কলমে: মো: ওসমান হোসেন সাকিব।
আন্দোলন সেই জুলাই শুরুর পর থেকেই চলমান রয়েছে।
__১৮জুলাই ২০২৪ইং,রোজ:বৃহস্পতিবার
রীতিমতো এইদিন ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়।এতে পুলিশ ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জের পাশাপাশি টিয়ারসেল ও নিক্ষেপ করে।ঢাকার উত্তরায় ছাত্রদের উপর পুলিশের হস্তক্ষেপের সময় আহত হন চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাক্ষণবাড়িয়া সন্তান,বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর রার্নিং শিক্ষার্থী "মীর মুগ্ধ"।পুলিশের সাথে সংঘর্ষের একপর্যায়ে ধাওয়া খেয়ে যখন ছাত্ররা পিছু হটছিল তখন সেই তার হাতে এক কেস মিনারেল ওয়াটারের পানি ও কিছু বিঙ্কুট নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে গিয়ে বলছিল,"ভাই পানি লাগবে...পানি!"
তখন কিন্তু আমাদের বিপ্লবী বীর মীর মুগ্ধ ভাই ও টিয়ারসেলের আঘাতে চোখে যন্ত্রণায় ভুগছিল।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,শেষ রক্ষা হলো না তার।তখনকার ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রলোভনে পরে পুলিশ বাহিনী এতটাই অন্ধ হয়ে পড়েছিল যে,ছাত্রজনতার উপর বৃষ্টিরমত গুলিবর্ষণ করতে ও দ্বিধাবোধ করত না।ঔইসময় একটা গুলি এসে মুগ্ধ ভাই এর বুকে লেগে যায়।তখন তার কিছু বন্ধুরা মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন।
এভাবে দিন যত যাই,ততই আন্দোলন বেগবান হতে থাকে।এইদিকে ফ্যাসিবাদী সরকার ও তার সকল নীতি-নৈতিকতা বর্জন করে অন্যায়মূলক একটি বিষয়কে গেড়ে বসাতে উঠে পড়ে লাগে।একপর্যায়ে আন্দোলন যখন চরম মোড় নেওয়া শুরু করল,সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেন।যাতে আন্দোলনের বিভিন্ন রূপরেখা সঠিকভাবে প্রত্যন্ত ছাত্রজনতার হাতে না পোঁছায়।শুধুমাত্র এটায় করে তিনি বসে থাকেন নি,আন্দোলনকে থামানোর জন্য দেশের মধ্যে 'কারফিউ' জারি করেন।যেটার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মাঠে নামার নির্দেশ দেন এবং দেশের মধ্যে 'সাধারণ ছুটি' ঘোষণা করেন।
এতে ও ছাত্রসমাজ কারফিউ ভঙ্গ করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে।অনেক জায়গায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ও হয়।এভাবে চলতে চলতে সরকার একপযার্য়ে কোটা সংঙ্কার করেন।যাতে ১০০% এর মধ্যে ৯৩% মেধা,৫% মুক্তিযোদ্ধা,২% ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আর ১% তৃতীয় লিঙ্গের জন্য নির্ধারণ করেন।কিন্তু এটি ছাত্রসমাজ মেনে না নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান।এজন্য যে,সরকারের কাছে এই বিষয়টি আগ থেকে ছিল আলোচনার একটি বিষয়।কিন্তু তিনি তা না করে ছাত্রদের উপর গণহত্যার চালানোর মত বিষয়টি বেছে নিয়েছিলেন।তিনি তা করেছেন ও।পরক্ষণে যখন ছাত্র আন্দোলন ভয়ংকররূপে এগোচ্ছিলেন,তখন তিনি কোটা সংঙ্কারের বিষয়টি মাথায় নিলেন,যাতে করে আন্দোলন দামাচাঁপা দেয়া যায়।
ছাত্ররা দাবি করে বসেন,আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই।এইকারণে সরকারের এই কূটনৈতিক চালটি ফসকে যায়।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের ছাত্রজনতার উপর সরকারের অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপের বিষয়টি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে যায়।জাতিসংঘ,যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারের উপর ছাত্র হত্যা,দমন,নিপীড়ন বন্ধে চাপ আসতে থাকে।যাতে করে সরকার বিশ্বের মাঝে তীব্র সমালোচনার শিকার হন।
জুলাইয়ের এমন একটা দিন ও ছিল না যে,ছাত্রজনতাকে পুলিশের হামলা-মামলা,গুম ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়নি।
__২৮জুলাই২০২৪ইং,রোজ:রবিবার
খুনি,ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্মকাণ্ডে অতীষ্ঠ হয়ে ছাত্রজনতার আন্দোলন যখন ধীরে ধীরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হচ্ছিল,তখন সরকার নব চাল চালা শুরু করেন।ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র কেন্দ্রীয় 'সমন্বয়ক' দের নিরাপত্তার নামে বন্ধী করে রাখা হয়।এতে করে ছাত্র জনতা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে অনেক ছাত্র আহত ও নিহত হন।
