গ্রামই আমাদের সব, আমাদের কাছে আমাদের গ্রাম যেন স্বর্গের অভয়ব। বিনামূল্যে আমাদের আজীবন যা দিয়েছে তার ঋণ আমরা কি করে দিব জানিনা আমাদের হাজার জন্ম গ্রামেই হোক, সৃষ্টি কর্তার কাছে আমাদের এই আকুল কামনা।
প্রিয় নদিমপুর-Nadimpur
--------------------------------------
নদিমপুর- একটি প্রাকৃতিক সুন্দরে ঘেরা, আদর্শ আর মায়া মমতায় ভরা, ঐতিহ্যবাহী গ্রামের নাম। যার পশ্চিমে প্রবাহিত বাংলাদেশের গৌরব, সমস্ত পৃথিবীর এক অনন্য নদী- অপরূপা, মায়াবিনী হালদা। সেই হালদায় মাছ ধরে শত শত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রামের উত্তরে প্রবাহিত আরও একটি নদি, শান্ত, স্নেহময়ী নাকালী বর্ষায় নদীর দু কূল প্লাবিত হয়ে, পলিমাটির পলে বিস্তৃত জমির উর্বরতা ঘটে, তাই মওসুমে নদীর দু-পাশ ভরে উঠে শস্য ফুল আর ফলে। বিভিন্ন মওসুমি ফসলে তখন ভরে যায় গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, পাকা ফসলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠে পুরো গ্রাম। ফসল ঘরে তুলে কৃষাণ- কৃষাণীর মুখে ফুঠে উঠে মধুর হাঁসি, বয়ে যায় মনে- অনাবিল সুখ-আনন্দের মাধুরী ধারা। বিশেষ করে- গ্রামের প্রত্যেক পরিবার কোন না কোন ভাবে একে অপরের আত্মীয়, রক্তিয় বন্দনে বাঁধা। সে-কি ভালবাসা, মেলা-মেশা, অতিথি পরয়ানতা, সুখে-দুঃখে আনন্দ আর সহমর্মিতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত উদাহরণের নাম নদিমপুর গ্রাম।
গ্রামের পূর্বে নদিমপুর- নোয়াজিষপুর কে দু-ভাগ করে, সদুরে- চলে গেছে ইছাপুর সড়ক। সড়কের নিকটেই ঐতিহাসিক নদিমপুর দিঘী" পাশেই অবস্তিত শত বছরের স্মৃতি, ইতিহাস বিজড়িত, কত শত জ্ঞানী গুনি'র শৈশব, কৈশোরের প্রেরনা দাতা, আমার প্রান প্রিয় নদিম পুর প্রাইমারী স্কুল। নিকটেই রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা হাই স্কুল। গ্রামের দক্ষিনে রয়েছে আরও একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন, নসরত শাহের দিঘী। তারই দক্ষিণ পশ্চিমে হালদার তীর ঘেঁসে রয়েছে, সপ্তাহিক হাট- সারাঙ্গের বাজার এবং ইন্দার ঘাট, যা হাটহাজারী- রাউজানের সেতু বন্দন রচনা করে চলেছে- সুদীর্ঘ কাল ধরে।
গ্রাম হল জনবসতির একটি একক। এটি প্রধানত কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে মনুষ্য সম্প্রদায়ের ছোট বসতি। যেখানে বসবাসরত সম্প্রদায়রা কৃষিকাজ কৃষিভিত্তিক ও বিভিন্ন ছোটোখাটো কাজের মাধ্যমে খুব সাধারণভাবে জীবন যাপন করে থাকে। গ্রাম সাধারণত বড়ো শহর বা রাজধানী থেকে দূরে অবস্থিত হয়। গ্রামে শহরের মতো তেমন আধুনিক সুবিধাগুলো থাকেনা। এই কারণে জমিদার ও রাজাগণ শহরে বসবাস করলেও গ্রামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতেন।
প্রাচীন সামন্ততান্ত্রিক সমাজে কৃষিভিত্তিক গ্রাম ছিল রাজস্ব আহরণের উৎস। একটি গ্রামে কৃষিজীবী ছাড়াও কামার, কুমার, মাঝি, মেথর, জেলে প্রভৃতি পেশার লোকের বসবাস থাকে। গ্রাম মূলত একটি স্বশাসিত এলাকা হিসাবে পরিগণিত হত।
চট্টগ্রাম রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের একটি প্রিয় গ্রাম নদিমপুর। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মিলেমিশে গেছে মানুষের ভালবাসার বুক ঘেঁষে। সেই কারণে, এই গ্রামের প্রতিটি মানুষের সাথে সম্পর্ক যেন ভালোবাসার। তাই, সুদূর প্রবাসে থেকে প্রিয় গ্রামের প্রবাসীরা গ্রামের কথা ভেবে দুচোখ ভরে স্বপ্ন দেখে। কীভাবে গ্রামের জন্য কিছু করা যায়- যেই ভাবনা সেই কাজ। নদিমপুর প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ নামে একটি মানবিক সংগঠনের ছায়ায় এগিয়ে আসেন সুদূর প্রবাসীরা সঠিক সময়ে।
পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ যেখানে নিজের পকেট ভারী, নিজের আরাম আয়েশ আর ভবিষ্যৎ ভাবছে, সেখানে সবে মাত্র প্রতিষ্ঠিত নদিমপুর প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ বিগত একবছরে কয়েক লাখ টাকার সাহায্য পাঠিয়েছেন প্রবাস থেকে গ্রামের বিভিন্ন দুস্থদের কাছে সবার অজান্তে প্রবাস ফেরত মানুষের মাধ্যমে।
এবার গ্রামের জন্য কিছু করতে চায় নদিমপুর প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ। তাই, আলোকিত প্রিয় গ্রামকে শহরের আদলে সুযোগ সুবিধার করার প্রত্যয় নিয়ে শুরু হয়ে গেল গ্রামের ইতিহাসে প্রবাসী মানবিক সংগঠন নদিমপুর প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ। হোয়াটসআ্যাপ, ফেসবুক, ইমুতে গ্রামের প্রবাসী যুবসমাজ নিয়ে গ্রুপ খুললেন, গ্রামের প্রবাসে বসবাসরত আরো সম্মানিত মানুষদেরকে এক করলেন, বিশ্বের ভিবিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আরো গ্রামের যারা প্রবাসী আছে তাদের আহ্বান করলেন। প্রবাসীরা এই খবরটার সাড়া দিয়েই সকলেই আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসলেন প্রবাসে যার যার কর্মস্থল থেকে এবং শ্লোগানে শ্লোগানে সকলেই বলে উঠল হে আমাদের এখনই সময় প্রবাসী, প্রবাস ফেরত বা গ্রামের অসহায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে নিয়ে কাজ করা ও পাশে দাঁড়ানো। প্রবাসীদের এই মেলবন্ধনে নদিমপুর গ্রাম হিসেবে এমন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল এবং চোখে মুখে জ্বলে ওঠল তরুণদের মাঝে স্বপ্ন বেয়ে আলোর বন্যা।
আগষ্ট মাস ২০২১ সনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থাপিত হয় এই মানবিক নদিমপুর প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সকলের আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় ও সহযোগিতায় এবং ভাতৃত্ববোধে জজিরাতুল আরবে ছড়িয়ে ছিঠিয়ে থাকা গ্রামের প্রবাসীরা সর্বপ্রথম উদযাপন করলেন পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে মীলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা, পর্যায়ক্রমে ফাতেহায়ে ইয়াজদাহুম মাহফিল এবং আমাদের নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহোদয়কে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আগমন উপলক্ষে সংবর্ধনা এবং সর্বোপরি অন্যান্য দেশে প্রবাসীরা প্রীতি বৈঠক করে নদিমপুর গ্রামের মানুষের মাঝে ইতিহাস সৃষ্টি করল আন্তরিকতার ও সহযোগিতার এবং ভাতৃত্ববোধের। সবার উপস্থিতির মাঝে ফিরে ফেল যেন এক খন্ড নদিমপুর গ্রাম। এইসব অনুষ্ঠানে উপস্থিতির সবার মাঝে এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে অনেকে প্রবাসে বছরকে বছর না দেখা ভাই, চাচা, মামা, বন্ধু, আত্বীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশী খুশিতে কান্নায় অশ্রুজলে বুকে জড়িয়ে ধরে কৌশলাদী বিনিময় করেন। এরই মাঝে ফিরে পেল প্রবাসে নদিমপুর বাসীর মেল বন্ধন এবং প্রবাসীরা সকলে আশা করেন এমন মেল বন্ধন তৈরি হউক গ্রামে বসবাসরত সকলের মাঝে যেন প্রিয় গ্রামকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি।
