চট্টগ্রাম সংবাদদাতা:
চট্টগ্রাম শহরের অলি-গলি, বাজার কিংবা দোকানপাট—যেখানেই তাকানো যায়, সেখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে নানা ধরনের বর্জ্য। এসব বর্জ্যের স্তুপ যেমন পরিবেশকে দূষিত করে, তেমনি জনজীবনেও ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। কিন্তু এই বর্জ্য থেকেই যদি নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়া যায়? ঠিক এই ভাবনাকে সামনে রেখে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ (VBD) চট্টগ্রাম জেলা বোর্ড হাতে নিয়েছে এক অভিনব উদ্যোগ (ওয়েস্ট ফর হোপ)
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য কেবল বর্জ্য সংগ্রহ নয়; এর মাধ্যমে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
ভিবিডি চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকার ১৫৬ জন স্বেচ্ছাসেবক এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা চট্টগ্রামের ৮টি জোন, আগ্রাবাদ, লালখান বাজার, ২নং গেইট, দেওয়ানহাট, হালিশহর, কাজীর দেউড়ি, বহদ্দারহাট এবং নিউ মার্কেট এলাকায় বিভক্ত হয়ে প্রতিদিন বাড়ি, দোকান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে প্লাস্টিক, কাগজ, ইলেকট্রনিক বর্জ্য সহ বিভিন্ন পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এ পর্যন্ত প্রকল্পটি ৬,৩২১.৪৩ কেজি বর্জ্য সংগ্রহ করেছে, যা পরে বিক্রি করে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য তহবিল গঠন করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন আসে বহদ্দারহাট জোন থেকে। এখানকার স্বেচ্ছাসেবকরা সর্বাধিক ১.৬ টন পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ করে, যা অন্যান্য জোনের তুলনায় সর্বোচ্চ। কাগজ, প্লাস্টিক এবং ইলেকট্রনিক বর্জ্য সংগ্রহে বহদ্দারহাটের এই কৃতিত্ব তাদের এই প্রকল্পের চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে।
এ প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর মানবিক ও সামাজিক প্রভাব। প্রকল্প থেকে সংগৃহীত অর্থ সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা হবে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। এর মাধ্যমে শহরের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন, যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
ভিবিডি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আহনাফ সাফিন বলেন, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার এই উদ্যোগ শুধু চট্টগ্রামেই সীমাবদ্ধ নয়, দেশের অন্যান্য শহরেও এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে যাবে। বহদ্দারহাট জোনের কো-লিডার মুমু বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বর্জ্য থেকে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব এবং সেই সম্ভাবনার আলোয় আলোকিত হবে নারীদের জীবন।
‘ওয়েস্ট ফর হোপ’ শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্প নয়, এটি এক নতুন দিগন্তের স্বপ্ন। যেখানে সমাজের প্রতিটি মানুষ পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নির্মাণে অংশ নিতে পারে, আর নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে তুলতে পারে তাদের নিজস্ব পরিচয়।