__৩০জুলাই ২০২৪ইং,রোজ:মঙ্গলবার
ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের সকল দোষ যখন সরকারের উপর এসে পড়েতে লাগল,তখন সরকার পুনরায় দোষকে ঢাকার জন্য সারাদেশে ৩১শে জুলাই 'শোকদিবস' ঘোষণা করল।
__৩১জুলাই২০২৪ইং,রোজ:বুধবার
ছাত্র হত্যার দায়ে সরকারের পরিকল্পিতভাবে শোক দিবস পালনের নামে বিশ্বমঞ্চে গা ঢাকা দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে ছাত্রসমাজ সোচ্চার হয়।ছাত্রসমাজ ওই দিনই সরকারের শোক দিবসকে প্রত্যাখ্যান করে অনলাইন কর্মসূচি হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা সকলে নিজ নিজ প্রোফাইল' লাল' করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ওই ডাকেই বাংলার ছাত্রসমাজ সরকারের এই ন্যাকামি দিবসকে প্রত্যাখ্যান করে জানান দিল স্বৈরাচারের পতন ঘণ্টা বেশি দূর নেই।
ছাত্রজনতার রক্ত নিতে নিতে জুলাই শেষ হলো,কিন্তু এখনো ফ্যাসিবাদী সরকারের রক্তের থলে ভর্তি হই নাই।
__৩আগস্ট২০২৪ইং,রোজ:শনিবার
সারাদেশে ছাত্রজনতার উপর নির্মম হত্যা,গুম ও খুনের প্রতিবাদে জেলায় জেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রসমাজ। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ও সরকারর পুলিশ বাহিনী ও পোষ্য ক্যাডারদের হামলার শিকার হন ছাত্রসমাজ।পুরো দেশজুড়ে পরিণত হয় রণক্ষেত্র।দফায় দফায় হামলার শিকার হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে আহত ও নিহতের সংখ্যা শুধু বেড়ে চলছে।
এইসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যুক্ত থাকা ছাত্রসমাজ চিন্তা করল,এভাবে চলতে থাকলে এই ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের দেশটাকে এক গণকবরে পরিণত করবে।কারণ, এই সরকার ক্ষমতার জন্য সবকিছু করতে পারে।এইদিনই বেজে উঠে সরকারের পতনের ডঙ্কা।সকল অবিভাবককে বলা হয়েছে,আপনারা আপনাদের সন্তানদের বাচাঁতে এগিয়ে আসুন।নতুবা আপনার সন্তান এই প্রাণনাসী সরকারের কাছে নিরাপদ নই।
__০৪আগস্ট২০২৪ইং,রোজ:রবিবার
ছাত্রসমাজের সরকারের পতনের এই ডাকে সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে তার পোষ্য ক্যাডারদের প্রতিরোধ করতে বলে।এইদিন সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ,আহত ও নিহত এর ঘটনা ঘটে।এইদিন প্রত্যেক জেলায় জেলায় ছাত্রসমাজের সাথে সংঘর্ষে পুরো দেশজুড়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।এইদিনই ১০০জনের বেশি নিহতের ঘটনা ঘটে।দেশের চরম অবস্থা বিবেচনা করে সরকার পুনরায় এইদিন সন্ধ্যায় দেশের মধ্যে 'কারফিউ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।
__০৫আগস্ট২০২৪(৩৬শে জুলাই),রোজ:সোমবার
ছাত্রসমাজের বিপ্লবী মনোভাব,দেশপ্রমী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ৪ আগস্টের এর রাতে কারফিউ ভঙ্গ করে দেশকে খুনী,স্বৈরাচার এর হাত থেকে রক্ষা করতে 'লং মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি দিয়ে তারপরের দিন ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের ষোষণা দেন।পরের দিন দেখা গেল সরকারের কারফিউ অমান্য করে লক্ষ লক্ষ ছাত্রজনতা র ঢাকার বুকে এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়।সেদিনই ছাত্রসমাজের দীপ্তকণ্ঠের হুংকারে,চোখে ও বুকে বিপ্লবী চেতনার লেলিহান শিখায়,অদম্য সাহসে,দেশপ্রেমী মনোভাবে,একতার শিকলে পরাজিত হয়ে হাজার হাজার ছাত্র হত্যার খুনী,ফ্যাসিবাদী সরকার দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়।
০৫ই আগস্ট ২০২৪ইং দুপুর ২.০০ঘটিকার সময় ছাত্রসমাজ বিজয় লাভ করে।ছাত্রসমাজের বাধঁভাঙ্গা উচ্ছাসেই প্রকাশ করে, এই বিজয়ে বাংলাদেশ এক নতুন স্বাধীন,সার্বভৌম দেশ অর্জন করেন।
--->লেখক:_মো: ওসমান হোসেন সাকিব (প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট)
শিক্ষার্থী:_গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ,চন্দনাইশ,চট্টগ্রাম।
বাড়ি:_পশ্চিম এলাহাবাদ,চন্দনাইশ,চট্টগ্রাম।