নদিমপুর প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের মাধ্যমে প্রবাসে এবং দেশে আজ না হোক কাল সবাই লাভভান বা উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ। বিনিময়ে আমরা প্রবাসীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিশ্রম করে সকলকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। হয়তো পরবর্তী প্রজম্ম থেকে আমরা বরণীয় হয়ে থাকবো ইনশাআল্লাহ। কর্মই জীবন তাই জীবনকে পরবর্তী প্রজম্মের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে স্মৃতি হিসেবে রেখে যেতে চাই হয়তো তা থেকে ওদের অনুপ্রেরণায় আমরা আজীবন গ্রামের মানুষের কাছে অমর হয়ে থাকব।
মানব সেবায় যারা জড়িত তাদের সবার মাঝে এ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী হিসেবে যে শক্তি কাজ করে, সেটা হচ্ছে মানুষের মানবতাবোধ। যার মাঝে মানবতাবোধ আছে সেই মানবসেবার একাজে এগিয়ে আসে। প্রাণঘাতী মহামারি করোনায় এ মানবতাবোধের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।কারো প্রতিবেশি যদি পেটে ক্ষুধা নিয়ে রাত যাপন করে, কেউ যদি কোনো পথশিশুকে ক্ষুধার তড়নায় কাতরাতে দেখে আর সে যদি ক্ষুধার্ত প্রতিবেশি কিংবা ক্ষুধার্ত পথশিশুর পাশে এসে না দাঁড়ায়, তাহলে বুঝতে হবে তার মাঝে মানবতার লেশমাত্রও নেই।
যার মাঝে মানবতাবোধ আছে সে অবশ্যই অসহায় দুঃস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে। তার সামর্থ অনুযায়ী এগিয়ে আসবে সহযোগিতা করবে। আর এটাইতো মানবতার সেবা। এটা মহান আল্লাহ তাআলার গুণসমূহের মধ্যে অন্যতম গুণ।
যে ব্যক্তি অন্যের কল্যানের ইচ্ছা পোষণ করে সে প্রকৃত পক্ষে নিজের কল্যানই নিশ্চিত করে। সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রেরণা পাওয়া যায়। সামাজিক সংগঠনগুলোতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ইতিবাচক গুণাবলী তৈরী হয়। মানুষের মধ্যে নেতৃত্ব-গুণ তৈরী হয়। দায়িত্বশীলতা বাড়ে, সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়ে। প্রতিটি সামাজিক সংগঠনের মৌলিক বিষয় একই। সামাজিক সংগঠনে সবার মতকে শ্রদ্ধা করা, সদস্য হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালন করা, নিজেকে বিকশিত করা, একসঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হওয়াসহ সহনশীল হওয়া শেখায়।
💁♂️ অতএব প্রিয় নদিমপুর গ্রাম এর প্রবাসে এবং দেশে অসহায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য"। এই ব্যপারে নদিমপুরের সকল প্রবাসী যে যেখানে আছেন সকলের একান্ত সহযোগিতা কাম্য। দশে মিলে করি কাজ হারি যেতে নেহি লাজ এই শ্লোগানে আমরা প্রবাসীরা এক এক করে এগিয়ে যাবো এবং ইনশাআল্লাহ আমাদের প্রিয় গ্রামকে একটি আর্দশ গ্রাম উপহার দেব যেখানে আপন ঘর থেকে শুরু করে পুরো গ্রামকে একটি সুখী, সুন্দর আর্দশবানে, ভাতৃত্ববোধে সকলের বসবাস হবে। এই প্রত্যয়ে সকলের সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন এবং প্রয়োজন সকলের আন্তরিকতা।
🤷♂️ পরিশেষে হে মহান রাব্বুল ইজ্জত কঠিনতম প্রবাসী জীবনে নিজের ঘাম জড়ানো পরিশ্রমের পরেও প্রিয় গ্রামের প্রবাসে এবং দেশে অসহায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াবার সুযোগ করে দাও। আমাদের সকলের তথা নদিমপুর প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৌছানোর সুযোগ করে দাও। মানব সেবার জন্য আমাদের মনকে উজার করার তৌফিক দাও। আমাদের সকলকে কবুল করুণ। প্রবাসে এবং প্রিয় গ্রামের সকলের জান-মাল ও ইজ্জত-সম্মানকে বৃদ্ধি করে দিন। আমাদের সকলের শারীরিক সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু দান করুন আমিন।
----------------------------------------
লেখক-
এম, শাহেদ সরওয়ার
সদস্য-এনপিকেপি।
ইউনাইটেড আরব আমিরাত।