শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি সাংবাদিকদের

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২১ Time View

বিশেষ প্রতিনিধি:

তামাক নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে নারী মৈত্রীর আয়োজনে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সাংবাদিকদের নিকট প্রত্যাশা ও করণীয়” বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা আয়োজিত হয়েছে। বুধবার ৯ অক্টোবর ২০২৪, সকাল ১১:০০ টায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, অনকোলজিস্ট এবং প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, লীড পলিসি এ্যাডভাইজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এবং বাংলাদেশ এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান, বিসিআইসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব রাশেদ রাব্বি, সভাপতি, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম। শামীম মেহেদী, চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, গ্লোবাল টিভি, প্রথম আলোর যুগ্ম–সম্পাদক জনাব সোহরাব হাসান, শাহনাজ বেগম পলি, সদস্য, ব্যবস্থাপনা কমিটি, জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং জুলহাস আলম, ঢাকা ব্যুরো প্রধান, নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা—এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, জাতীয় প্রেস ক্লাব।

এছাড়াও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব সুশান্ত কে সিনহা, স্পেশাল করস্পনডেন্স,৭১ টিভি। জনাব মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া, প্রোগ্রাম ম্যানেজারস, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশ এবং হুমায়রা সুলতানা, কমিউনিকেশনস ম্যানেজার , ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশ।

“তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপ-কৌশলে বিভ্রান্ত না হওয়ার কথা জানান সুশান্ত কে সিনহা, তিনি বলেন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর সংশোধনী আনার যে উদ্যোগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত এবং জনবান্ধব উদ্যোগ। তবে বেশ কিছু ধাপ পার হলেও আইনটিকে চূড়ান্ত রূপ পেতে হলে আরো কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এখনও এটি পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এটিকে আইনে রূপান্তরের পথে নানা রকম বাধা আসার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে সংশোধনীর বিপক্ষে তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপ-কৌশল ও অপ-তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনবিভ্রান্তি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদেরকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।

রাশেদ রাব্বি বলেন, “ তামাক থেকে সরকারের যে রাজস্ব আয় আসে তার চেয়ে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় ৩৪ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আয় প্রায় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা এবং চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের কারণে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা (ক্যান্সার সার্ভে-২০১৮)। সুতরাং মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা”

আর একটি প্রানও যাতে না হারাতে হয় তামাকের কারনে সে প্রেক্ষাপটে সোহরাব হাসান বলেন, “প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এই ভয়ঙ্কর তামাকের আগ্রাসনে। তামাকের এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসন ও তামাক মহামারী আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমাদের তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরও সোচ্চার হতে হবে ।পাশাপাশি তামাক কোম্পানির গুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে”

শামীম মেহেদী বলেন, “তরুণরা ই-সিগারেটের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের এই আসক্তি থেকে বের করে আনতে ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,” তামাক একটি প্রাণঘাতী দ্রব্য। তামাকের পক্ষে বলার মতো একটি শব্দও নেই। তামাক পরিবেশ, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। টোব্যাকো এটলাস ২০১৮- এর তথ্য মতে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মানে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান । জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ও জীবন রক্ষায় দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে এখনই। আইন শক্তিশালী করবার এই পদক্ষেপ বেগবান করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারেন আমাদের গণমাধ্যমের বন্ধুগণ,যাদের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের লেখনি ও গণমাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের কাছে পৌছানোর কৌশল”

বিশেষজ্ঞ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড: গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের কারণে মুত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী তামাক। তামাকের কারণে ফুসফুস ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক অন টোব্যাকো কন্ট্রোল—এফসিটিসি’তে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হলেও ধুমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ এবং শক্তিশালী করা অতি জরুরী। যা তামাকমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে।

সভাপতির বক্তব্যে শাহীন আকতার ডলি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদানে মা ও শিশু উভয়ই মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জোরালো দাবি জানাচ্ছি।’

তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের তাগিদ জানান অন্যান্য আলোচক ও অতিথিরা। আলোচকগণ তাদের বক্তব্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত বিষয়গুলো যেমন- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সব প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার প্রতি জোরারোপ করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102