটি দরকার হয়। ৩) আপনার আমাদানিপত্র রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আপানার টিন সার্টিফিকেট অবশ্যই লাগবে। কারণ আপনার সম্পত্তির হিসাবে দেখাতে হবে। ৪) বিভিন্ন ড্রাগ লাইসেন্স করার জন্য টিন সার্টিফিকেট দেখাতে হয়। ৫) বিভিন্ন বাণিজ্যিক দরপত্র ক্রয় করার জন্য আপনার ট্যাক্স-পেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার থাকা বাধ্যতামূলক। ৬) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার জন্য TIN দরকার। তবে এক্ষেত্রে কর প্রদান বাধ্যতামূলক নয়। ৭) সিটি কর্পোরেশন ভুক্ত জমি বা ভবন রেজিস্ট্রেশন করতে হলেও আপনার টিন সার্টিফিকেট লাগবে। এই নাম্বার ব্যবহার করে বাড়ির টেক্স দিতে হবে। ৮) ব্যবসায়িক সমিতির সদস্যপদ প্রাপ্তি ও নবায়ণের জন্য এটি দরকার হবে। ৯) গাড়ি, মাইক্রোবাস অথবা জিপ এর রেজিস্ট্রেশন বা ফিটনেস সনদ পেতে হলেও টিন দেখাতে হবে। ১০) কোন লাইসেন্স যেমন, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী ইত্যাদি গ্রহণের জন্য টিন সার্টিফিকেট দরকার। ১১) আপনি যদি একজন নির্বাচনের প্রার্থী হতে চান তাহলে এটি লাগবে।
টিন সার্টিফিকেট কেন দরকার
১) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী আপনি যদি মাসে ১৬ হাজার টাকার সমান অর্থ আয় করেন, তবে আপনার টিআইএন থাকা আবশ্যক। ২) সকল পুরুষদের বছরে তিন লাখ, সব বয়সের নারী এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিক সাড়ে তিন লাখ এবং প্রতিবন্ধীদের বছরে সাড়ে চার লাখ টাকার ওপরে আয় থাকলে আপনাকে কর দিতে হবে। ৩) যদি আপনি করসীমার নিচে থাকেন, তবে টিআইএন দেখিয়ে শূন্য বিবরণী জমা দিতে হয়। ৪) যদি টিআইএন প্রয়োজন হয়, এমন কোনো ক্ষেত্র আপনার থাকে, যেমন গাড়ির মালিকানা বা কোনো সংগঠনের সদস্যপদ, তাহলে করযোগ্য আয় না থাকলেও টিআইএন সার্টিফিকেট থাকতেই হবে।
টিন সার্টিফিকেট থাকার সুবিধা
টিআইএন রেজিস্ট্রেশন নাম্বার থাকলে ব্যাংক আপনার গচ্ছিত অর্থ থেকে ১০ শতাংশ কর কাটবে, যদি না থাকে তবে কাটা যাবে ১৫ শতাংশ। ধরুন, এর মধ্যে আপনি কোথাও থেকে কোনো উপহার বা পুরস্কারের অর্থ পেলেন, যা ব্যাংকের মাধ্যমে আপনাকে দেওয়া হলো, সে ক্ষেত্রেও টিআইএনধারীরা ১০ শতাংশ কর কেটে অর্থ হাতে পাবেন, আর যাঁদের টিআইএন নেই, তাঁদের কাটা হবে ১৫ শতাংশ। এমনিতে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে টিআইএন প্রয়োজন হয় না; তবে আপনি যদি ব্যাংকঋণ নেন, তবে টিআইএন থাকতেই হবে। সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পেশাজীবী বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সুবিধা ও প্রণোদনা দিয়ে থাকে, যার কোনোটাই টিআইএন ছাড়া পাওয়া সম্ভব না।
টিন সার্টিফিকেট থাকার অসুবিধা
প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। আপনার যদি একটি নিবন্ধনকৃত টিন সার্টিফিকেট থেকে থাকে তাহলে আপনি প্রতিবছর ট্যাক্স দিতে বাধ্য। এবং আপনি যদি পরপর তিন বছর কোন ট্যাক্স প্রদান না করে থাকেন তাহলে আপনি অসুবিধায় পড়তে পারেন। আপনি যদি টিন সার্টিফিকেট করে থাকেন তবে আপনাকে অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্ণ দাখিল [ জান্যন ট্যাক্স রিটার্ণ দাখিলা সম্পর্কে ] করতে হবে, এতে আপনার বাৎসরিক আয় করযোগ্য সীমায় থাকুক বা না থাকুক।
এবার আপনার মনে প্রশ্নঞ্জাগতে পারে যে, যদি আপনি ট্যাক্স রিটার্ণ দাখিল বা নিয়মিত কর না দেন তাহলে কি হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার আয়কৃত অর্থকে বা টাকাকে কালো টাকা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং আপনি মামলা মোকদ্দমায় জরিয়ে যেতে পারেন। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আপনার আয়কৃত টাকাকে ধুলিস্যাৎ করে দিতে পারে। তাই আপনি যদি একজন নিবন্ধনকৃত টিন সার্টিফিকেট ধারী হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত আপনার কর পরিশোধ করুন এবং দেশের কল্যাণে নিজের ভূমিকা পালন করুন।