সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন

প্রবন্ধ:_”২৪এর বীরত্বগাঁথা তরুণ”_

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৫৭ Time View

লেখক:_মো: ওসমান হোসেন সাকিব

_______________________________________
দেশের চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমার মনে মোটেও শান্তি ছিল না।চারিদিকে গণপিঠুনি,হামলা-মামলা ও নানা নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল ছাত্রসমাজ।সকাল থেকে মাথায় একটা অস্তিরতা কাজ করছিল।এই পায়ঁচারার মধ্যেই কখন জানি দুপুর হয়ে গেল।দুপুরের খাবার খাইতে গেলাম,বেশিটুকু খাইতে পারলাম না।পরক্ষণে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মিডিয়ায় খবর দেখতেছিলাম।দেখতে দেখতে কখন জানি ঘুম চলে আসল।বোধহয় এক ঘণ্টার মত ঘুমিয়েছিলাম।
__(১৬ আগষ্ট ২০২৪ইং,রোজ:_শুক্রবার)
ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছে আমাকে কেউ কোথায় থেকে তেড়ে এসে ডাকার মত আওয়াজ করে ডাকছে।আমি ভাবলাম,স্বপ্নের মধ্যেই আছি।নয় নয়,এটা ছিল আমার মায়ের ডাক।আমি ঘুম থেকে উঠে পড়লাম এবং মায়ের কাছে জিঙ্গেস করলাম,হ্যাঁ মা।আপনি এভাবে ডাকতেছেন কেন?কোনোকিছু কি হয়েছে কোথায়?

মা উত্তর দিল,আরে না।এখানে কিছু হয়নি।তো,এভাবে তেড়ে আসার মত আওয়াজ করে ডাকলেন?
মা বলল,,
তুই যখন ঘুমিয়ে পড়লি,আমি তোর ছোট মায়ের বাসায় একটু বসতে গেছিলাম।ওইখানে দেখতেছি,ওরা টিভি দেখছে।আমি ও টিভি দেখছিলাম।আমি টিভিতে দেখছি…বলে ওনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
আমি বিচলিত কণ্ঠে জিঙ্গেস করলাম,মা আপনি দেখেছেন তা তো একটু বলেন..আর আপনি এভাবে কান্না করতেছেন কেন?
তখন মা বিরহ কণ্ঠে জবাব দিলেন,তুই যে বিষয়টা নিয়ে সকাল থেকে আলোচনা করতেছিস এটা দেখলাম।
মা আপনি আবার কি দেখলেন?
__দেখছি..আন্দোলনরত ছাত্রসমাজের সাথে পুলিশ বাহিনীর সংঘর্ষ হচ্ছে।এতে এমন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা আমার মনে কান্নার ছায়া নেমে এনেছে।সংঘর্ষের এক পর্যায়ে রংপুর (বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়) এর ছাত্র ‘আবু সাঈদ’ নামে ছেলেটিকে পুলিশ এমনভাবে বলতেই পুনরায় কান্না শুরু করল।আমি মায়ের শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে বলে আর ওনার থেকে কিছু জিঙ্গেস করলাম না।
আমি সাথে সাথে আমার ছোট মায়ের বাসায় গেলাম।ওইখানে আমার ছোটবোন ও ছিল।ও থেকে আবু সাঈদের বিষয়ে পুরো ঘটনা বিস্তারিত জিঙ্গেস করলাম।
তখন আমার বোন আমাকে সবকিছু খুলে বলল এভাবে যে,আবু সাঈদ নামে ছেলেটিকে পুলিশ চারটা গুলি করছে।
আমি বললাম কি বলিস?
বলল,হ্যাঁ।প্রথমে ছেলেটা পুলিশের সামনে বুক পেতে দিল এটা মনে করে যে,প্রশাসন তো আমাদের বন্ধু।তারা হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য ভয় দেখাচ্ছে।পরক্ষণে বুঝা গেল,তার ভাবনা বিপরীত কাজ টা যে ঘটল।একটা গুলি, পর পর আরো তিনটা গুলি একসাথে একটা বুকের মধ্যে চালিয়েছিল তৎকালীন পুলিশ বাহিনী।তারপর ছেলেটি শারীরিকভাবে দাঁড়াতে অক্ষম হলে কিছুদূর গিয়ে বসে যায়।তারপর তার সাথে আন্দোলনরত কিছু শিক্ষার্থী তাকে ধরে হসপিটালে নিয়ে যায়।কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেটি মারা যায়।
পরেরদিন তার জানাযায় তার বড় ভাইয়ের কি যে কাকুতি!তার ছোট বোনের কি যে আজাহারি!
তারপর আমি সাথে সাথে আমার আম্মুর পাশে এসে দাড়ায়..সান্তনা দিই।
তখন থেকে মন আরো কাতর হয়ে গেল।নিজেকে নিজেকে প্রশ্ন করলাম,এই কেমন স্বাধীন দেশে আমার জন্ম?যেখানে নিজেদের যোক্তিক অধিকার আদায় করতে আন্দোলন করতে হয়,পুলিশবাহিনীর লাঠিচার্জের শিকার হতে হয়,সর্বশেষ বুলেটের কাছে হার মেনে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে হয়?
কই?ছাত্রসমাজের আন্দোলনে আমি তো কোনো অযোক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছিনা।স্বাধীন সার্বভৌম এই মাতৃভৃমিতে কোটার মত এক বয়াল বিষয়টিকে বহাল রেখে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির ক্ষেত্রে কোটাধারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাকি হাজার হাজার কোটাহীন ছাত্রসমাজকে অধিকারবঞ্চিত করবেন তা তো হতে পারে না।এই কোটাপ্রথার সংস্কার এর দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন ছিল।সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে (৫৬%কোটা-৪৪%মেধা) এটা কি এক চরম বৈষম্য নয় কি?এই বৈষম্যের শৃঙ্খল ভেঙ্গে দিতে ছাত্রসমাজ “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” নামে এক আন্দোলন গড়ে তোলে।(চলমান)

লেখক:_প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102